শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২

SW News24
বুধবার ● ২৫ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » জেনারেশন গ্রেটেস্ট টু বিটা
প্রথম পাতা » মুক্তমত » জেনারেশন গ্রেটেস্ট টু বিটা
৫০ বার পঠিত
বুধবার ● ২৫ জুন ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

জেনারেশন গ্রেটেস্ট টু বিটা

---প্রকাশ ঘোষ বিধান

জেনারেশন জেড সংক্ষেপে জেন জি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেন-জি শব্দটি খুব বেশি ব্যবহার হচ্ছে। জেন জি এর পূর্ণ রূপ হলো জেনারেশন জেড। ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বেড়ে ওঠা তরুণ প্রজন্মকে জেন-জি বলা হয়ে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতি ও সভ্যতা বিকাশে যুগপৎভাবে বদলেছে মানুষের জীবনধারণ ও দৃষ্টিভঙ্গি। পুরোনো জায়গায় নতুনের স্থলাভিষিক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রগতিশীলতার প্রাণ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। সময়ের এই ধারাকে অব্যাহত রাখার তেমনি এক নিদর্শন জেনারেশন জেড বা জেন-জি।

জেনারেশন শব্দটি দ্বারা সাধারণত একটি নির্দিষ্ট সময়ে জন্ম নেয়া একই বয়সের দল বা একই পূর্বপুরুষ থেকে আগত ব্যক্তিদের বোঝানো হয়। এটিকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে জন্ম নেয়া মানুষের একটি দলকে নির্দেশ করতে ব্যবহার করা হয়, যারা একই রকম অভিজ্ঞতা, মূল্যবোধ এবং সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়। একটি প্রজন্মকে ২০-৩০ বছরের একটি সময়কাল হিসেবে ধরা হয়, যেখানে শিশুরা জন্ম নেয়, বড় হয়, এবং তাদের নিজেদের সন্তান জন্ম দেয়ার পর্যায়ে পৌঁছে। শব্দটি একটি ব্যাপক ধারণা যা সময়ের সাথে সাথে মানুষের জীবন এবং সমাজের পরিবর্তনগুলিকে নির্দেশ করে।

ব্রিটানিকার তথ্য মতে, ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে এবং ২০০০-এর দশকের প্রথম দিকে জন্ম নেওয়া প্রজন্মকে জেনারেশন জেড বলা হয়। মূলত, ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করা প্রজন্মই জেন-জি। আমেরিকার নানা প্রজন্মকে জি টার্ম ব্যবহার করে বুঝানো হয়ে থাকে বর্তমানে যা ছড়িয়ে পড়েছে দুনিয়াব্যপী।

জেন-জি প্রজন্ম বড় হয়েছে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে। হাতের মুঠোয় মোবাইল ও ইন্টারনেট থাকায় সারা দুনিয়া যাদের হাতের মুঠোয়। এই প্রজন্ম ইন্টারনেট ছাড়া তাদের দুনিয়া ভাবতে পারে না। করোনা মহামারীসহ নানা সংকট কাছ থেকে দেখায় জীবনাযাত্রার ব্যয় সংকট দেখেছে যা প্রভাব ফেলেছে তাদের ব্যক্তিত্ব ও মূল্যবোধে। জেন-জি প্রজন্ম অর্থ সাশ্রয় করা শিখছে, তারা ভ্রমণ করতে ভালোবাসে, গেম খেলতে পছন্দ করে, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করতে চায়, নিজেদের নানান কাজ জানান দিতে চায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সারাদিন হাতে ফোন থাকলেও নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে যারা সবসময় সচেতন থাকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে ব্যবহার করে অনেকেই অর্থ আয় করছে এবং খারাপ সময়ে পাশে দাঁড়াচ্ছে দেশের মানুষের।

ফোর্বসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জেন-জি প্রজন্মের ৩৮ শতাংশ দেশ-বিদেশে ঘোরার সুযোগ খোঁজে। এই প্রজন্মের ৭৫ শতাংশ অনলাইনে গেম খেলতে পছন্দ করে। জেন-জি প্রজন্মকে অনেকেই সচেতন ও পরিবেশবাদী হিসেবে চিনে থাকেন, পরিবেশের নানান বিরূপ প্রভাব নিয়ে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সচেতন। এই প্রজন্ম অন্যান্য প্রজন্মের চেয়ে আত্মবিশ্বাসী। নিজেদের বেশিরভাগ কাজই তারা আত্মবিশ্বাস নিয়ে করে।

অন্য পরিসংখ্যান হলো, জেন-জিরা বেড়ে উঠেছে শহর এলাকায়। এদের মাত্র ১৩ শতাংশ গ্রামীণ এলাকায় বেড়ে উঠছে। ২০১৮ সালের এক গবেষণার বরাতে ব্রিটানিকা জানিয়েছে, জেনারেল জেড-এর সবচেয়ে বয়স্ক সদস্যরা বিয়ের ক্ষেত্রে দেরি করেছেন। এদের মাত্র ৪ শতাংশ ১৮ থেকে ২১ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে করছেন।

১৯০১ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত জন্ম নেওয়া মানুষদের গ্রেটেস্ট বা সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম বলে অভিহিত করা হয়। কঠিন সময় পার করার ভেতর দিয়েই একটা মানুষ সত্যিকারভাবে বিকশিত হতে পারে। সেই সময়েই তাঁর ধৈর্য, নিষ্ঠা, মানবিকতার মতো গুণগুলো সবচেয়ে ভালোভাবে বিকশিত হয়। গ্রেটেস্ট জেনারেশন দুটো বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী। তারা যেমন ভাঙতে দেখেছে, তেমনি গড়তেও দেখেছে। ব্যাপক নৃশংসতার পাশাপাশি দেখেছে মানবিকতার সর্বউচ্চ মুহূর্ত। তারা দেখেছে, শিক্ষা নিয়েছে, পরিশ্রম করেছে, গড়েছে আর এসবের ভেতর দিয়ে নিজেদের সেরাটা হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছে। এ প্রজন্ম ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ সালের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় বড় হয়েছে। তখন বিশ্বব্যবস্থা বড় পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছিল। ইউরোপ, আমেরিকার অবস্থা ছিল টালমাটাল। এ প্রজন্ম পরিণত বয়সে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ দেখেছে। তখন মার্কিন পরাশক্তির উত্থান ঘটছিল। কাজেই এ প্রজন্মকে অর্থনৈতিক মন্দা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও সবশেষে ইতিহাসের সবচেয়ে সমৃদ্ধ যুগের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এ প্রজন্ম বিশ্বের ইতিহাসের যেসব পরিবর্তন দেখেছে। ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে বসবাস করার কারণে এ প্রজন্মকে কঠোর পরিশ্রম করে টিকে থাকতে হয়েছে। এ প্রজন্মের অনেকেই মিতব্যয়ী জীবনযাপনে পারদর্শী ছিলেন।  তারা অভাবের মধ্যেও সৃজনশীলতা শিখেছে। সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্মের অনেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলেন। অনেকেই অঙ্গ হারিয়েছেন। সে সময় এ প্রজন্মের জন্য যুদ্ধ ছিল সর্বাত্মক। দেশের জন্য, মঙ্গলের জন্য এ প্রজন্মের মানুষেরা নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিতেও দ্বিধা করেনি। এসব কারণে সামরিক বিশেষজ্ঞরাও এ প্রজন্মকে বিশ্বের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন।

জেনারেশন এক্স আনুমানিক ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত জম্ম নেওয়া জেনারেশন যারা গরুর গাড়ি থেকে সুপার সনিক কনকর্ড জেট দেখেছে। পোস্টকার্ড, খাম, ইনল্যান্ড লেটার থেকে শুরু করে আজকের জিমেইল, ফেসবুক, হোয়াটস্যাপ পর্যন্তও ব্যবহার করছে। যারা টেলিগ্রাম এসেছে শুনলেই  মুখ শুকিয়ে যেতে দেখেছে। যারা পাটিতে, মেঝেতে বা পিঁড়িতে বসে ভাত খেয়েছি আবার ডাইনিং টেবিলে বসেও খাচ্ছে ।ছোটবেলায় বন্ধুদের সাথে কানামাছি, বাঘবন্দি, ডাঙ্গুলি, গোল্লাছুট, মার্বেল খেলেছে, বউলার আঠা দিয়ে কাগজের ঘুড়ি বানিয়ে আকাশে উড়িয়েছে, নাড়া, খড় বিচালির তৈরি বল, জাম্বুরা দিয়ে ফুটবল বানিয়ে খেলেছে। হ্যারিকেন আর কুপি বাতির আলোতে পড়াশুনা করেছে, বেত থেকে শুরু করে পাখার ডাঁটির মার খেয়েছে, খাটের নিচে বা কাঁথার মধ্যে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়েছে দস্যু বনহুর, কুয়াশা, মাসুদ রানা সিরিজ। ফ্যান, এসি, হিটার, ফ্রিজ, গ্যাস, মাইক্রোওভেনের অস্থাবর সুখ ছাড়াই ছোটবেলা কাটিয়েছে। যারা সাইকেলের টায়ার, বেয়ারিং এবং সুপারির খোলা দিয়ে গাড়ি বানিয়ে চালিয়েছে, গুলতি নিয়ে নিরিখ প্র্যাকটিস করে বেড়িয়েছে, দুপুরে একসাথে পুকুরে ঝাঁপিয়ে দাপাদাপি করেছে। যারা প্রতিদিন সূর্য ডোবার আগে বাড়িতে ঢুকেছে। রাস্তাঘাটে স্কুলের স্যারকে দেখামাত্র সেখানেই সাইকেল থেকে নেমে নির্দ্বিধায় সালাম- প্রনাম করেছে। জীবনের চলার স্রোতে তারা হারিয়ে ফেলেছে জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়।

বিভিন্ন জেনারেশনের সময়কাল; গ্রেটেস্ট জেনারেশন আনুমানিক ১৯০১ থেকে ১৯২৭ সাল পর্যন্ত জন্ম নেওয়া সকলেই গ্রেটেস্ট জেনারেশন। সাইলেন্ট জেনারেশন  আনুমানিক ১৯২৮ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জন্ম নেওয়া সকলেই সাইলেন্ট জেনারেশন। বেবি বুমার্স জেনারেশন আনুমানিক ১৯৪৬ থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত জম্ম নেওয়া সকলেই বেবি বুমার্স জেনারেশন। জেনারেশন এক্স আনুমানিক ১৯৬৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত জম্ম নেওয়া সকলেই জেনারেশন এক্স। জেনারেশন ওয়াই বা মিলেনিয়ালস প্রজন্ম  আনুমানিক ১৯৮১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জম্ম নেওয়া সকলেই জেনারেশন ওয়াই। এদের মধ্যে যাদের জন্ম ১৯৯০ সালের ভিতরে তাদের বলা হয় নাইন্টিজ কিডস। জেনারেশন জেড বা জেন-জি ১৯৯৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত জন্ম নেওয় প্রজন্মই জেন-জি। এদের বয়স ১২-২৭ বছর। জেনারেশন আলফা আনুমানিক ২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জন্ম নেওয়া সকলেই জেনারেশন আলফা। ২০২৫ থেকে ২০৩৯-এর মধ্যে যে সব শিশুর জন্ম হবে, তারা সকলেই জেন বিটা। ২০৩৫ সালের বিশ্ব জনসংখ্যা ১৬ শতাংশ হবে এই প্রজন্ম, এমনটাই মনে করছেন গবেষক মার্ক ম্যাকক্রিন্ডেল। তিনি নামকরণ করেছিলেন আলফা প্রজন্মের। এই নতুন প্রজন্মের গোটা জীবনটাই প্রযুক্তি দিয়ে মোড়া হবে। ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি স্তরে ঢুকে পড়বে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। বিটা এই প্রজন্মই বর্তমানে চলমান রয়েছে।

লেখক; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)