মঙ্গলবার ● ১১ মে ২০২১
প্রথম পাতা » অপরাধ » আশ্রায়ন প্রকল্প-২ ; ডুমুরিয়ায় ঘর নির্মাণে দুনীতির অভিযোগ
আশ্রায়ন প্রকল্প-২ ; ডুমুরিয়ায় ঘর নির্মাণে দুনীতির অভিযোগ
এস ডব্লিউ নিউজ: খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় আশ্রায়ন প্রকল্প-২ প্রকল্পের কাজে দুনীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিম্মমানের ইট ও খোয়া, বালু দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে আশ্রায়ন প্রকল্পের ৫০০ ঘর। কাজ শেষ হওয়ার আগেই অধিকাংশ ঘরে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। খসে পড়ছে ঘরের জানালার কপাট। অভিযোগ, এভাবে কাজ করায় কিছু দিনের মধ্যেই বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েবে আর টাকাগুলো পানিতে যাবে।
সরেজমিন ৮ মে উপজেলার ১২ নম্বর রংপুর ইউনিয়ানের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিনগর আবাসন প্রকল্প এলাকায় দেখা গেছে, কিছু ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। বাকী ঘরের কাজ চলছে। মাস খানেক আগে শেষ হওয়া ঘরে ইতোমধ্যে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। নির্মাণাধীন ঘর থেকে জানলার কপাট খসে পড়ছে। ঘরের মেঝেতে বালি ও আমা ইটের (যে ইট ভাল ভাবে পোড়ে না) খোয়া দিয়ে ঢালাই করা হচ্ছে। খোয়াগুলো অধিকাংশ ধুলার মত হয়ে গেছে। বাসিন্দাদের চলাচলের জন্য সড়ক তৈরির জন্য এনে রাখা টিএমএসবি নামের ইটগুলো অবস্থা বেশ নাজুক।
ডুমুরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রায়ন প্রকল্প-২ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ৫টি স্থানে ৫০০ গৃহহীন পরিবারকে পূনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেগুলো হলো, শান্তিনগর-১ প্রকল্পে ৭৬ পরিবার ও সাজিয়াহাড়া খেয়াঘাট-২ প্রকল্পে ৬০ পরিবার, বাদুরগাছা-৩ প্রকল্পে ১২০টি, কাঠালতলা-৪ প্রকল্পে ৬০ পরিবার ও বাহাদুরপুর-৫ প্রকল্পে ২০০পরিবার। এই ঘরে থাকছে ২টি কক্ষ, একটি লেট্রিন ও একটি রান্নাঘর। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যায় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। শান্তিনগরের ঘরের কাজ প্রায় শেষের পথে বাকীগুলোর কাজ সবেমাত্র শুরু হয়েছে।
খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, সরকারের তিনটি কর্মসূচির আওতায় দেশের ভূমিহীন ঠিকানাহীন মানুষদের ঘর তৈরি করে দেওয়ার কাজ করছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২। এই আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ডুমুরিয়া উপজেলায় ৫০০ ঘর নির্মাণ হচ্ছে।
মাস খানেক আগে ঘরে উঠেছেন শফিকুল ইসলাম। তার ঘরের দরজার উপর দুই পাশে ফাঁটল ধরেছে। তিনি বলেন, ‘দেখতিছি ফাঁইটে গেছে, কিন্তু কি কব। শুধু আমার ঘর না আশে-পাশের অনেক ঘর ফাঁইটে গেছে।
আরেক বাসিন্দা শাহজানা মোড়ল বলেন, ‘রাস্তা আর ড্রেন যে ইট দিয়ে করা হচ্ছে তা একে বারে বাতিল। ওই সামনে একটা ক্যানেল (ড্রেন) ছিল তা বুজোয়ে (ভরাট করে) সেহেনে ঘর করেছে। বর্ষা হলি ওই ঘর টেকবে না নে।’
রামকৃষ্ণপুর এলাকার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান বলেন, এলাকার কয়েকজন মিলে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। কারণ ২/৩ নম্বর ইট, আমা ইটের খোয়া, ধুলাবালি এসব দিয়ে ঘর তৈরি হচ্ছে। এরমধ্যে ঘরে ফাঁটল দেখা দিয়েছে, কোন ঘর ভেঙে গেছে, দেবেও যাচ্ছে। জানালা ভেঙে পড়ছে। সকল প্রকার দুনীতি এখানে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, আমা ইটের খোয়া ও ২নম্বর ইট এবং ধুলাবালু পরিমাণ বেশি দিয়ে ঘর করা হচ্ছে। এই খোয়া দুই দিনে গুড়া হয়ে যায়। তখন ঢালাই খুলে পড়বে। কিছু দিনের মধ্যেই এই ঘরে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে। ইউএনও এবং পিআইও যেমন নির্দেশ দিয়েছেন তেমন কাজ করছি।
ঠিকাদার ও মিস্ত্রী শরিফুল ইসলাম বলেন, এ কাজে আমরা কয়েকজন ঠিকাদার রয়েছি। তবে ইউএনও এবং পিআইও কাজ বাস্তাবায়ন করছেন। প্রচন্ড গরমের কারণে ঘর ফেঁটে যাচ্ছে। এ কাজের জন্য ভাঙাচোরা ইট দিয়ে খোয়া তৈরি করা হয়েছে। ফলে আমা ইটের খোয়া হতে পারে। মেঝেতে খোয়া ও বালির পরিমাণ বেশি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি দুই নম্বর কাজ করি না অন্য কোন মিস্ত্রী ওই ঘরের কাজ করেছে। ধুলাবালি দিয়ে ড্রেন করার ব্যাপারে তিনি বলেন, ড্রেনের তলে ওই বালি দেওয়া হয়েছে। তবে ঘরের কাজে আসল বালু দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এ প্রকল্পের সদস্য সচিব মো. আশরাফ হোসেন বলেন, চালের মধ্যে কিছু খুদ থাকে। তবে যতক্ষণ ওই ঘরের বাসিন্দা চাইবে ফেঁটে যাওয়া ও বসে যাওয়াসহ সব কাজ করে দেওয়া হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ওই খোয়া তো বালিত খোয়া। ওই খোয়া দিয়ে কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। কাজ সব ভাল ইট দিয়ে হচ্ছে। ঘর গাঁথার সময় ওরকম একটু ফাঁটে। আমার জানা মতে ৪টি ঘর ফেঁটেছে। ওখান সব ঘর পরীক্ষা নিরীক্ষা করে উপকার ভোগীরা বুঝে নেবেন। কাজ চলার সময় অনেক অসুবিধা থাকে। হস্তান্তরীত ঘর ফাঁটার ব্যপারে তিনি বলেন, ওগুলো ঠিক করে দেওয়া হবে।