শুক্রবার ● ১৫ জুলাই ২০২২
প্রথম পাতা » অপরাধ » গৃহবধূকে গাছের সাথে বেঁধে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ৯৯৯ কল করে উদ্ধার
গৃহবধূকে গাছের সাথে বেঁধে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ৯৯৯ কল করে উদ্ধার
জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এক গৃহবধূকে গাছের সাথে বেঁধে বিবস্ত্র করে মধ্য যুগীয় কায়দায় নির্যাতন করেছে দুর্বৃত্তরা। খুলনার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের গিলাবাড়ি নামক স্থানে ঘটনাটি ঘটেছে।
ভুক্তভোগী জানান, তিনি কয়রা উপজেলার গিলাবাড়ি কুচির মোড়ের গফফার গাজীর মেয়ে। বাবার বাড়ির পাশে জায়গা কিনে সেখানে বসবাস করছেন তিনি। বাবার ২ বিঘা জমির উপর এলাকার লিয়াকত গাজী, সাখাওয়াত গাজী, নুর আলম গাজীসহ ওই পরিবারের অনেকের কু-নজর পড়ে। বাবা একা হওয়ায় প্রায়ই এই দল তার উপর বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার-নির্যাতন করে। এ ঘটনার এক বছর আগে ও একই ঘটনা ঘটে তখন স্থানীয় মহেশ্বারীপুর ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট বিচার দেওয়া হয়। সেখানে তাদের ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। কিন্তু জরিমানাটি ছিলো নামে মাত্র তারা জরিমানার টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করেনি।
ভুক্তভোগীর মাতা বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম ও প্রতাক্ষ্যদর্শীরা জানান ঈদের পরের দিন ১১ জুন সোমবার সকালে লিয়াকত গং ভিকটিমের বাবার বাড়িতে উপস্থিত হয়। এ সময় তারা ঘরের একটি চাল তৈরি করে নিয়ে আসে এবং ভিকটিমের বাবার বসত বাড়িতে জোরপূর্বক ঘর নির্মাণ করতে চায়। তখন বাধা দেয় শামীমা সুলতানা ও তার ভাবী সালমা খাতুন। এ সময় লিয়াকত গং এর সাথে উপস্থিত খালেক ও আসফার গাজী বলে শামীমাকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আয়। এরপর রফিকুল, সালাউদ্দিন, সাইফুল, সোয়েব বাড়ির ভেতর থেকে বের করে কুচিয়া মোড়ের মাঝখানে একটি মেহগণি গাছের সাথে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। শুরু হয় মধ্যযুগীয় কায়দায় বিবস্ত্র করে অমানুষিক নির্যাতন। এ সময় ঘটনা স্থলে কোন উপায় না পেয়ে ভিকটিমের বড় ছেলে জাফর গাজী ও ছোট ছেলে আহাদ গাজী অসহায়ের মতো নিরবে দাড়িয়ে ছিলেন।
এক পর্যায়ে পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে তার এক বোন জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ ফোন দেয়ার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে এবং পুলিশ আসার সংবাদ পেয়ে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। কয়রা থানার এসআই মোঃ মাসুদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রশি খুলে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। বিকেলে তার অবস্থা আরও অবনতির দিকে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসকের পরামর্শে তাকে সোমবার বিকেলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জরী বিভাগের ৯ ও ১০ নং ওয়ার্ডের বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন ত্রিশোর্ধ নারী শামীমা খাতুন। দুর্বৃত্তদের কামড়ের দাগ ও সমস্ত শরীরের লাঠির আঘাতের ব্যাথায় তিনি ছটফট করছেন বলে জানা গেছে ।
ভিকটিমের স্বামী আবুল কালাম সানা জানান, ঘটনার সময়ে তিনি বাড়িতে ছিলেন না। মোবাইলে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এসে স্ত্রীকে উদ্ধারের জন্য পুলিশের সহায়তা নেন। তিনি বলেন, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এর আগে একই ঘটনার জন্য সালিশ করেছেন। কিন্তু তারপরে তারা আবারও এভাবে আক্রমণ করেছে। ঘটনায় তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন এবং ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন ।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, জমিজমা নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ঘটনার সময় আমি এলাকার বাইরে থাকায় বিস্তারিত বলা সম্ভব হচ্ছে না।
মহেশ্বরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারীর কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জমি জায়গা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নিজেদের গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছে। বেশ কয়েকবার সালিশ করা হলেও সমাধান না হওয়ায় এখন আর কেউ যায় না। ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। সংবাদ পেয়ে আমি পুলিশকে অবহিত করেছিলাম। পুলিশ আরো ভালো বলতে পারবে।
এ বিষয়ে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ.বি.এম.এস. দোহা ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সংবাদ পাওয়া মাত্র পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।