শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

SW News24
সোমবার ● ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » মুক্তমত » সুপারিশপ্রাপ্ত পিটিআই ইন্সট্রাক্টরদের নিয়ে ভাবার কেউ আছেন
প্রথম পাতা » মুক্তমত » সুপারিশপ্রাপ্ত পিটিআই ইন্সট্রাক্টরদের নিয়ে ভাবার কেউ আছেন
৩৬৩ বার পঠিত
সোমবার ● ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সুপারিশপ্রাপ্ত পিটিআই ইন্সট্রাক্টরদের নিয়ে ভাবার কেউ আছেন

শাহাদাত আনসারী=---

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সস্টিটিউট (পিটিআই) সমূহে ৯ম গ্রেডের ইন্সট্রাক্টর (বিজ্ঞান, কৃষি, চারু ও কারুকলা এবং  শারীরিক শিক্ষা) পদে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) চূড়ান্ত সুপারিশ করলেও গেজেট প্রকাশ হচ্ছে না। ফলে মাঠ পর্যায়ে পিটিআইসমূহে ইন্সট্রাক্টরের অভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে বিভিন্ন বিষয়ের  ইন্সট্রাক্টর পদ শূণ্য থাকায় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন ২৭ এপ্রিল, ২০১৯ প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে পিটিআইসমূহে ৯ম গ্রেডের ৭২টি (ইন্সট্রাক্টর বিজ্ঞান-২০, ইন্সট্রাক্টর কৃষি-২৫, ইন্সট্রাক্টর শারীরিক শিক্ষা-৯ ও ইন্সট্রাক্টর চারু ও কারুকলা-১৮) শূণ্য পদের বিপরীতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। তারই ধারাবাহিকতায় লিখিত পরীক্ষা ও ভাইভার মাধ্যমে বিপিএসসি ২৮ অক্টোবর, ২০২০ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে চূড়ান্ত সুপারিশ করে। চূড়ান্ত সুপারিশের দীর্ঘ ১১ মাস হলেও কোন এক অজানা কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এখনও গেজেট প্রকাশ করতে পারছেন না।

মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষার জন্য প্রয়োজন উন্নত শিক্ষাক্রম, পাঠ্যক্রম, অভিজ্ঞ শিক্ষক এবং দক্ষ প্রশিক্ষক। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য শিখন পরিবেশ থাকলেও শিক্ষক ও প্রশিক্ষকের অভাবে প্রাথমিক শিক্ষার মূল লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন সময়ে শিখন ও শিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হলেও মাঠ পর্যায়ে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সস্টিটিউট (পিটিআই) এ ইন্সট্রাক্টর ঘাটতির কারণে তা ফলপ্রসু হচ্ছে না।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (ঝঁংঃধরহধনষব উবাবষড়ঢ়সবহঃ এড়ধষ) এর ১৭টি লক্ষ্যের অন্যতম লক্ষ্য- ‘সকলের জন্য নায্যতাভিত্তিক ও মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিতকরণ’। বাংলাদেশ এ লক্ষ্যের সাথে একমত পোষণ করে মানসম্মত শিক্ষা (ছঁধষরঃু ঊফঁপধঃরড়হ) নিশ্চিতকরণের জন্য শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক গ্রহণযোগ্য ও প্রশংসিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে অনেকগুলো প্রাথমিক শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট। প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন ও শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আবার অনেক প্রশিক্ষণ চলমান রয়েছে। এসব প্রশিক্ষণ নিসন্দেহে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। আর এ দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের সঠিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে মানসম্মত শিক্ষা দিতে পারবেন।

বর্তমানে শিক্ষাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ও প্রোজেক্টর এর মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান করা হয়। শিক্ষক ঘাটতি পূরণের জন্য প্রায় প্রতি বছর বিজ্ঞপ্তির মাধমে মেধাবীদের প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি প্রইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এর ইন্সট্রাক্টর ও পিটিআই অভ্যন্তরীণ পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে ঘাটতি কাটানোর চেষ্টা করা হলেও বিভিন্ন কারণে তা আটকে আছে। শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নের অন্যতম প্রতিষ্ঠান পিটিআই এখনও জনবল ঘাটতিতে। শিক্ষার মান উন্নয়নে বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (বিপিএসসি) এর মাধ্যমে দ্রুত প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে পিটিআই এর জনবল ঘাটতি কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়োগ দেয়ার পর বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ (ঋড়ঁহফধঃরড়হ ঞৎধরহরহম) হিসেবে পিটিআই এর মাধ্যমে ১৮ মাস মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন প্রাইমারি ইডুকেশন (ডিপিএড) কোর্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এতে শিক্ষকের পেশাগত মনোভাব জোরদার হচ্ছে এবং পেশাদারিত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সাথে পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট এর নেতৃত্বে ইন্সট্রাক্টরগণ প্রত্যক্ষভাবে সাথে জড়িত থাকেন। আবার ইন্সট্রাক্টরগণ প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনের মাধ্যমেও শিশুদের জন্য মানসম্মত শিক্ষার্জনে সহায়তা করেন। অনেক পিটিআই দুটি শিফট চালু করলেও ইন্সট্রাক্টর সঙ্কটের কারণে একটা শিফট চালাতেই হিমশিম খাচ্ছে।

পিটিআইসমূহের জনবল কাঠামো অনুযায়ী ১জন সুপারিনটেনডেন্ট ও ২জন সহকারি সুপারিনটেনডেন্ট ছাড়াও অনুমোদিত ১৭টি ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ ইন্সট্রাক্টর ১২টি এবং বিষয়ভিত্তিক ইন্সট্রাক্টর ৫টি) পদ থাকলেও অধিকাংশে ৮-১০জন নিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। আবার কোন পিটিআই চলছে ৩-৪জন ইন্সট্রাক্টর দিয়ে। অধিকাংশ পিটিআই এ প্রয়োজনীয় ইনস্ট্রাক্টর নাই। ফলে ইনস্ট্রাক্টরদের জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া অনেকটা কঠিন হচ্ছে। এতে মানসম্মত শিক্ষার পরিকল্পনা দুরূহ হচ্ছে। তাই মানসম্মত শিক্ষার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে ইনস্ট্রাক্টর ঘাটতি পূরণের উদ্যোগ নিতে হবে।

২০১৮ সালে ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ) এ রাজস্ব খাতে ৭৭টি সৃজিত পদের বিপরীতে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন কর্তৃক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলেও মামলা জটিলতায় তা আটকে আছে। দীর্ঘদিন পর কখনও যদি কোন ইন্সট্রাক্টর এ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয় তাও আবার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দায়ের করা রিট মামলায় স্থগিত হয়। এভাবে চলতে থাকলে প্রাথমিক শিক্ষা ধ্বংস হবে। তাই অতিদ্রুত বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (বিপিএসসি) কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত ইন্সট্রাক্টরগণের পদায়নের মাধ্যমে যোগদানের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। আর এ উদ্যোগ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কেই নিতে হবে।

পিটিআই ইন্সট্রাক্টর পদে সুপারিশপ্রাপ্তদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলে তাঁরা বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে না পৌঁছলে গেজেট হবে না। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন কারিগরী ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ কোন ধরণের পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্ট ছাড়া ৩৮তম বিসিএস থেকে কারিগরী শিক্ষা অধিদপ্তরাধীন পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে প্রথম শ্রেণির নন ক্যাডার ইন্সট্রাক্টর (টেক) পদে ২৭৯জন এবং টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজসমূহে ইন্সট্রাক্টর (নন-টেক) পদে ৫৬৬জনকে গেজেটের মাধ্যমে পদায়ন করেছেন। নিয়োগপ্রাপ্তরা সবাই যোগদানও করেছেন। অন্য মন্ত্রণালয় যদি পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়া গেজেট প্রকাশ করতে পারেন তাহলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কেন পারবেন না?

সুপারিশপ্রাপ্ত ইন্সট্রাক্টরগণের অভিভাবকরা দীর্ঘদিন থেকে অপেক্ষায় আছেন কখন তাদের পরিবারের সদস্যের বেকারত্ব দূর হবে। আবার কেউ ৯ম গ্রেডের চাকুরি পাচ্ছেন ভেবে অন্য ছোট চাকুরি ছাড়ার পরিকল্পনাও করছেন। শুধু ইন্সট্রাক্টরগণই অপেক্ষার প্রহর দেখছেন না বরং পিটিআই সুপারগণও চেয়ে আছেন সুপারিশপ্রাপ্তরা কখন আসবেন। কারণ মাঠ পর্যায়ে শতকরা ৪০-৫০ ভাগ জনবল দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সস্টিটিউট (পিটিআই) পরিচালনা করা সত্যি কষ্টকর। তাই শত বাধা দূর করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সুপারিশপ্রাপ্ত ইন্সট্রাক্টরগণের গেজেট প্রকাশ করে পদায়ন নিশ্চিত করুক এটাই সকলের চাওয়া। এতে যেমন সুপারিশপ্রাপ্তরা প্রশিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করে পরিবারসহ প্রশান্তি লাভ করবেন তেমনি মানসম্মত শিক্ষার  গতিও ত্বরান্তিত হবে।

লেখক: শাহাদাত আনসারী

শিক্ষা গবেষক ও কলাম লেখক





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)