

রবিবার ● ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » কৃষি » আশাশুনিতে লবণাক্ত এলাকায় অমৌসুমি তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন
আশাশুনিতে লবণাক্ত এলাকায় অমৌসুমি তরমুজ চাষে বাম্পার ফলন
আহসান হাবিব, আশাশুনি : আশাশুনির বড়দল ইউনিয়নে লবণাক্ত এলাকায় বর্ষা মৌসুমে আধানিবিড় পদ্ধতিতে অমৌসুমি তরমুজ চাষ করে বাম্পার ফলনে সফলতা অর্জন করেছেন স্থানীয় চাষীরা। অসময় তরমুজ পেয়ে যেমন তৃপ্তি পাচ্ছে মানুষ, তেমনি অধিক মূল্যে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে চাষীরা।
সরজমিনে ঘুরে জানাগেছে, লবনাক্ততার কারনে উপজেলার ১১ ইউনিয়নের ১০ ইউনিয়নে আবাদী জমিতে দীর্ঘদিন নদীর পানিতে লোনা পানির মাছ সাদা সোনা নামে খ্যাত চিংড়ি মাছের চাষ হচ্ছে। কিন্তু, মাত্র একটি ইউনিয়ন বড়দলে এক ফসলী (আমন ধান) চাষাবাদ হয়ে থাকে। ফলে বছরের অধিকাংশ সময় জমি পতিত থাকে, দেশীয় গরু, ছাগলসহ গৃহপালিত জীব ঘাস খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এমন সময় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘উন্নয়ন প্রচেষ্টা’ প্রসপারিটি প্রকল্পের আওতায় পতিত জমি কাজে লাগাতে এবং বছরে একাধিক ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে কৃষকদেরকে উৎসাহিত করতে শাক-সবজি ও ফলাদি গাছ রোপন করে নানামূখি কার্যক্রম হাতে নেয়। এরই অংশ হিসেবে ইউনিয়নের ফকরাবাদ গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেনকে প্রকল্পের সদস্যভুক্ত করে। তাকে প্রকল্প হতে জলবায়ু সহনশীল ফসল চাষ বিষয়ক আয়বর্ধনমূলক কর্মকান্ডের প্রশিক্ষন দেয়। ‘লবণাক্ত এলাকায় মিনি পুকুর পদ্ধতিতে ফসল চাষ’ বাস্তবায়নের জন্য আথিক সহায়তা প্রদান করে সংস্থাটি। প্রসপারিটি প্রকল্পের কারিগরি কর্মকর্তাদের সঠিক পরামর্শ এবং কৃষি বিষয়ক কারিগরি সেবার মাধ্যমে একই জমিতে বছরব্যাপী বিভিন্ন রকম ফসলের চাষ করতে উদ্বুদ্ধ করেন তারা। চাষী জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে প্রায় ৬ বিঘা অন্যের লিজকৃত জমির বাঁধের উপর মালচিং পেপার ব্যবহার করে অমৌসুম জাতের তরমুজ, যেমন গোল্ডেন ক্রাউন, বিগ বাইট, রবি এবং ব্লাক জায়েন্ট চাষ করেছেন। চাষে তার আনুমানিক ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এবং আড়াই মাসে তরমুজ বাজারজাত করার উপযোগি হয়েছে। এখন তার তরমুজ ক্ষেতে ৬/৮ কেজি অজনের বাজারজাত করার উপযোগী সহ¯্রধিক তরমুজ শোভা পাচ্ছে। এসব তরমুজ খেতে খুবই সুস্বাদু এবং দেখতেও বেশ দৃষ্টিনন্দন। স্থানীয় বাজারে ইতোমধ্যেই কেজি প্রতি ৫০-৬০ টাকা দরে তরমুজ বিক্রয় হচ্ছে এবং তিনি আনুমানিক লক্ষাধিক টাকার তরমুজ বিক্রয় করতে পারবেন বলে আশা করেন।
অপরদিকে, একই ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী গ্রাম হেতাইলবুনিয়া গ্রামের বিষ্ণপদ মন্ডল, দিলীপ মন্ডল, শংকর মন্ডল, বামনডাঙ্গা গ্রামের মাহফুজুর রহমান ও গোয়ালডাঙ্গা গ্রামের কৃপা মন্ডলসহ অনেকে প্রসপারিটি প্রকল্পের আওতায় তাদের আথিক সহায়তায় একই পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করেছেন। ইতোমধ্যেই তারাও ফসল বাজারজাত করা শুরু করেছেন। একই সাথে তারা জমির আইলে/বাঁধে মিঠা কুমড়া, লাউ, ভেন্টি, করলা চাষ এবং নীচু জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। সামনের শীত মৌসুমে বোরো ধান, তরমুজ, সরিষা, এবং বাঁধে সব মিলিয়ে ১২ মাস সবজী চাষ করবেন বলে এ প্রতিবেদককে জানান।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জগদীশ চন্দ্র সানা বলেন, তিনি প্রকল্পের আওতায় চাষ কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন। যাতে এলাকার মানুষ উপকৃত ও সাবলম্বী হতে পারে। ইতোমধ্যে তাদের সফলতা দেখতে পেয়ে আমি আনন্দিত। অমৌসুমী তরমুজ হওয়ায় স্থানীয় বাজারে চাহিদাও ব্যাপক।
এ বিষয়ে উন্নয়ন প্রচেষ্টার প্রসপারিটি প্রকল্পের কারিগরি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মু. বাশিরুল ইসলাম বলেন, লবণাক্ত অঞ্চলে এক ফসলী জমিতে অমৌসুম জাতের তরমুজ চাষ করলে ব্যাপকভাবে লাভবান হওয়া যাবে, সেটা এ এলাকার চাষীরা আমাদের পরামর্শ মোতাবেক কাজ করায় এবং সফলতায় প্রমান করে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাজিবুল হাসান জানান, সরজমিনে এসব খমারী পরিদর্শন করে তাদের সরকারিভাবে কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। চাষীদের সফলতায় প্রমান করে বড়দল ইউনিয়নে লোনা পানির চিংড়ি চাষ না করে, বছরের ১২ মাসই বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন করে অধিক মনাফা অর্জন সম্ভব। এলাকাবাসী এ চাষ দেখে উদ্বদ্ধু হয়ে ব্যাপকভাবে ইউনিয়নব্যাপি চাষের নিমিত্তে সরকারিভাবে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।