শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

SW News24
মঙ্গলবার ● ১১ মে ২০২১
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » ঈদুল ফিতর: আঁধার কেটে আসুক আলো
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » ঈদুল ফিতর: আঁধার কেটে আসুক আলো
৫৬২ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ১১ মে ২০২১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ঈদুল ফিতর: আঁধার কেটে আসুক আলো

---

পৃথিবী আজ স্তব্ধ। চারিদিকে যেন উৎকণ্ঠা আর এক অজানা আতঙ্ক। এইতো দেড় বছর আগেই পৃথিবী চলছিলো প্রাকৃতিক নিয়মে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এসে থামিয়ে দিলো আমাদের স্বাভাবিক চলা। উৎসব আর আনন্দের সে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঈদ ছোট-বড় সকলের কাছে আনন্দের। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পরে ফিরে আসে ঈদ। এবারো রমজান শেষে ঈদ এসেছে নিয়ম অনুসারেই। কিন্তু এবারের ঈদ অনেকটা ব্যতিক্রমী। ঈদ মানে আনন্দ, কোলাকোলি, ঘুরাফেরা, সালামি আর উৎসব। কিন্তু এ ঈদে এগুলোর কোনটিই নাই। সব কিছুর বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯।

২০১৯ সালের শেষদিকে চীনের উহান প্রদেশ থেকে করোনা ভাইরাস আজ বিশ্ব ভ্রমণ করছে। পৃথিবীর আনন্দ আর হাসিকে থামিয়ে দিয়েছে এই মহামারি। প্রতিদিন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছে এবং অনেকেই মৃত্যবরণ করছে। আমাদের দেশেও প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার লোক আক্রান্ত হচ্ছে এবং মৃত্যুর সারিও দীর্ঘ হচ্ছে। আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণকারীর পরিবারে এবার ঈদে তেমন আনন্দ নাই। যারা সুস্থ আছি তাদের ঈদেও কেমন যেন আনন্দ ও উৎফল্ল নাই। আর এর প্রকৃত কারণ মহামারি করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। বিশ্বের মুসলমানদের কাছে আজ ঈদ আছে। কিন্তু নাই ঈদের আনন্দ। তাদের এখন মনে হচ্ছে বেঁচে থকাটায় ঈদের আনন্দ ও গৌরব।

কোভিড-১৯ থেকে দেশের জনগনকে নিরাপদে রাখতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সাধারণ জনগনও বুঝতে পারছেন বর্তমানে কেমন থাকতে হবে। ঈদ সকলের জন্য আনন্দ নিয়ে হাজির হয় রমজান শেষে। এবারো আনন্দ নিয়ে এসেছে। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূল না থাকায় আমরা আনন্দ করতে পারছি না। গতবারের মতো এবারও ঈদগাহে যাওয়া যাবে না। কোলাকোলি ও কুশল বিনিময়ও হবে না। এটা সত্যি দুঃখ ও বেদনাদায়ক। ঈদের জামায়াত করতে হবে মসজিদে বা বাড়িতে। করোনা ভাইরাস যেন বিস্তার করতে না পারে তাই এ ব্যবস্থা। সরকারের এ পদক্ষেপ আমাদের কল্যাণ নিয়ে আসবে বলে মনে করি। কারণ বেঁচে থাকলে আমরা পরবর্তীতে বিভিন্ন উৎসবে আনন্দ করতে পারবো।

ঈদে ঘরে ফেরার দৃশ্য দেখা গেলেও এবার তা হবে না। কারণ সারাদেশের যোগাযোগ প্রায় বন্ধ। বাস-ট্রেন বন্ধ করা হয়েছে অনেক আগে থেকেই। যে যেখানে আছেন সেখানেই ব্যক্তিগতভাবে বা পরিবারের সাথেই ঈদ করতে হবে। তাই নাঁড়ির টানে ঘরে ফেরা হবে না অনেকের। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে ভার্চুয়াল জগতে আপনজনের সাথে ঈদের আনন্দ ও ভাবনার আদান-প্রদান হবে। বৃদ্ধ মা-বাবার সাথে ঈদের দিন থাকতে পারবেন না বলে অনেকের কাছে খারাপ লাগবে। কিন্তু নাঁড়ির টানে ঘরে ফিরতে গিয়ে যদি করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তবে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে। সন্তানের কাছে পিতা-মাতার সুস্থতার খবর এখন ঈদের আনন্দ। আবার সন্তান ঈদে বাড়ি না ফিরলেও যেন সুস্থ থাকে এটা প্রত্যেক পিতা-মাতার প্রত্যাশা। তাই আপনজন সুস্থ ও নিরাপদে থাকুক এটাই সবার কাছে ঈদ উৎসব।

ঈদ আসলেই শুরু হয় নতুন পোশাক কেনার ধুম। অনেকের কাছে নতুন পাঞ্জাবি ও জামা কেনা আবার মার্কেটে ঘুরে আনন্দ করা ভীষণ শখের। কিন্তু এবার ঈদে এমনটা হবে না। সীমিতভাবে খোলা হয়েছে শপিংমল এবং মার্কেট। নি¤œ আয়ের মানুষের পারিবারিক আয় কমে গেছে। তাই অনেকেই এবার নতুন কাপড় ছাড়াই ঈদ কাটাবেন। বাজারে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বের হচ্ছে না। বাবা-মায়ের জন্য নতুন কাপড়, শিশুদের জন্য খেলনা কেনার পরিকল্পনা এবার ঈদে থাকছে না। আমরা এবার সব কিছু ছাড় দিচ্ছি ঈদে সুস্থ ও নিরাপদ থাকার জন্য। কারণ সুুস্থ থাকলে ভবিষ্যতে অনেক কিছু করতে পারবো। মহামারি কোভিড-১৯ এ এখন বেঁচে থাকায় আমাদের জন্য মহা আনন্দের।

শিশুরা এখন ঘরেই আছে পরিবারের সাথে। তাদের ইচ্ছা থাকে ঈদে দাদার বাড়ি, নানার বাড়ি বা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি বেড়াতে যাবে। নিকটজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি তাদের আনন্দের বাধা হয়ে দাঁড়ালো। আম্মা বলেছেন বাড়ির বাহির হওয়া যাবে না। এবার ঈদে বাজার থেকে তোমার জন্য তেমন কিছু আনা হবে না। তাই শিশুদের জন্য  ঈদে এবার আনন্দ একটু কমে যাবে। তবে পরিবারের সাথে সারাদিন থাকা হবে বলে তাদের ঈদটা আড্ডায় কাটবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। বিকেলে হয়তো ঘুরা হবে না। তবে বাড়িতে বিভিন্ন ধরণের মিষ্টান্ন খেয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে আনন্দও হবে।

এবার ঈদে সবচেয়ে কষ্ট হবে দুস্থ-গরীব পরিবারের সদস্যদের। যাদের কাজ বন্ধ, ছোট্ট ব্যবসা থাকলেও চলছে না তাদের পাশে সরকার দাঁড়িয়েছে। আমাদেরকেও তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তারা হয়তো মুখ ফুটে সাহায্যের আবেদন করবে না। তাই আমাদেরকেই সাধ্যমতো নিজ উদ্যোগে তাদের খবর নিতে হবে। আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই ঈদে কেমন থাকবে তার খবরও আমাদেরকেই নিতে হবে। সামান্য হলেও তাদের বাড়িতে মিষ্টান্ন পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি ত্রাণ ও ঈদ সামগ্রী যেন প্রকৃত দাবিদারের কাছে পৌঁছে তার উদ্যোগ নিতে হবে সমাজের নেতৃস্থনীয় ব্যক্তিদের। সমাজের সবাই আত্মীয়-স্বজন নিয়ে সুস্থ ও নিরাপদ থাকা হচ্ছে ঈদের প্রকৃত আনন্দ।

অতীতে আমাদের উপর দিয়ে চলে গেছে অনেক দুর্যোগ ও বিপদ। এ বিপদে ধৈর্য্য হারা হলে চলবে না। এক মাস সিয়াম সাধনার পরে আমরা নিজেদেরকে পাপ ও পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত করেছি। আমরা আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক হয়েছি। মহান সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করে তাঁর প্রিয়জন হয়েছি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস মহান প্রভু আমাদেরকে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ এর পরীক্ষায় সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ করবেন। অগামীর ঈদ আমাদের কাছে আনন্দ ও সুখের বার্তা নিয়ে ফিরে আসবে। এবার ঈদে আমরা তেমন মহা আনন্দ চায় না। চায় নিজেদের সুস্থ ও নিরাপদ থাকা। আর এ সুস্থতা ও নিরাপদ থাকায় আমাদের এবারের ঈদ আনন্দ।

লেখক: শাহাদাত আনসারী

[ব্যাংক কর্মকর্তা ও কলাম লেখক]





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)