শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

SW News24
বৃহস্পতিবার ● ২৯ অক্টোবর ২০১৫
প্রথম পাতা » পরিবেশ » জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতায় খাদ্য নিরাপত্তা কৃষিবিদ আবু মোজাফফর মাহমুদ
প্রথম পাতা » পরিবেশ » জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতায় খাদ্য নিরাপত্তা কৃষিবিদ আবু মোজাফফর মাহমুদ
৬০২ বার পঠিত
বৃহস্পতিবার ● ২৯ অক্টোবর ২০১৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতায় খাদ্য নিরাপত্তা কৃষিবিদ আবু মোজাফফর মাহমুদ

জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতায় খাদ্য নিরাপত্তা
কৃষিবিদ আবু মোজাফফর মাহমুদ

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের জলবায়ুও পাল্টে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশে শীত ঋতুর দৈর্ঘ্য কমে যাচ্ছে, কিন্তু শীতের প্রকোপ বাড়ছে। গ্রীষ্ম ঋতুতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, বাড়ছে দাবদাহের প্রকোপ। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্ষা ঋতুতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে ঘন ঘন বন্যার প্রকোপ দেখা দিচ্ছে অন্যদিকে শীতকালে বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় মার্চ-এপ্রিল মাসে খরার বিস্তার ঘটার আশংকা দেখা দিচ্ছে। একই সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে উপকূলবর্তী অনেক ্এলাকা যেমন সমুদ্রে নিমজ্জিত হবে তেমনি লবণাক্ততা, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের প্রকোপ আরও তীব্র হবে বলে বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন। সব মিলিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আমাদের দেশের কোটি কোটি দরিদ্র মানুষের জীবিকায়নে বড় ধরণের হুমকি তৈরি করছে। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী উন্নয়নশীল বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৩ শতাংশ গ্রাম এলাকায় বাস করে যারা চরম দরিদ্র হিসাবে চিহ্নিত। বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি একে অপরের পরিপূরক এবং দারিদ্র বিমোচনের সাথে সম্পর্কিত। যারা হতদরিদ্র এবং কৃষির উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল, তারাই্ মূলত জলবাযু পরিবর্তন এবং দারিদ্র্যের শিকার। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে জলবায়ু এবং পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে অধিক মাত্রায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিচ্ছে যার ফলে এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ফসলী জমি বিরাণ ভূমিতে পরিণত হচ্ছে। কৃষির ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পড়ায় খাদ্য নিরাপত্তা চরমভাবে বিঘিœত হচ্ছে।

ন্যাশনাল এডাপটেশন প্রোগ্রাম অব এ্যাকশন তাদের এক জরিপে কৃষি ক্ষেত্রের তিনটি আশংকাজনক ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে। তারা বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে খরার প্রভাব আরো বিরূপ আকার ধারণ করবে, উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং দেশে আরো প্রবল বন্যা হবে। বিশ্বের অন্যতম বেশি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ বাংলাদেশের বর্তমান জনগোষ্ঠী প্রায় ১৫.৮ কোটি (বিবিএস, ২০১৪) এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২২ শতাংশ (ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, ২০১৩)। পক্ষান্তরে প্রতিবছর দেশে ১ শতাংশ হারে আবাদযোগ্য জমি কমছে। এমতাবস্থায় ১৫.৮ কোটি লোকের স্থিতিশীল খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন কৃষির জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন কৃষি সেক্টরকে আরো বিপন্ন করেছে। অতিমাত্রায় বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদির কারণে একদিকে যেমন ফসলহানি ঘটেছে অন্যদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লবণাক্ততা বৃদ্ধি, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে খরার প্রভাবে ফসল আবাদ অলাভজনক হয়ে পড়েছে। এসব বৈরি প্রভাবে এসব অঞ্চলে খাদ্য সংকট সৃষ্টি হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন।

বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে ঝুঁকিবহুল বলে বিশেষজ্ঞগণ অভিমত প্রকাশ করেছেন। ক্লাইমেট চেঞ্জ সেল, ২০০৮-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৯৩ সালের মহাদুর্যোগের ফলে বাংলাদেশে আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে ৫.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ৪১,৩০০ কেটি। ১৯৭৩-৮৭ সাল পর্যন্ত সময়ে অনাবৃষ্টির ফলে আমরা প্রায় ২১.৮ লক্ষ টন ধান উৎপাদন হারিয়েছি এবং বন্যার ফলে ধান উৎপাদন হারিয়েছি প্রায় ২৩.৮ লক্ষ টন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সমকালীন পরিস্থিতি দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যার পানি বিস্তারের ফলে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, সেচ ব্যবস্থায় বাধা আসবে এবং ধান উৎপাদনের জন্য উর্বর জমি কমে যাবে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে আমন উৎপাদন এলাকা কমে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আউশ উৎপাদন ২৭ ভাগ এবং গম উৎপাদন ৬১ ভাগ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া বোরো উৎপাদন ৫৫ ভাগ থেকে ৬২ ভাগ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। উপকূলীয় নদীতে লবন প্রবেশের ফলে ২ লাখ টন চাল উৎপাদন কমে গেছে। বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা বলছে, গড় তাপমাত্রা বর্তমানের তুলনায় ২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা তারও বেশি বাড়লে শস্যদানার উৎপাদন বিপুলভাবে ব্যাহত হবে।

মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ শক্তিশালী হওয়ার ফলে যেহেতেু বড় বন্যার পৌনঃপুনিকতা ও ব্যাপ্তিকাল (স্থায়িত্ব) উভয়ই বাড়বে, উচ্চফলনশীল আমন চাষের জন্য তা সমস্যা সৃষ্টি করবে। ধানের ক্ষেত বন্যার পানিতে ডুবে থাকলে নতুন কচি চারার জন্য তা সহনীয় নয়, ফলে আমনের উৎপাদন অনেকটা কম হবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জলাবদ্ধতার প্রভাব প্রতিবছর বাড়ছে, নতুন নতুন এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে কৃষির জন্য অনুপোযগী হয়ে পড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রতলের স্ফীতি জলাবদ্ধতার প্রকোপ বাড়িয়ে তুলে আক্রান্ত এলাকায় ফসলের সম্ভাবনা নষ্ট করবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন গড় তাপমাত্রা বাড়লে তা মাটির জৈব কার্বনের ক্ষয় প্রবণতা বাড়াবে। কৃষি বিজ্ঞানীদের সংজ্ঞানুযায়ী এ ধরণের সংকটে দেশের বেশিরভাগ কৃষিজমিই হুমকির মুখে পড়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন এই ঝুঁকিকে উৎপাদন ঝুঁকিতে পরিণত করবে। আবার এদেশের বেশিরভাগ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল হওয়ায়, কৃষি বিপর্যস্ত হলে তা দারিদ্র্যের  বিস্মৃতি ঘটাতে পারে। আশংকা করা হচ্ছে, কৃষিতে নতুন কর্মসংস্থানের বদলে জলবায়ু তাড়িত বেকারত্বও দেখা দিতে পারে।

পরিশেষে বলা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যা মোকাবেলার জন্য একটি আস্থা তহবিল গঠন করা দরকার যে তহবিলের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সকল মজুরি, ্ঋণ, কারিগরি সহায়তা প্রভৃতি সমন্বিত পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যাবে। এ ধরণের তহবিল গঠন করা হলে বিশ্ব ও দ্বিপক্ষীয় তহবিলের আদান-প্রদান খরচ হ্রাস পাবে, বড় আকারের অর্থের সংস্থান হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, সুশাসন, ব্যবস্থাপনা ও জাতীয় লক্ষমাত্রা অর্জন সুনিশ্চিত হবে। অবশ্য জলবায়ু পরিবর্তন, খাদ্য নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য সমস্যার মোকাবেলা সহজসাধ্য নয়। তবে উন্নয়নের অংশীদার, নীতি প্রয়োগ, সরকার, দাতা সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট জনগণ এবং সুশীল সমাজের সমন্বিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা এবং সুপরিকল্পিত দীর্ঘমেয়াদী ও কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দ্বারা এ সমস্যার মোকাবেলা করা সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তন ও খাদ্য নিরাপত্তা এবং দারিদ্র্য সমস্যাকে সর্বাধিক গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা আজ সময়ের দাবি।
লেখকঃ
কৃষিবিদ আবু মোজাফফর মাহমুদ
খুলনা।
---





পরিবেশ এর আরও খবর

পাইকগাছায় বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত পাইকগাছায় বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ পাখির জন্য খোলা পাত্রে পানির ব্যবস্থা তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ পাখির জন্য খোলা পাত্রে পানির ব্যবস্থা
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে উপকূলের বিস্তীর্ণ জনপদের মাটি ও মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে উপকূলের বিস্তীর্ণ জনপদের মাটি ও মানুষ
পাইকগাছায় বনবিবি’র পাখি সংরক্ষণে গাছে পাখির বাসা স্থাপন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন মেজর (অব:) মেজবাহুল ইসলাম পাইকগাছায় বনবিবি’র পাখি সংরক্ষণে গাছে পাখির বাসা স্থাপন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন মেজর (অব:) মেজবাহুল ইসলাম
পাখির প্রজনন লড়াই পাখির প্রজনন লড়াই
গ্রীষ্মে পাখিদের প্রজননের জন্য গাছে গাছে কৃত্রিম বাসা গ্রীষ্মে পাখিদের প্রজননের জন্য গাছে গাছে কৃত্রিম বাসা
পাইকগাছায় পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতামূলক মাঠসভা ও গাছে পাখির বাসা স্থাপন পাইকগাছায় পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতামূলক মাঠসভা ও গাছে পাখির বাসা স্থাপন
পাইকগাছায় আর্ন্তজাতিক বন দিবস পালিত পাইকগাছায় আর্ন্তজাতিক বন দিবস পালিত
বনবিবির কমিটি গঠন; সভাপতি সাংবাদিক প্রকাশ ঘোষ বিধান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক পিযুষ কান্তি ঘোষ বনবিবির কমিটি গঠন; সভাপতি সাংবাদিক প্রকাশ ঘোষ বিধান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক পিযুষ কান্তি ঘোষ
পাইকগাছায় অবাধে পাখি শিকার করা হচ্ছে পাইকগাছায় অবাধে পাখি শিকার করা হচ্ছে

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)