শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

SW News24
বুধবার ● ১৭ আগস্ট ২০২২
প্রথম পাতা » উপকূল » অবশেষে ৫ দিনের স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধা সম্পন্ন হলো কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীর বাঁধ
প্রথম পাতা » উপকূল » অবশেষে ৫ দিনের স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধা সম্পন্ন হলো কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীর বাঁধ
৪০৬ বার পঠিত
বুধবার ● ১৭ আগস্ট ২০২২
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

অবশেষে ৫ দিনের স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধা সম্পন্ন হলো কয়রার দক্ষিণ বেদকাশীর বাঁধ

অরবিন্দ কুমার মণ্ডল, কয়রা, খুলনাঃ খুলনার কয়রায় কপোতাক্ষ নদের ভেঙে যাওয়া রিংবাঁধ ফের স্বেচ্ছাশ্রমে সংস্কার সম্পন্ন করেছে এলাকাবাসী। পাঁচ দিনের টানা স্বেচ্ছাশ্রমে কপোতাক্ষের লোনা পানি লোকালয়ে প্রবেশ ঠেকাতে পেরেছেন তারা। আজ বুধবার (১৭ আগস্ট) ভোরের আলো ফোটার আগেই এলাকার তরুণরা প্রতিটি মসজিদের মাইকে এলাকাবাসীকে ঝুড়ি আর কোদাল নিয়ে বেড়িবাঁধে আসার ঘোষণা দেয়। নিজেদের রক্ষার তাগিদে ভাঙা বাঁধের কাছে একের পর এক কোদাল হাতে জড়ো হন হাজারো মানুষ। নদীতে ভাটার টানে পানি নামতে শুরু করলেই হাতে হাত ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শুরু হয় কাজ। দুপুরে নদীতে জোয়ার আসার আগ পর্যন্ত একটানা মাটি কেটে, বাঁধ উঁচু করার চেষ্টা চলে।


প্রথমে ভাঙনকবলিত বাঁধের কিছুটা দূরে বাঁশ পুঁতে টিনের বেড়া দিয়ে পানিপ্রবাহ সামান্য কমিয়ে ফেলা হয়। এরপর বস্তায় মাটি ভরে টিনের বেড়া ঘেঁষে মজবুত করে রাস্তা তৈরির মাধ্যমে হাতে হাতে মাটি দিয়ে বাঁধ উঁচু করা হয়। এভাবেই আস্তে আস্তে সামনে অগ্রসর হয় বাঁধের নির্মাণকাজ। 


বুধবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৪/১ নম্বর পোল্ডারের আওতাধীন খুলনার কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চরামুখা এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, গত চার দিন বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও আজ পঞ্চম দিনে সাধারণ মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমের প্রচেষ্টায় তারা পুনরায় রিংবাঁধ দিয়ে কপোতাক্ষের নোনা পানি আটকাতে সক্ষম হয়েছেন।
তবে এবারই শুধু নয়, প্রতি দুর্যোগের পর এভাবেই ভাঙা বাঁধ মেরামতে স্থানীয় মানুষকেই দায়িত্ব নিতে হয় বলে জানান তারা। 

এলাকাবাসী জানায়, এর আগে গত ১৭ জুলাই ভোরে চরামুখার এই বাঁধের প্রায় ৩০০ মিটারের মতো ধসে যায়। সে সময় ভাঙা স্থানে রিংবাঁধ দিয়ে পানি আটকানো সম্ভব হয়। এরপর ১৩ আগস্ট শনিবার দুপুরে উচ্চ জোয়ারে ওই রিংবাঁধটি পুনরায় ভেঙে যায়। সেই থেকে টানা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাচ্ছে এলাকার বাসিন্দারা। গত (১৬ আগস্ট) মঙ্গলবার এলাকাবাসী বাঁধ মেরামতে প্রাণপণ চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। বাঁধ নির্মাণ শেষে প্রবল জোয়ারে সেটি ভেঙে আবারও লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। এই ভাঙনে কপোতাক্ষের নোনা পানিতে ডুবে যায় ১০টির বেশি গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়ে ১৫ হাজারের বেশি মানুষ।

স্থানীয় লোকজন জানায়, ইউনিয়নটির চরামুখা, হলুদবুনিয়া, মেদেরচর, বীণাপানি ও দক্ষিণ বেদকাশী ও পদ্মপুকুর গ্রামের প্রায় ছয় হাজার বিঘা জমির চিংড়িঘের তলিয়ে গেছে। পানির তোড়ে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পাকা রাস্তা ধ্বসে গেছে। এতে ওইসব গ্রামে যাতায়াতের পথ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঘরে পানি ঢুকে আসবাব ও ধান-চাল নষ্ট হয়েছে।
কৃষকদের আমন মৌসুমের জন্য প্রস্তুতকৃত বীজতলা, বসতবাড়ি হারিয়ে অনেকেই আবার বাধ্য হয়ে পরিবার-পরিজনদের নিয়ে বসবাস করছেন খোলা আকাশের নিচে। কেউ কেউ আবার উঠেছেন সাইক্লোন শেল্টারে।

দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের হলুদবুনিয়া এলাকা থেকে বাঁধ মেরামতে আসা গোপাল সরকার বলেন, এক দিন আয় না করলে তাদের সংসার চলে না, তবুও বাঁচার তাগিদে বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করতে হচ্ছে। আমরা না করলে এ বাঁধ বাঁধতে অনেক দেরি হয়ে যেত। তখন এলাকায় আর বাস করবার মতো পরিস্থিতি থাকবে না।

স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে আসা স্থানীয়রা জানান, নিজেদের ঘরবাড়ি রক্ষায় বাঁধ সংস্কারের বিকল্প নেই, তাই সবাই মিলে স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে এসেছেন তারা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় টানা কয়েক দিন কাজ করার পর আজ  রিংবাঁধ সম্পর্কে বলেন, এক মাস আগে নির্মাণ করা বাঁধ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে পুনরায় ভেঙেছিল। টানা পাঁচ দিন স্বেচ্ছাশ্রমে ঘাম ঝরিয়ে কয়রার সাধারণ মানুষ আবারও বাঁধটি আটকাতে পেরেছে। এবার পারিশ্রমিকের বিনিময়ে প্রতিনিয়ত সংস্কারকাজ অব্যাহত রাখতে হবে কর্তৃপক্ষকে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে রিংবাঁধটি তদারকি করা হোক। বেড়িবাঁধ সংস্কার না করে যত  উন্নয়নই করা হোক না কেন, তা ভেসে যাবে পানির সঙ্গে। উপকূলীয় অঞ্চলের উন্নয়ন শুরু হওয়া উচিত এসব বেড়িবাঁধ সংস্কারের মাধ্যমে। কয়রায় দীর্ঘদিন পর মজবুত বাঁধের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। তবে এটা হওয়ার কথা ছিল আরো আগে। যাই হোক, দেরিতে হলেও পেয়েছি। এখন দ্রুত বাস্তবায়ন হোক এটাই চাই।

বারবার চরামুখা এলাকার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পেছনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাফিলতিকেই দুষছেন স্থানীয় লোকজন। তাদের দাবি, এক মাস আগে রিংবাঁধ দেওয়া হলেও সেটি রক্ষণাবেক্ষণ বা মজবুত করার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পাউবো কর্তৃপক্ষ। এ কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

বাঁধ মেরামতে আসা লোকজন অভিযোগ করেন, চরামুখার বাঁধটি সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষকে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও তারা এড়িয়ে গেছে। এলাকার জনপ্রতিনিধিদের জানালে এ কাজ তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না বলে জানিয়ে দেন। উপজেলা প্রশাসনও একই কথা জানায়। অথচ বাঁধ ভাঙলে বারবার ভুক্তভোগী মানুষকেই তা রক্ষায় এগিয়ে আসতে হয়।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ১৪/১ নম্বর পোল্ডারে কয়রা উপজেলার শাকবাড়িয়া, মেদেরচর, ঘড়িলাল বাজার ও চরামুখা এলাকার বাঁধ মেরামতে তিন কোটি ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। কাজটিতে অর্থায়ন করেছে জাপান আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা (জাইকা)। কাজটির সার্বিক তদারকির দায়িত্বে রয়েছে বাপাউবো সাতক্ষীরা-২ বিভাগ। দরপত্রের মাধ্যমে ‘অনন্ত বিকাশ ত্রিপুরা’ নামের ঠিকাদারিপ্রতিষ্ঠান ওই কাজটির দায়িত্ব পায়।

প্রতিষ্ঠানটির ঠিকাদার জাকির মোহান্দি ফেনি জেলার বাসিন্দা। তিনি তার পূর্বপরিচিত শ্রমিক সরদার সাতক্ষীরার আক্কাস আলীর কাছে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে লাইসেন্স ভাড়া দিয়েছেন। বিষয়টি শ্রমিক সরদার আক্কাস আলী স্বীকার করেছেন। বর্তমানে ওই কাজটি তিনিই করছেন। গত ১৭ জুলাই চলমান কাজের চরমুখা অংশের প্রায় তিন শ মিটার ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, বড় কাজের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ, সরঞ্জামাদি ও লোকবল নেই ওই শ্রমিক সরদারের। যে কারণে মান ভালো না হওয়ায় চলমান কাজের চরামুখা এলাকার বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। তাছাড়া রিংবাঁধ হওয়ার পরে বাঁধে কোন মাটি না দেওয়ায় বাঁধের মাটি বসে নিচু হয়ে যাওয়ার কারণে জোয়ারের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় রিংবাঁধ ছাপিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করলে স্রোতের চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যায়।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দাপ্তরিকভাবে ওই কাজের তদারকির দায়িত্বে আছেন পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী মশিউল আবেদীন। জানতে চাইলে প্রথমে তিনি বলেন, কাজটি আক্কাস আলী নামে সাতক্ষীরার এক ব্যক্তি করছেন। পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম জানতে চাওয়ায় তিনি বলেন, ফেনী জেলার জাকির মোহান্দির লাইসেন্সে কাজ চলমান ছিল, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক তার লাইসেন্সে সাতক্ষীরার ঠিকাদার সরদার আক্কাস আলীকে কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন। গ্রামবাসীর দেওয়া রিং বাঁধটি টিকিয়ে রাখতে ব্যাপক চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু নদীতে জোয়ারের পানির চাপ এত বেশি যে তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। 

পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, কয়রার দক্ষিণ বেদকাশী এলাকার স্থানীয় লোকজনের সহযোগীতায় প্রাথমিকভাবে পানি প্রবেশ রোধ করা গেছে। পাউবোর পক্ষ থেকে বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য বাঁশ ও জিও ব্যাগ দেওয়া হয়েছিল। এবার পাউবো বাঁধ শক্তিশালী করার কাজ করবে। ---কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, উপকূলীয় এলাকার টেকসই বেড়ীবাঁধ নির্মাণের জন্য একটি মেগাপ্রকল্প পাস হয়েছে। সেটি বাস্তবায়ন হলে স্থায়ীভাবে উপকূল অঞ্চলের মানুষের দুরবস্থা কেটে যাবে।





উপকূল এর আরও খবর

উপকূলের সংকট নিরসনে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান উপকূলের সংকট নিরসনে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান
বঙ্গোপসাগরে বৈরী আবহাওয়ায় চারদিন যাবৎ;মাছধরা বন্ধ দুবলারচরে হাজার হাজার জেলে অলস সময় পার করছেন বঙ্গোপসাগরে বৈরী আবহাওয়ায় চারদিন যাবৎ;মাছধরা বন্ধ দুবলারচরে হাজার হাজার জেলে অলস সময় পার করছেন
পাইকগাছায় উপকূল দিবস পালিত পাইকগাছায় উপকূল দিবস পালিত
১২ নভেম্বর উপকূল দিবস ঘোষিত হোক ১২ নভেম্বর উপকূল দিবস ঘোষিত হোক
উপকূলের সংকট নিরসনে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন উপকূলের সংকট নিরসনে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন
বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণে জন্য পাইকগাছার জেলে পল্লীতে ট্রলার তৈরির ধুম বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণে জন্য পাইকগাছার জেলে পল্লীতে ট্রলার তৈরির ধুম
পাইকগাছা শিবসা নদীর চরে আড়াই মন ওজনের শুশুক উদ্ধার পাইকগাছা শিবসা নদীর চরে আড়াই মন ওজনের শুশুক উদ্ধার
উপকূলীয় অঞ্চলকে দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করার দাবী উপকূলীয় অঞ্চলকে দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করার দাবী
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনার উপকূলীয় এলাকা পরিদর্শন করলেন বেলজিয়ামের রানি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনার উপকূলীয় এলাকা পরিদর্শন করলেন বেলজিয়ামের রানি
শ্যামনগরে উপকূল দিবসে উপকূলের মানুষের বাঁচার দাবী শ্যামনগরে উপকূল দিবসে উপকূলের মানুষের বাঁচার দাবী

আর্কাইভ