শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

SW News24
বুধবার ● ৩০ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » সাহিত্য » সাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদ কাজী ইমদাদুল হক
প্রথম পাতা » সাহিত্য » সাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদ কাজী ইমদাদুল হক
২৮৭ বার পঠিত
বুধবার ● ৩০ মার্চ ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদ কাজী ইমদাদুল হক

 

 

---সাহিত্যিক এবং শিক্ষাবিদ কাজী ইমদাদুল হক। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, প্রবন্ধকার, উপন্যাসিক, ছোট গল্পকার ও শিশু সাহিত্যিক। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার অবিচল সমর্থক। সমাজের ধর্মান্ধতা, গোঁড়ামি, ফতোয়া ও শিক্ষালয়ে ধর্মীয় শিক্ষার বিরুদ্ধে তিনি লিখেছেন প্রায় একশ বছর আগে। তিনি ছাত্রজীবনে সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। তার সাহিত্য জীবনের সূত্রপাত ঘটে কবিতা রচনার মধ্যে দিয়ে। তার প্রথম সাহিত্য কর্ম ৯টি, কবিতা সংগ্রহ আঁখি জল ১৯০০ সালে প্রকাশিত হয়। ১৯০৩ সালের সূচনা লগ্ন থেকে নবনূর, প্রবাসী ও ভারতী পত্রিকাসহ প্রভৃতি প্রতিকায় তার কবিতা ও প্রবন্ধ নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। তার প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত বিভিন্ন কবিতা নিয়ে দ্বিতীয় কাব্য গ্রন্থ লতিকার পান্ডুলিপি রচিত হলেও তা অপ্রকাশিত থেকে যায়। পরে কাজী ইমদাদুল হক রচনাবলীতে কবিতা গুলো স্থান পায়। সরলা দেবী চৌধুরানী, সম্পাদিত ভারতী পত্রিকায় কাজী ইমদাদুল হকের মোসলেম জগতের বিজ্ঞান চর্চা শীর্ষক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ১৯০৪ সালে মোসলেম জগতের বিজ্ঞান চর্চা পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়। তার অন্য কিছু রচনা থাকলেও একটি মাত্র অসমাপ্ত উপন্যাস আব্দুল্লাহ রচনা করে তিনি যে কৃতিত্বের নিদর্শন রেখে গেছেন তাই তাকে বাংলা সাহিত্য স্মরণীয় করে রেখেছে।  

সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ কাজী ইমদাদুল হক এর জন্ম খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর গ্রামে ৪ নভেম্বর, ১৮৮২ সালে। পিতা কাজী আতাউল হক। কাজী ইমদাদুল হক ছিলেন পিতার একমাত্র সন্তান। কাজী ইমদাদুল হকের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় গ্রামের স্কুলে ও পারিবারিক পরিবেশে। জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের সঙ্গে ছিল তাঁর পিতার বন্ধুত্ব। প্রফুল্য চন্দ্র রায়ের উৎসাহ ও পরামর্শে কাজী ইমদাদুল হকের পিতা তাকে ১৮৯০ সালে খুলনা জেলা স্কুলে ৫ম শ্রেনীতে ভর্তি করেন। ১৮৯৬ সালে খুলনা জেলা স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাশ করেন। ১৮৯৮ সালে কলকাতা মাদ্রাসা থেকে এফ, এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বি, এ পাশ করেন। কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াকালীন তিনি পদার্থ বিদ্যা ও রসায়ন শাস্ত্রে অনার্স নিয়ে ডিগ্রী ক্লাসে ভর্তি হন। কিন্তু পরীক্ষার আগে অসুস্থতার কারণে অনার্স পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিষয়ে এম, এ ক্লাসে ভর্তি হন।

কাজী ইমদাদুল হকের কতিপয় পাঠ্য পুস্তক ও রচনা গুলি হল কবিতা আঁখিজল ১৯৯০, আব্দুল্লাহ ১৯৩৩, প্রবন্ধ-মোসলেম জগতের বিজ্ঞান চর্চা ১৯০৪, প্রবন্ধমালা প্রথম খণ্ড ১৯১৮, প্রবন্ধমালা দ্বিতীয় খণ্ড ১৯১৬ শিশু সাহিত্য নবী কাহিনী, কামারের কান্ড ১৯১৯, পার্থ পুস্তক ভূগোল শিক্ষা প্রনালী, প্রথম ও ২য় ভাগ ১৯১০, সরল সাহিত্য।

১৯০৩ সালে কলকাতা মাদ্রাসার অস্থায়ী শিক্ষক পদে নিয়োগ লাভ করেন। এরপর পূর্ববঙ্গ ও আসান প্রদেশ গঠিত হওয়ায় ১৯০৬ সালে আসামে শিলংয়ে শিক্ষা বিভাগে ডিরেক্টরের অফিসে উচ্চমান সহকারী পদে চাকুরী গ্রহণ করেন। এ সময় পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রবেশে শিক্ষা বিভাগে ডিরেক্টর ছিলেন মিঃ শার্প। কাজী ইমদাদুল হক শার্প সাহেবের স্নেহ দৃষ্টি লাভ করেন এবং ১৯০৭ সালে ঢাকা মাদ্রাসার শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন।

পূর্ববঙ্গ আসাম প্রদেশের শিক্ষা বিভাগের শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার সাধনে নতুন শিক্ষা প্রণালী প্রবর্তনে উদ্যোগী হন। কি করে শিক্ষার্থীদের কাছে ভূগোল শিক্ষা বিভাগকে আকর্ষণীয় করা যায় সে বিষয়ে কাজী ইমদাদুল হক বিশেষ চিন্তা ভাবনা করেন। তার ভূগোল শিক্ষার একটি আদর্শ শিক্ষা প্রণালী শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত হয়। সেখানে ভূগোল বিষয়ে শিক্ষা দানে বিশেষ দক্ষতা দেখান এবং ভূগোল বিষয়ে গ্রন্থ রচনা করেন। কিছুকাল পরে এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ১৯১১ সালে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং সেন্টারে ভূগোলের অধ্যাক্ষ নিযুক্ত হন। তিনি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যাক্ষ মিঃ বিন এর আগ্রহে বি, টি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করে বি, টি ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯১৪ সালে তিনি প্রাদেশিক এডুকেশন সার্ভিসে উন্নতি হয়ে ঢাকা বিভাগের মুসলিম শিক্ষার সহকারী স্কুল ইসপ্টেরের পদে ময়মনসিংহে অবস্থিত কার্যালয়ে নিযুক্ত হন। ১৯১৭ সালে কলকাতা টিচার্স ট্রেনিং স্কুলের প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯২১ সালে ঢাকা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে প্রতিষ্ঠিত হলে তিনি প্রথম কর্মদক্ষ পদে নিযুক্ত হন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এ পদে বহাল ছিলেন। ১৯২৬ সালের ২০ মার্চ মৃত্যু বরণ করেন।

 কাজী ইমদাদুল হকের মৃত্যুর পর ১৯৩৩ সালে ‘‘আব্দুল্লাহ’’ উপন্যাস প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। কাজী ইমদাদুল হক ‘‘আব্দুল্লাহ’’ উপন্যাসে যে বিষয়বস্তু উপস্থাপনা করেছেন সে সম্পর্কে আব্দুল কাদির মন্তব্য করেছেন বিংশ শতাব্দীর গোঁড়ার দিকে বাঙ্গালী মুসলমান সমাজে সে অবস্থা ছিল তার একটি নিখুঁত চিত্র ‘‘আব্দুল্লাহ’’ উপন্যাসে বিধৃত হয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর ‘‘আব্দুল্লাহ’’ বইটির মন্তব্যে লিখেছিলেন আমি খুশি হয়েছি বিশেষ কারণে, এই বই থেকে মুসলমানদের ঘরের কথা জানা গেল।

কাজী ইমদাদুল হকের প্রায় সমগ্র কর্ম জীবনই কেটেছে সরকারী চাকুরীতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষা বিভাগে বিভিন্ন কাজে অসামান্য দক্ষতা, গভীর দায়িত্ববোধ ও উদ্ভাবনী শক্তির স্বীকৃতি স্বরূপ তৎকালীন বৃটিশ সরকার তাকে ১৯১৯ সালে খান সাহেব উপাধিতে ভূষিত করেন ও ১৯২৬ সালে তাকে খান বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করে তাকে সম্মানিত করা হয়।





আর্কাইভ