বৃহস্পতিবার ● ১১ মে ২০২৩
প্রথম পাতা » অপরাধ » বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রীকে হত্যা করেন সাইদুল
বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনায় ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্রীকে হত্যা করেন সাইদুল
গাজীপুর মহানগরীর দক্ষিণ সালনা এলাকায় বাসায় ঢুকে কলেজছাত্রী রাবেয়া আক্তারকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় গৃহশিক্ষক সাইদুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। ছাত্রীকে বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা জানতে পেরে ক্ষিপ্ত করে তাকে হত্যার পরিকল্পনা নেয় সাইদুল। এজন্য ৬৫০ টাকা দিয়ে ছুরি কিনে ঘরে ঢুকে ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করেন।
১১ মে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানান, গত ৮ মে রাতে গাজীপুরের সালনা এলাকায় গৃহশিক্ষক সাইদুল কলেজছাত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যা এবং নিহতের মা ও দুই বোনকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে জখম করেন।
ওই ঘটনায় ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে গাজীপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। হত্যাকাণ্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। র্যাব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত গৃহশিক্ষককে গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
গতকাল রাতে র্যাব সদর দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ এর একটি দল টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর এলাকা থেকে প্রধান ও একমাত্র আসামি সাইদুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে নানা তথ্য দেন।
কমান্ডার আল মঈন আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত জানায়, ২০২০ সালে করোনাকালীন ভিকটিমের পরিবারের সবাইকে আরবি পড়ানোর জন্য গৃহশিক্ষক হিসেবে ভিকটিমের বাবা তাকে নিয়োগ দেয়। আরবি পড়ানোর সুবাদে সে প্রতিনিয়ত ভিকটিমের বাসায় যাওয়া-আসা করত। একপর্যায়ে ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে সু-সম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে ভিকটিমকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ৫-৬ মাস আরবি শেখানোর পর পড়ানো বন্ধ করে দেয়।
পরবর্তীতে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভিকটিমকে মৌখিকভাবে বিবাহ করে সাইদুল। বিবাহের বিষয়টিকে সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভিকটিম ও তার পরিবারকে চাপ দিতে থাকেন তিনি। মেয়েটির পরিবার বিষয়টি জানতে পেরে সাইদুলের সঙ্গে মেয়েটির যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।
২০২২ সালের অক্টোবর মাসে রাবেয়া আক্তার উত্ত্যক্ত করার বিষয়ে একটি অভিযোগ দাখিল করেন। এরপর সাইদুল কিছুদিন উক্ত্যক্ত করা হতে বিরত থাকে। কিন্তু গত দুই মাস ধরে ভিকটিমের কলেজে এবং বাসার বাইরে যাওয়া-আসার পথে পুনরায় তাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকে এবং প্রস্তাবে রাজি না হলে ভিকটিমকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে গ্রেফতারকৃত জানতে পারে যে ভিকটিমের পরিবার ভিকটিমকে উচ্চ শিক্ষার জন্য তার মেয়েকে দেশের বাইরে পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে না পেরে রাবেয়া ও তার পরিবারের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা জানান, হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য গত ৭ মে বিকেলে স্থানীয় বাজারে কামারের দোকান থেকে ৬৫০ টাকা দিয়ে গরু জবাই করার একটি ছুরি তৈরি করতে দেয়। পরদিন সন্ধ্যায় ছুরি সংগ্রহ করে ভিকটিমের বাসায় ঢুকে মাথা, গলা, হাত এবং পায়ে উপর্যুপরি আঘাত করে। মেয়েটির চিৎকারে তার মা ও দুই বোন বাঁচানোর চেষ্টা করলে তাদেরকেও কুপিয়ে জখম করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। চিৎকার শুনে স্থানীয় লোকজন গিয়ে তাদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাবেয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া তার মা ও ছোট দুই বোনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
হাসপাতালে নেওয়ার পথে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তাদের উত্তরার একটি হাপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ভিকটিমের মা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আছেন।
গ্রেফতার সাইদুল চট্টগ্রামের একটি মাদরাসা থেকে দাওরা পাস করেন। তিনি গাজীপুরের একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করার পাশাপাশি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমামতি করতেন এবং এলাকার বিভিন্ন বাসায় গিয়ে প্রাইভেট পড়াতেন। দুই মাস পূর্বে দুটি চাকরিই ছেড়ে দেন। ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য নিজের চেহারা পরিবর্তন করে টাঙ্গাইলের ভূঞাঁপুরে তার এক বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে যায়। আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গতরাতে র্যাব তাকে গ্রেফতার করে।