শনিবার ● ১৯ জানুয়ারী ২০১৯
প্রথম পাতা » অপরাধ » মাগুরায় ক্লিনিকে নার্স দিয়ে রোগীর অপারেশনের অভিযোগ
মাগুরায় ক্লিনিকে নার্স দিয়ে রোগীর অপারেশনের অভিযোগ
মাগুরা প্রতিনিধি :
মাগুরা শহরের পিটিআই পাড়ায় পলি ক্লিনিক নামে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে বিরুদ্ধে চিতিৎসক ছাড়াই নার্সদের দিয়ে রোগী অপারেশন করার অভিযোগ উঠেছে। ঐ ক্লিনিকের মালিক ডাক্তার মোঃ মুক্তাদির রহমানসহ নার্সদের বিরেুদ্ধে এমন অভিযোগ এনেছেন সদরের আবালপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক নামে এক ব্যক্তি।
অভিযোগে আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের জানান, তার স্ত্রী তনু বেগম (৩৮)জরায়ুতে টিউমার আক্রান্ত হয়ে এক দালালের মাধ্যমে কয়েকদিন আগে মাগুরা পলি ক্লিনিকে ভর্তি হন। এ সময় চিকিৎসক মোক্তাদির রহমান কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই রোগিকে ভয় দেখিয়ে বলেন- এখনই অপারেশন না করলে আপনার রোগীর মৃত্যু হতে পারে। বাড়ী থেকে টাকা পয়সা জোগাড় করে নিয়ে আসেন। আমি অপারেশনের ব্যবস্থা করছি। তখন আব্দুর রাজ্জাক ধার দেনা করে ১৫ হাজার টাকা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। ১৪ জানুয়ারী সোমবার সকাল ৯টার দিকে ডাক্তার মো ঃ মুক্তাদির রহমান নিজে অপারেশন না করে এমনকি কোন প্রকার সার্জিক্যাল, গাইনী বিশেষজ্ঞ ও অজ্ঞানের ডাক্তার ছাড়াই তার ক্লিনিকের দুই জন সাধারণ সেবিকা দিয়ে জরায়ুতে টিউমারের অপারেশন করতে বলেন। অপারেশন রুমে গিয়ে দুই নার্স যখন রোগির পেট কাটতে যায় তখন রোগি তনু বেগম জিজ্ঞাসা করেন, আপনারা কেন, ডাক্তার সাহেব কোথায়? তখন নার্সরা বলেন যে ডাক্তার এখনই আসবেন। ঐ সময় নার্সরা তার অপারেশন করার জন্য পেট কেটে টিউমারে অস্ত্রোপচার চালায়। মহিলার জরায়ু ও টিউমারে অতিরিক্ত চর্বি দেখে ভয় পেয়ে তারা ডাক্তারকে ফোন করলে প্রায় ১৫ মিনিট পরে ডাক্তার অপারেশন কক্ষে এসে রোগির অবস্থা খারাপ দেখে নার্সদের বলে- ঝামেলা আছে সেলাই করে দেন। এ সময় ডাক্তার মুক্তাদির রহমান ওটি থেকে বের হয়ে রোগির আব্দুর রাজ্জাককে বলেন, আপনাদের রোগির অপারেশন এখানে হবেনা। রোগির অবস্থা খুবই খারাপ। এখনই ফরিদপুর নিয়ে যেতে হবে। সেখানে আমার পরিচিত ডাক্তাররা ব্যবস্থা নেবে। এই বলে আমাদের ফরিদপুর পাঠিয়ে দেন। সেখানে গিয়ে দেখি আমাদেরকে ফরিদপুর ডায়াবেটিস হাসপাতালে রেফার্ট করেছেন। রোগীকে ডায়াবেটিস হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উল্টো প্রশ্ন করেন, রোগির জরায়ুতে টিউমার হয়েছে। কিন্তু মাগুরার ডাক্তার আবার ডায়াবেটিস হাসপাতালে পাঠালো কেন? পরে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করেন হয়। এরপর থেকে তনু বেগম ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
তিনি বলেন- নার্স দিয়ে রোগির অপারেশন করাই ওই রোগীর মৃত্যুও সম্ভবনা দেখে ডাঃ মুক্তাদির রহমান নিজে আর অপারেশন না করে তড়িঘড়ি করে ফরিদপুর পাঠিয়ে দেন। এ ঘটনায় শহিদুল ইসলাম, প্রখর রঞ্জন বিশ্বাসসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সিজারিয়ান রোগিদের ভাগিয়ে তার পলি ক্লিনিকে ভর্তি করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অপারেশন করে থাকেন ডা. মুক্তাদির রহমান। এ ধরনের ঘটনা মুক্তাদির রহমান একাধিক বার তার ক্লিনিকে ঘটিয়েছেন বলেও তারা অভিযোগ করেন। এ ব্যাপারে পলি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা সহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও ডাক্তার মুক্তাদির রহমানের বড় ধরনের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন রোগির স্বামী আব্দুর রাজ্জাক ও এলাকাবাসি।
অবহেলার অভিযোগ অস্বীকার করে ক্লিনিক মালিক ডা. মুক্তাদির রহমান মোবাইল ফোনে জানান, আমরা রোগীর অপারেশন সম্পন্ন করতে পারিনি তাই ফরিদপুরে রেফার্ট করে দিয়েছি। আসলে মাগুরায় এসব রোগির অপারেশন হয়না। আমরা শুধু উপরের চামড়াটাই কেটেছিলাম। রোগিকে সেলাই করে পাঠিয়ে দিয়েছি। এ ধরনের অপারেশন আমার নার্সরাই করে থাকেন।
মাগুরা সদর থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান- বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে এখনও কেউ আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।