বুধবার ● ৩০ জুন ২০২১
প্রথম পাতা » অপরাধ » ভাসছে কয়রার মানুষ অথচ থেমে নেই কিস্তি আদায়
ভাসছে কয়রার মানুষ অথচ থেমে নেই কিস্তি আদায়
রামপ্রসাদ সরদার, কয়রা, খুলনাঃ
উপকূলীয় এলাকা খুলনার কয়রায় মানুষ যখন করোনা সংক্রমনের ঝুঁকিতে এবং ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে ভাসছে তখনও থেমে নেই এনজিও জিও কর্মীদের কিস্তি আদায়।
এনজিও কর্মীরা বাড়ী বাড়ী গিয়ে সাপ্তাহিক কিস্তি আদায়ে এই এলাকায় যে কোন দূর্যোগ পরবর্তী সময় কখনো থেমে থাকতে দেখা যায়নি। একদিকে দূর্যোগ পরবর্তী সময়ে ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে ভিটেমাটি হারা, করোনা পরিস্থিতিতে বারবার লকডাউনে কর্মহীন অপরদিকে উপকূলীয় এলাকায় মাছ-কাঁকড়ার পাশ-পারমিট বন্ধ থাকায় দিশেহারা মানুষদের দয়া দাক্ষিণ্য দেখায় না কিস্তি আদায়কারীরা এমনটি অভিযোগ এলাকাবাসীর। ঘূর্ণিঝড় আম্পান, ইয়াস সহ কয়েক দিন আগে অতিবৃষ্টিতে সমগ্র কয়রা উপজেলা যখন পানিতে ভাসছে, তখনও এনজিও নারী ও পুরুষ কর্মীরা রাত পোহাতেই কৃষকের দরজায় কড়া নাড়তে শুরু করছেন। আবার অনেক গ্রামে ইয়াসের তাণ্ডবে রাস্তাঘাট ভেঙে যোগাযোগ বিছিন্ন হলেও মুঠোফোনে কিস্তির টাকা ডেকে পাঠায় ওরা। অথচ কয়েকদিন আগেও ইয়াসের তাণ্ডবে যখন এই উপজেলার প্রায় ৫০ টি গ্রাম লবণ পানিতে ভেসে গ্রামের মানুষ জীবন বাঁচাতে ওয়াপদার বেঁড়িবাঁধে অথবা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছিল, কিস্তি আদায় তখনও থামেনি। উল্লেখ্য ২০২০ সালের ২১ মে আম্পান এবং ২০২১ সালের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস পাল্টে দেয় কয়রার অনেক গ্রামের চিত্র। অতঃপর চলতি আষাঢ়ের শুরুতেই ৩ দিনের টানা বৃষ্টিতে ছোট বড় হাজার হাজার চিংড়ী ঘের সাদা মাছের খামারসহ ভেসে যায় কৃষকের খেতের বর্ষাকালীন শাক- সব্জী। অথচ তারপরও সাপ্তাহিক কিস্তি আদায় থেমে নেই এনজিও কর্মীদের। এ বিষয় খবর নিয়ে জানা গেছে, বেসরকারী সংস্থা (এনজিও) আশা, ব্র্যাক, গ্রামীণ ব্যাংক, টিএমএসএস, গণমুখী, সোনালী স্বপ্ন, ব্যুরো বাংলাদেশ, জাগরণী চক্র, এসডিএফ, এসডিএফ মৎস্য, সাস, জেজেএস, প্রদীপন, বিআরডিবি, পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন সহ স্থানীয় কিছু সংগঠন বাড়ী বাড়ী গিয়ে সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা আদায় করছেন। মঠবাড়ী গ্রামের চিংড়ী চাষী প্রিতিশ মণ্ডল, ছাগল পালনের জন্য ঋণ নেওয়া আমেনা বেগম, ২ নং কয়রা গ্রামের হাঁসমুরগি পালনের ঋণ গ্রহীতা লতিফা খাতুন ও কদবানু বিবি সহ একাধিক এধরনের ঋণ গ্রহীতা জানান, তারা ১০ থেকে ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। কিন্তু বিগত দেড় বছর যাবৎ বিভিন্ন দূর্যোগের কারণে সাপ্তাহিক কিস্তির টাকা দিতে না পারলে অনেক বেশি কথা শুনতে হয় এমনকি মামলার ভয়ও দেখায়। তারা বলেন, বেশি কথা শোনার ভয়ে কিস্তি দেওয়ার ২ দিন আগে থেকেই ওদের টাকা যোগাড় করে রাখতে হয়। এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে মৃত্যু ও আক্রান্ত্রের হার বাড়তে থাকায় সরকার দেশ জুড়ে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে। ফলে আমাদের স্বামীরা দিনমজুর, কেউ ভ্যান চালায়, বেশীরভাগ মানুষের আয়ের উৎস সুন্দরবনে মাছ-কাঁকড়ার পাশ-পারমিট বন্ধ, কারোর ক্ষুদ্র ব্যবসা এবং চলাচল বন্ধ থাকায় আয় রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা খেটে খাওয়া মানুষ না খাটলে সংসার চলে না। সারা দিন ভ্যান চালিয়ে যে টাকা উপার্জন হয় তাতে সংসারই চলেনা এর মধ্যে কিস্তি দেব কোথা থেকে।
এমতাবস্থায় কিস্তির টাকা না দিতে পারায় অনেকে আবার পালিয়ে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে করোনা সংক্রমন এড়াতে দেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যায় বর্তমান কয়রায় চলছে ৭ দিনের কঠোর লকডাউন এবং দোকান-পাট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া লোকজন চলাচলও সীমিত করায় নিম্ন আয়ের মানুষদের কর্মসংস্থান কমে গেছে। এতে এনজিও ঋণ গ্রহণকারী দরিদ্র মানুষ এখন বিপাকে।তাদের দাবী পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কিস্তি আদায় স্থগিত করার। ভুক্তভোগীরা জানায়, কিস্তির টাকা না দিলে কর্মীরা কিস্তির জন্য রাত অবধি বসে থাকেন, এবং গালমন্দসহ হুমকি দেন। এ সম্পার্কে স্থানীয় এনজিও আশা এর ম্যানেজার শংকর বিশ্বাস কিস্তি আদায় করা হচ্ছে না জানালেও মাঠে তাদের কিস্তি আদায় করতে দেখা যাচ্ছে। গ্রামীন ব্যাংকের ম্যানেজার আঃ গফুর সাপ্তাহিক কিস্তি আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন জোর করে কারোর কাছ থেকে কিস্তি আদায় করা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, লকডাউনে কোন সংস্থা কিস্তি আদায় করবে না। কোন এনজিও কিস্তি আদায় করলে কোন প্রমাণ পেলে আমরা তার ব্যবস্থা।