শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

SW News24
শুক্রবার ● ৬ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী রেখেছে গাছ
প্রথম পাতা » মুক্তমত » পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী রেখেছে গাছ
৮ বার পঠিত
শুক্রবার ● ৬ জুন ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পৃথিবীকে মানুষের বসবাসের উপযোগী রেখেছে গাছ

বৃক্ষ বা গাছ বহুবর্ষজীবী কাষ্ঠবহুল উদ্ভিদ। বৃক্ষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কারণ এরা ভূমিক্ষয় রোধ করে এবং এদের পত্রপল্লবের নিচে আবহাওয়া-সুরক্ষিত বাস্তুসংস্থান তৈরি করে। বৃক্ষ বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড দূরীকরণ, বাতাসে অক্সিজেন যোগান দেওয়া এবং ভূমি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গাছ মানুষের বন্ধু। গাছ নানাভাবে আমাদের উপকার করে। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, অক্সিজেন, ওষুধ ইত্যাদি আমরা গাছ থেকে পাই। বৃক্ষ ও জলাভূমি কমে যাওয়ায় গরম বাড়ছে। বিভিন্ন গবেষণায় এসেছে যেসব এলাকায় গাছ ও জলাভূমি বেশি, সেখানে গরম কম অনুভূত হয়। যেখানে গাছ ও জলাভূমি কম, সেখানে গরম বেশি লাগে। ঘাস আর লতাগুল্ম ভূপৃষ্ঠের তাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

গাছ শুধু অক্সিজেন সরবরাহ করে না এটি পরিবেশের বিভিন্ন দিকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গাছের পাতাগুলো সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। গাছ ইভাপোট্রান্সপায়ারেশনের (পানি বাষ্প হয়ে বায়ুমণ্ডলে চলে যাওয়ার প্রক্রিয়া) মাধ্যমে ক্ষতিকর বস্তুকণা আটকে দেয়। গাছের কাণ্ডে, পাতায় ও বাকলে ক্ষতিকর পদার্থ জমে বায়ুমণ্ডলকে বিশুদ্ধ রাখে। সবচেয়ে বেশি বায়ু পরিষ্কারক গাছ হচ্ছে মেহগনি। এরপর রয়েছে কালো কড়ই, আম ও জামগাছ। গাছ দূষিত বাতাস থেকে নাইট্রোজেন অক্সাইড, কার্বন ডাই–অক্সাইডসহ ছয় ধরনের পরিবেশদূষণকারী উপাদান শুষে নেয়। আর বিপরীতে গাছ অক্সিজেন জোগায়।

বৃক্ষ, গুল্ম ও বিরুৎ এই তিন ধরনের উদ্ভিদ রয়েছে জগতে। পৃথিবীর বৃহত্তম জীবন্ত গাছ জেনারেল শেরম্যান থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রতম উদ্ভিদ বামন উইলো সব এই বিশাল উদ্ভিদ জগতের অন্তর্ভুক্ত। বৃক্ষ উদ্ভিদের অনেক বর্গ ও গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। বৃক্ষ বিভিন্ন রকম গড়ন প্রকার, পাতার রকমফের এবং আকৃতি, বাকলের বৈশিষ্ট এবং প্রজনন অঙ্গের বৈচিত্র প্রদর্শন করে। উদ্ভিদের বৃক্ষরূপটি পরিবর্তিত পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর প্রক্রিয়ায় উদ্ভব হয়েছে, যা একে সমান্তরাল বিবর্তনের একটি চিরায়ত উদাহরণে পরিণত করেছে। পৃথিবীতে প্রায় ১,০০,০০০ প্রজাতির বৃক্ষ আছে, যা মোট উদ্ভিদ প্রজাতির ২৫%। অধিকাংশ বৃক্ষ প্রজাতি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে জন্মে যার অধিকাংশই এখনো উদ্ভিদবিদরা পর্যবেক্ষণ করতে পারেননি, যার ফলে প্রজাতি বৈশিষ্ট ও সীমা সম্বন্ধে এখনো আমরা খুব অল্পই জানতে পেরেছি।

জাতিসংঘের পরিবেশ কার্যক্রমের বিলিয়ন ট্রি প্রচারের অনুরোধে করা সেই গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, পৃথিবীতে মোট গাছের সংখ্যা তিন ট্রিলিয়ন, অর্থাৎ তিন লাখ কোটির বেশি। এই গাছের প্রায় অর্ধেক আছে গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলে। প্রত্যেক মানুষপ্রতি প্রায় ৪২২টি গাছ আছে।বাংলাদেশে প্রায় ৫ হাজার প্রজাতির গাছ রয়েছে।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৫০ বছর বেঁচে থাকা একটি গাছ বায়ুদূষণ থেকে পরিবেশ রক্ষায় ১০ লাখ টাকা, জীবন রক্ষাকারী অক্সিজেন দেয় ৫ লাখ টাকা, বৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, মাটির ক্ষয়রোধ ও উর্বর শক্তি বৃদ্ধি করে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, বৃক্ষে বসবাসকারী প্রাণীদের খাদ্য ও আশ্রয় দিয়ে বাঁচায় ৫ লাখ টাকা, আসবাবপত্র, জ্বালানি কাঠ ও ফল সরবরাহ করে ৫ লাখ টাকা, বিভিন্ন জীব-জন্তুর খাদ্য জোগান দিয়ে বাঁচায় আরও ৪০ হাজার টাকা। একটি বৃক্ষের আর্থিক সুবিধার মূল্য তাহলে দাঁড়ায় ৩৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট নানা কারণে গাছ ঝুঁকির মুখে পড়েছে। একটি দেশের মোট ভূখণ্ডের কমপক্ষে ২৫ ভাগ বনভূমি প্রয়োজন। বাংলাদেশে সেই তুলনায় অনেক কম। পর্যাপ্ত বনভূমি না থাকায় প্রতিনিয়ত বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। কাবর্ন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ প্রাণী জগতে বেড়েছে। ক্ষতিকর ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, মিথেন ও নাইট্রাস অক্সাইডের পরিমাণ অনেক গুণ বেড়েছে। ওজন স্তরে ফাটল সৃষ্টি হচ্ছে। অ্যাসিড বৃষ্টি ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এন্টার্কটিকার বরফ গলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গাছ হলো আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ। পৃথিবীতে বসবাসরত সমস্ত জীবের জন্য গাছপালা সরবরাহ করে খাদ্য, অক্সিজেন, আশ্রয় এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা করে। প্রাণী জগতের অস্তিত্ব রক্ষায় উদ্ভিদের বিকল্প নেই। গাছ আছে বলেই পৃথিবী আজও বসবাসের যোগ্য। পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে গাছের বিকল্প নেই।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)