শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

SW News24
বুধবার ● ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » সংস্কৃতি ও বিনোদন » বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে রঙিন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা
প্রথম পাতা » সংস্কৃতি ও বিনোদন » বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে রঙিন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা
১৭৮ বার পঠিত
বুধবার ● ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে রঙিন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা



ফরহাদ খান, নড়াইল; ---কেউ দৃষ্টিহীন, কেউ বোবা, কেউবা বধির। কারোর হাত-পাসহ অন্য শারীরিক সমস্যা। এমনই শিশু শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবকদের নিয়ে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ব্যতিক্রমী আনন্দ-উৎসব করেছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের সদস্যরা। ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে মুগ্ধ প্রতিবন্ধী স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ভিন্নরকম এই আনন্দ-উৎসবকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিভিন্ন পেশার মানুষও।

নড়াইল শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দুরের পল্লী গ্রামে অবস্থিত ‘বোড়ামারা অটিজম ও প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়’-এ ভালোবাসা দিবসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের ১৪৫ জন শিশু, তাদের অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীদের অংশগ্রহণে শোভাযাত্রা, ফুলেল শুভেচ্ছা, কেককাটা, খেলাধূলা, উন্নতমানের খাবার পরিবেশন এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কণ্ঠশিল্পী খালিদ শাওনসহ প্রতিবন্ধী শিশুরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেন। এছাড়া গান পরিবেশন করেন কাজী সাদিকুর রহমান, সবুজ সুলতান ও আব্দুল্লাহ টিটো। বাদ্যযন্ত্রে ছিলেন- সঞ্জয় দাস, প্রল্লাদ বিশ্বাস ও চিন্ময় বিশ্বাস ছোট্টো। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ৪৫ শিক্ষার্থীর ব্যতিক্রমী এ আয়োজনে মুগ্ধ সবাই। সন্ধ্যায় পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।

প্রতিবন্ধী স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মহিবুল্লাহ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী চম্পা বিশ্বাসসহ অনেকে বলে, বিস্কুট দৌঁড়, ঝুড়িতে বল নিক্ষেপ এবং লম্বা দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে খুব আনন্দ পেয়েছি। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আগে কখনো এমন আনন্দ পাইনি। নড়াইল পৌর মেয়রসহ স্বপ্নের খোঁজের লোকজন আমাদের হাতে ফুল দিয়েছেন। দুপুরে একসঙ্গে সবাই খাবার খেয়েছি। এছাড়া বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ফাউন্ডেশনের সদস্যদের আয়োজনে চেয়ারে বসা ও বল নিক্ষেপ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

স্কুলের শিক্ষক মারিয়া জান্নাতী বলেন, ভালোবাসা দিবসে এখানকার প্রতিবন্ধী শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন যে উদ্যোগ নিয়েছে সত্যিই তা প্রশংসনীয়।

প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের ১৪৫জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী অনেক আনন্দ পেয়েছে। সারাদিন তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেছে।    

নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এনামুল কবির টুকু বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণদের সৃজনশীল এই উদ্যোগ সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে পড়ুক এই আমাদের প্রত্যাশা। ভবিষ্যতেও তারা ভালো কাজ অব্যাহত রাখবে বলে আশা করছি।

নড়াইল পৌরসভার কাউন্সিলর শরফুল আলম লিটু বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ভালোবাসা দিবসটি জীবন্ত করে তুলেছে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন।

পৌর মেয়র আঞ্জুমান আরা বলেন, স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন আজ (১৪ ফেব্রুয়ারি) অভূতপূর্ব আয়োজন করেছে। প্রতিবন্ধী সোনামণিদের সঙ্গে ভালোবাসা দিবসটি কাটাতে পেরে পূর্ণতা পেয়েছি।

এদিকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন-জেলা প্রশাসনের দু’জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সহকারী কমিশনার জিসান আলী ও সঞ্জয় ষোঘসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। তারা বলেন, বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে তরুণদের সৃজনশীল এ উদ্যোগ সমাজের বিভিন্ন স্তরে ছড়িয়ে পড়ুক। সবাই ইতিবাচক কাজে অনুপ্রাণিত হোক।

স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ‘জয় বাংলা ইয়ুথ পুরস্কার-২০২১’ বিজয়ী মির্জা গালিব সতেজ বলেন, প্রতিষ্ঠার শুরুতে থেকেই সমাজের সুবিধাবঞ্চিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করছি। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ছয় বছর যাবত বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে এ ধরণের ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। ‘সুখ স্বপ্নের সন্ধানে কাজ করব মোরা একই বন্ধনে’-এ স্লোগানে ভবিষ্যতেও এমন আয়োজন অব্যাহত রাখতে চাই। ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আনন্দ অনুষ্ঠান ভাগাভাগি করার মধ্য দিয়ে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের পথচলা শুরু হয়।

২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিন্নমূল শিশুদের নিয়ে বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে আনন্দ অনুষ্ঠান ভাগাভাগি করার মধ্য দিয়ে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশনের পথচলা শুরু হয়। সংগঠনের সদস্যরা জানান, পড়ালেখার টাকা জমিয়ে এবং পারিবারিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তারা। এরই ধারাবাহিকতা ভাসমান বেদে সম্প্রদায়ের মাঝে শিক্ষা ও জীবনযাত্রা মানউন্নয়ন নিয়ে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জয় বাংলা ইয়ুথ পুরস্কার-২০২১’ জয়লাভ করে স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন।

এছাড়া করোনাকালীন সময়ে অসহায় মানুষকে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, বিনামূল্যে সবজি বাজার, গরিব কৃষকের ধান কর্তন, চিকিৎসাসেবা, হাসপাতাল ও এতিমখানায় ইফতার বিতরণ, ঈদে ছিন্নমূল ও বেদে সম্প্রদায়ের শিশুদের মাঝে নতুন পোশাক উপহার দেয়াসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করে যাচ্ছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। ২০২২ সালে সিলেট ও সুনামগঞ্জ এলাকায় বন্যা দুর্গতদেরও পাশে ছিলো স্বপ্নের খোঁজে ফাউন্ডেশন।





আর্কাইভ