সোমবার ● ৩১ মে ২০২১
প্রথম পাতা » উপকূল » প্লাবিত এলাকায় ভাসছে মরা মাছ দুর্গন্ধে বাড়িঘর ছাড়ছে কয়রার মানুষ
প্লাবিত এলাকায় ভাসছে মরা মাছ দুর্গন্ধে বাড়িঘর ছাড়ছে কয়রার মানুষ
রামপ্রসাদ সরদার, কয়রা ।।
খুলনার কয়রা উপজেলার প্লাবিত এলাকায় ভেসে উঠেছে মরা মাছ। ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। এতে এলাকায় টেকা দায় হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, লবণাক্ত পানির কারণে এসব মাছ মারা গেছে। দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই মরা মাছ কুড়িয়ে সড়কের ওপর ফেলে দিচ্ছেন। এতে এলাকার সড়কের পরিবেশও দূষিত হচ্ছে।
কয়রা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আলাউদ্দীন আহমেদ বলেন, স্থানীয় নদীতে প্লাবনের সময় লবণের মাত্রা ছিল ২৫ পিপিটির (পার্টস পার থাউজ্যান্ড) বেশি, যা স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ। আর এলাকার পুকুর ও ঘেরের পানিতে লবণের মাত্রা ছিল মাত্র ১০ পিপিটি। এ অবস্থায় বাঁধ ভেঙে নদীর পানি ঢুকে পড়ায় অতিরিক্ত লবণাক্ততায় মাছ মরছে।
কয়রা-পাইকগাছা প্রধান সড়ক দিয়ে উপজেলা সদরে যাওয়ার পথে কালনা, অন্তাবুনিয়া ও দেয়াড়া এলাকায় গেলেই পচা মাছের গন্ধ টের পাচ্ছেন মানুষ। বাতাসে ভেসে সেই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে বহুদূর পর্যন্ত। টিকতে না পেরে এলাকার অনেকেই আত্মীয়স্বজনের বাড়ি গিয়ে উঠছেন। কেউ কেউ উঠছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।
ওই পথে নিয়মিত যাতায়াতকারী সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার তরুণ জ্যোতি মণ্ডল বলেন, রাস্তাতেই যদি এমন দুর্গন্ধ ছড়ায়, না জানি পানিবন্দি গ্রামের মানুষের কী দুরবস্থা!
প্লাবিত গ্রামগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, বাড়ির চারপাশের পানিতে মরা মাছ ভেসে উঠেছে, যার বেশিরভাগই দেশি জাতের। শোল, টেংরা, রুই ও কার্প জাতীয় মাছ বেশি মরেছে। আবার নোনাপানির মাছও মারা যাচ্ছে। এসব মাছ কুড়িয়ে দূরে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন বাসিন্দারা। তবে মরা মাছ অনেক বেশি হওয়ায় তা সরিয়ে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না।
মেঘারাইট গ্রামের আবু সাঈদ সরদার জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে জোয়ারে বাঁধ ভেঙে নোনা পানি ঢোকার দু’দিন পর থেকে মাছ মরা শুরু হয়েছে। প্রথমদিকে কিছু মাছ ভাসতে দেখা গেছে। তা ধরে অনেকেই খেয়েছেন। কিন্তু এখন অনেক মাছ মরে যাওয়ায় সেদিকে আর ফিরে তাকাচ্ছেন না কেউ।
একদিকে মাছ মরে যাওয়ায় চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, অন্যদিকে সেই মরা মাছের দুর্গন্ধে এখন গ্রামছাড়া হওয়ার অবস্থা সবার।
গৃহবধূ জেবুন্নেছা বলেন, ‘দিনের বেলা যা হোক এদিক-ওদিক কাটিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু রাতে দুর্গন্ধ সহ্য করে ঘরে থাকতি হচ্ছে। এতে দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে আমাগের।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্লাবিত অনেক গ্রামে এখন পেটের অসুখে ভুগছেন মানুষ। সেই সঙ্গে কয়েক দিনের বদ্ধ পানি দূষিত হওয়ায়চুলকানি, খোস-পাঁচড়া দেখা দিয়েছে অনেকের। এ অবস্থায় অনেকেই এলাকা ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি চলে যাচ্ছেন। অনেকেই নতুন করে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। তবে আশ্রয়কেন্দ্রের চারপাশে পানি থাকায় সেখানেও গন্ধ থেকে রেহাই মিলছে না।
এক দিন আগে গোবিন্দপুর আব্দুল জব্বার কলেজিয়েট স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠা এক পরিবারের সদস্য শাহীন গাজী বলেন, ‘মাছ পচা গন্ধ থেকে বাঁচতে বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি। কিন্তু সেখানেও একই অবস্থা।’ তিনি জানান, সেখানকার অনেক পরিবারের মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সুদীপ বালা বলেন, গত কয়েক দিনে প্লাবিত এলাকা থেকে মানুষ পেটের অসুখের চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসছেন। ওইসব এলাকার পানি এখন দূষিত হয়ে পড়ায় পেটের পীড়াসহ চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।
এদিকে, প্লাবিত এলাকায় মরা মাছের দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ায় চিন্তিত উপজেলা প্রশাসন। তারা মরা মাছ কুড়িয়ে মাটিচাপা দেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু এসব এলাকায় সে পরিস্থিতি নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, পানি না কমলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না।