

রবিবার ● ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২২
প্রথম পাতা » সারাদেশ » ভাষা শহীদ আনোয়ার হোসেনকে ‘দেশের প্রথম ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবীতে মানববন্ধন
ভাষা শহীদ আনোয়ার হোসেনকে ‘দেশের প্রথম ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদার দাবীতে মানববন্ধন
আহসান হাবিব, আশাশুনি : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কৃতি সন্তানও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। সোমবার সকালে উপজেলার বুধহাটা বাজারের সাতক্ষীরা-চাপড়া মেইন সড়কে মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন, শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেন স্মৃতি সংরক্ষক কমিটির আহবায়ক সাংবাদিক সচ্চিদানন্দ দে সদয়। আশাশুনি প্রেসক্লাবের সাহিত্য ও ক্রীড়া সম্পাদক হাসান ইকবাল মামুনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন, দৈনিক প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিনিধি কল্যাণ ব্যানার্জি, নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাষক মাহবুবুল হক ডাবলু, আশাশুনি প্রেসক্লাবের সভাপতি এস, এম আহসান হাবিব, প্রতিষ্ঠাতা সাবেক সভাপতি জি.এম মুজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এস.কে হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুর, উপজেলা অবসরপ্রাপ্ত সেনা কল্যাণ সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা ভাইস চেযারম্যান এড, শহীদুল ইসলাম বাচ্চু, প্রধান শিক্ষক ডাঃ শরিফুল ইসলাম প্রমূখ। মানববন্ধনে স্থানীয় সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিসহ সচেতন নাগরিক সমাজ মানববন্ধনে অংশগ্রহন করেন। পরে আশাশুনি ইউএনও কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মু. ইয়ানুর রহমানের হাতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপি ও মানববন্ধনে বিভিন্ন প্রকার দাবী করা হয়। দাবীর মধ্যে রয়েছে, ১) শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেনেকে দেশের প্রথম ভাষা সৈনিক হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান, ২) আশাশুনি সরকারি কলেজ তাঁর নামে নামকরণ করা, ৩) সাতক্ষীরা, আশাশুনি ও বুধহাটাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সড়ক তার নামে স্মৃতিস্তম্ভ ও নামকরণ করা, ৪) তার নামে সরকারি ট্রাষ্ট গঠন করা, এবং বুধহাটা বাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দৃষ্টিনন্দন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা, শিশু বেলার স্কুল বুধহাটা প্রথমিকের শহীদ মিনার তার নামে নামকরণ করা, কিশোর বেলায় লেখাপড়া করা প্রতিষ্ঠান, বুধহাটা বিবিএম কলেজিয়েট স্কুলের শহীদ মিনার ও হোস্টেল তার নামে নামকরণ করা, খুলনা জেলা স্কুল ও বিএল কলেজ চত্বরে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করাসহ বিভিন্ন দাবী তুলে ধরেন।
প্রসঙ্গত. শহীদ ভাষা সৈনিক আনোয়ার হোসেন সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা পশ্চিম পাড়ার মৃত. কনুই গাজী ও মৃত. পরীজানের জেষ্ট্য সন্তান। তিনি ১৯৩০ সালে নানা মৃত. বাছের সরদারের বাড়ীতে জন্মগ্রহন করেন। মেধাবী আনোয়ার হোসেন বাড়ী সংলগ্ন বুধহাটা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে মাইনার পাশ করে বুধহাটা হাইস্কুল বর্তমানে বিবিএম কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। অষ্টম শ্রেনী পাশ করে খুলনা জেলা স্কুলে ভর্তি হয়ে ১৯৪৬ সালে মেট্রিক কুলেশান (এসএসসি) পাশ করেন। পরে খুলনা বিএল (ব্রজলাল বিশ্ববিদ্যালয়) কলেজে একাদশ শ্রেনীতে ভর্তি হন। বিএল কলেজে লেখাপড়া কালিন তরুন আনোয়ার হোসেন বাংলা ভাষার আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ খুলনার তৎকালিন গান্ধী পার্কে ভাষা আন্দোলনের পক্ষ্যে ইস্তেহার পাঠ করার পরপরই তৎকালিন পাকিস্তানি সেনারা তাকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন চালানো হয় এবং কয়েকদিন পর মুক্তি দেয়া হয়। পরে ১৯৪৯ সালে ভাষা আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল থেকে তাকে আবারও গ্রেপ্তার করে প্রথমে কোতয়ালী থানায় রাখা হয়। পরে রাজশাহী কারাগারে প্রেরন করা হয়। কারাগারে বসেই তিনি পাকিস্তান সরকারের নির্যাতন ও নিপীড়ণে মাথানত না করে সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্ছার ভূমিকা ও আন্দোলন করতে থাকেন। আনোয়ার হোসেন কোনভাবে যখন মাথানত করেননি তখন এক পর্যায়ে ১৯৫০ সালের ২৪ এপ্রিল রাজশাহী কারাগারের খাপড়া ওয়ার্ডে পাগলা ঘন্টা বাজিয়ে পুলিশের গুলি চালানো হয়। পুলিশের গুলিতে আনোয়ার হোসেনসহ মোট ৭ জন ভাষা আন্দোলনকারী নিহত হন। এলাকাবাসির দুঃখ ও দাবী ভাষা দিবসে সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ বহু ভাষা সৈনিক স্বীকৃতি ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পাওয়ায় ২১ ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবসে সরকারি বেসরকারিভাবে স্মরণ করা হয়। অথচ শুধুমাত্র সরকারের দৃষ্টিগোচরের অভাবে আজ উল্লেখিত শহীদ ব্যক্তিদের আগেই ভাষা আন্দোলনকারী শহীদ আনোয়ার হোসেনের নাম স্মরণ করা হয়না। অনতিবিলম্বে ভাষা শহীদ আনোয়ার হোসেনকে দেশের প্রথম ভাষা সৈনিকের স্বীকৃতি ও রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদানে সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকার সচেতন মহল।