শিরোনাম:
পাইকগাছা, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩২

SW News24
মঙ্গলবার ● ২৫ নভেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » ফিচার » প্রাণিসম্পদ দেশের সম্পদ
প্রথম পাতা » ফিচার » প্রাণিসম্পদ দেশের সম্পদ
৩৩ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ২৫ নভেম্বর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

প্রাণিসম্পদ দেশের সম্পদ

---   প্রকাশ ঘোষ বিধান

প্রাণিসম্পদ দেশের সম্পদ একটি বহুল প্রচলিত ও গভীর অর্থবহ প্রবাদ। এর অর্থ হলো, গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি এবং মাছসহ অন্যান্য প্রাণিজ সম্পদ একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ২০ ভাগ গবাদি প্রাণি ও হাঁস-মুরগি পালন ও প্রজনন কর্মসূচির আওতায় জীবিকা নির্বাহ করে। জমিচাষ, ভারবহন এবং গোবরের সার ও জ্বালানি সরবরাহ প্রাণিসম্পদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান। তদুপরি, প্রাণির চামড়া, হাড়, নাড়িভুঁড়ি ও পালক ইত্যাদি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সহায়ক। প্রাণিসম্পদ ভূমিহীন মানুষের জীবিকার একটা বড় অবলম্বন। অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে বিশেষ করে খামারে গবাদি প্রাণি ও হাঁস-মুরগি পালন। বাংলাদেশে গবাদি প্রাণির মধ্যে উল্লেখযোগ্য গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া। এগুলো দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ, কারণ এসব প্রাণি কৃষি কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কাজে চালিকা শক্তি, চামড়া, ও সারের যোগান দেয় এবং জনসংখ্যার বৃহৎ অংশের জন্য মাংস ও দুধের প্রধান উৎস। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পালিত প্রাণিসম্পদের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

প্রাণিসম্পদ দেশের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পদ, যা খাদ্য মাংস, দুধ, কৃষি কাজে সহায়তায় লাঙল, পরিবহন, চামড়া, এবং গোবর সার সরবরাহ করে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারবাহী হিসেবে পরিবহনে ঘোড়া ব্যবহার করা হয়। এটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং বিভিন্ন ধরনের পণ্য ও সেবা প্রদান করে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ১৭৯৫ সালে ব্রিটিশ আমলে একটি পশুচিকিত্সা ইউনিটের সাথে যাত্রা শুরু করে। ১৮৮৩ সালে ব্রিটিশ সরকার একে সিভিল ভেটেরিনারি বিভাগে পরিণত করে। এর সদর দফতর ছিলো কলকাতায়। তবে ১৯৪৭ সালে তা কুমিল্লায় স্থানান্তরিত করা হয়। ভারত বিভাগের পর এর নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তানের পশুপালন অধিদপ্তর নামকরণ করা হয়। এরপর ১৯৬০ সালে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর নামকরণ করা হয়। বেশ কয়েকবার নাম পরিবর্তনের পরে এটি বর্তমান নাম লাভ করে।

প্রাণিসম্পদ প্রোটিনের একটি প্রধান উৎস। দুধ, মাংস এবং ডিম মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে, যা সুস্থ ও কর্মঠ জনশক্তি গঠনে অপরিহার্য। পশুপালন, ডেইরি ফার্মিং, পোল্ট্রি এবং মৎস্য চাষ গ্রামীণ অর্থনীতিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। এই খাত থেকে প্রাপ্ত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও সুযোগ থাকে। গবাদি পশু কৃষিকাজে (হাল চাষ) সাহায্য করে এবং এদের গোবর উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা জমির উর্বরতা বাড়ায়। এই কারণে প্রাণিসম্পদকে জাতীয় সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশ সরকার প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

প্রাণিসম্পদ মাংস, দুধ, ডিম এবং অন্যান্য পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যের প্রধান উৎস। এটি কৃষি কাজের জন্য চালিকা শক্তি সরবরাহ করে এবং গ্রামীণ অর্থনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। গবাদি পশুর চামড়া এবং পশম থেকে বিভিন্ন পোশাক ও সামগ্রী তৈরি হয়। এছাড়া, পশুর বর্জ্য সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। প্রাণিসম্পদ খামার ও সংশ্লিষ্ট শিল্পে বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। প্রাণিসম্পদের শরীর থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন উপাদান ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হাঁস-মুরগির অনেকগুলি জাতই বাংলাদেশে এখন সুপ্রতিষ্ঠিত এবং বিভিন্ন খামারে লাভজনকভাবে পালন করা হচ্ছে। সরকার ও হাঁস-মুরগি ব্যবসায়ীদের গৃহীত সম্প্রসারণ উদ্যোগের ফলে দেশে এই জাতীয় খামার ক্রমাগত বাড়ছে। সরকারি ও বেসরকারি খামার ছাড়াও সামরিক বিভাগের এই জাতীয় কিছু খামার রয়েছে যা সেনাবাহিনীর আংশিক চাহিদা মিটায়।

বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রাণিসম্পদ খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। জিডিপিতে এ খাতের অবদান ১ দশমিক ৮১ শতাংশ, জিডিপতে প্রবৃদ্ধির হার ৩ দশমিক ১৯ শতাংশ, কৃষিজ জিডিপিতে ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ  এবং অর্থমূল্যে প্রাণিসম্পদ জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৯১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা।

পোল্ট্রি শিল্প বর্তমানে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কর্মসংস্থানের খাত, যেখানে প্রায় ৪০,০০০ কোটি টাকার বেশি বেসরকারি বিনিয়োগ রয়েছে। দেশে নিবন্ধিত ৮৫,২২৭টি বাণিজ্যিক এবং প্রায় ১,৯১,০০০টি প্রান্তিক পোল্ট্রি খামার রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৬ কোটি ৬৮ লক্ষ ডিম উৎপাদিত হচ্ছে। যা নিঃসন্দেহে এক বড় সাফল্য।

গোবর প্রাকৃতিক সার ও জ্বালানির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। বছরে প্রায় ৮ কোটি মে টন গোবর পাওয়া যায়। গোবর বায়োগ্যাস তৈরিতেও এখন ব্যবহূত হচ্ছে। এছাড়া গবাদি প্রাণির হাড়, শিঙ, খুর ইত্যাদি দ্রব্যও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। চূর্ণ ও আংশিক চূর্ণ হাড় ইত্যাদি রপ্তানি করে দেশ প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে থাকে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে বিভিন্ন উৎপাদনমুখী প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের ফলে দেশে ডিম, দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নাগরিকদের প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ করছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি প্রান্তিক খামারিদের মাঝে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করছে, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)