বৃহস্পতিবার ● ১৮ আগস্ট ২০২২
প্রথম পাতা » জাতীয় » মজুরি সুরাহা হয়নি, দাবিতে অনড় চা শ্রমিকরা
মজুরি সুরাহা হয়নি, দাবিতে অনড় চা শ্রমিকরা
দফায় দফায় বৈঠকেও চা শ্রমিকদের নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মালিকপক্ষ আংশিক মজুরি বৃদ্ধি করতে চাইলেও শ্রমিকরা তাদের দাবিতে অনড় রয়েছেন। এ অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবারও আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন চা শ্রমিকরা। বাগানে বাগানে করছেন বিক্ষোভ, মিছিল ও কর্মবিরতি।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে শ্রীমঙ্গলে আসেন শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরী। তিনি ধর্মঘট স্থগিত করে আলোচনায় বসার আহ্বান জানালে চা শ্রমিক ইউনিয়ন তা প্রত্যাখান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
একইভাবে বুধবার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনে চা-বাগান মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খালেদ মামুন চৌধুরীর এই বৈঠক হয়। সন্ধ্যায় ৬টার দিকে শুরু হওয়া বৈঠক শেষ হয় রাত ১১টায়। চা শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে প্রায় ৫ ঘণ্টার মতো ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের পরও কোনো সমঝোতা হয়নি। ফলে চলমান ধর্মঘটও প্রত্যাহার করেননি শ্রমিকরা।
তাই জেলার ৪১টি চা বাগানে ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। তাদের একটাই দাবি শ্রমের মজুরি দৈনিক ৩০০ টাকা দিতে হবে, না হলে তারা ঘরে ফিরে যাবে না। শ্রমিক ধর্মঘটে চা বাগানের উৎপাদন বন্ধ আছে। এতে লাখ লাখ টাকার পাতার ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থায় অচল হয়ে পড়েছে চা বাগানগুলো।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, আমাদের দাবি দৈনিক ৩০০ টাকা মজুরি। মালিকপক্ষ ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা মজুরি দিতে রাজি হয়েছে। আমরা এ প্রস্তাব মেনে নেইনি।
তিনি বলেন, শ্রমিকরা আন্দোলনের যে পর্যায়ে আছেন, সেখান থেকে ফেরা কঠিন। তৃণমূল পর্যায়ে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে, সেখান থেকে মজুরি বৃদ্ধির ঘোষণা আসা ছাড়া ফেরা যাবে না। শ্রমিক নেতারা বলেন, দীর্ঘ ১৯ মাস থেকে তাদের মজুরি বাড়ানোর বিষয়ে মালিকপক্ষ কথা বলতে রাজি হচ্ছে না। দুই বছর পরপর মজুরি বৃদ্ধির করার কথা।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে দৈনিক ১২০ টাকা মজুরিতে কাজ করছেন জেলার চা বাগানগুলোর শ্রমিকরা। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এ টাকা অত্যন্ত অপ্রতুল। তাই মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে ৯ থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত তারা দৈনিক দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করেন। ১১ আগস্ট সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের ১০ জন শ্রমিক নেতার সঙ্গে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত বিভাগীয় শ্রম দফতরের কর্মকর্তারা বৈঠকে বসলেও আলোচনা ফলপ্রসু হয়নি। তাই শনিবার (১৩ আগস্ট) থেকে টানা ধর্মঘটের ডাক দেয় শ্রমিকরা।
হবিগঞ্জের দাড়াগাঁও চা বাগানের শ্রমিক পঞ্চায়েতের সভাপতি প্রেমলাল আহির জানান, দৈনিক তাদেরকে ২৪ কেজি পাতা সংগ্রহ করতে হয়। এর বিনিময়ে তারা ১২০ টাকা পান। এর অতিরিক্ত প্রতি কেজির জন্য ৪ টাকা ৫০ পয়সা করে দেওয়া হয়। আর কম হলে প্রতি কেজিতে ৫ টাকা করে কর্তন করা হয়।
তিনি বলেন, একেকজন শ্রমিক বর্তমান মৌসুমে দৈনিক ৫০ থেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত চা তুলতে পারেন। কিন্তু মৌসুম ছাড়া টার্গেটই অর্জন করা যায় না। এখন তাদের মজুরি বৃদ্ধি না করলে তারা চলতে পারবেন না। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই তারা দাবি পূরণের লক্ষ্যে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন।
তিনি আরও বলেন, কোম্পানির ক্ষতি হচ্ছে সেটি আমরা বুঝি। কিন্তু আমাদের পেটে যদি ভাত না পড়ে তাহলে আমরা কর্ম করবো কী করে। তাছাড়া পাতা যদি বড় হয়ে যায় তাহলে চাও ভালো হয় না।
বাংলাদেশ টি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহ আলম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের একটা ওফার আছে তাদের কাছে। আমরা এখন কিছু বলতে পারব না। শ্রমিকনেতারা শ্রীমঙ্গল যাবেন। তারপর সিদ্ধান্ত জানাবেন। তারপরে বলব।
“তিনশ টাকা পাঁচশ টাকা বলে তো আমরা কোথাও যেতে পারব না। উনারা পারবেন না, আমরাও পারব না। আমরা ইন্ডাস্ট্রি চালাতে চাই, শ্রমিকদের উন্নতি চাই। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে একসঙ্গে বসবাস করতে চাই। উনাদের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিনের উঠাবসা। আমরা বিপদে-আপদের একসঙ্গে চলি।”
তিনি বলেন, “আজ যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা দেশের স্বার্থে, শ্রমিকদের স্বার্থে সামাল দিতে হবে, এবং মালিকদের স্বার্থে। আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আমরা অুনরোধ করেছি, ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে যান, মজুরির বিষয়টা সমাধান করব আমরা নিজেরা।
“আমরা ৫০ বছর পেরেছি। তাহলে এখন কেন পারব না? আমাদের চা বাগানে ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট লাগে। প্রতিবছর নতুন নতুন চারা লাগাতে হয়। এটাতে অনেক টাকা খরচ লাগে। আমি যদি একটা চারা লাগাই, কালকে চা ধরবে না। এটার জন্য ১২-১৩ বছর পর রিটার্নটা পাই। এটা বোঝার বিষয়।”