বুধবার ● ৩০ আগস্ট ২০১৭
প্রথম পাতা » বিবিধ » খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক ২ লেনে উন্নীত ঃ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরন
খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক ২ লেনে উন্নীত ঃ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরন
অরুন দেবনাথ, ডুমুরিয়া
দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন এবার পুরণ হতে যাচ্ছে। অতি জনগুরুত্বপূর্ন খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কটি দুই লেনে উন্নিত হচ্ছে। জিরোপয়েন্ট হতে আঠারোমাইল পর্যন্ত ২৮ কিঃমিঃ খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কটি পরিপূর্ণভাবে প্রশস্তকরণের মধ্যদিয়ে দুই লেনে এবং শহর কেন্দ্রীক ময়লাপোতা থেকে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত ৩ কিঃমিঃ সড়কটি চার লেনে উন্নিতকরণের পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে কাজ শুরু হবে। সড়কটি উন্নীত হলে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরের সাথে খুলনাসহ সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ হবে। এতে গতি ফিরে পাবে ভোমরা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম। পাশাপাশি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানও বদলে যাবে।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ ও এলকাবাসী সুত্রে জানা যায়, খুলনা-চুকনগর ও সাতক্ষীরা আঞ্চলিক মহাসড়কটি ২ লেনে উন্নীতকরণ হতে যাচ্ছে। এ সড়কটি জাতীয় মহাসড়কের আওতায় না আসায় চার লেনে উন্নিতকরণ হচ্ছে না। ফলে দক্ষিন-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন ভেস্তে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু চালু হলে ভোমরা স্থল বন্দরের চাপ কয়েকগুন বেড়ে যাবে এবং ওই সড়কের উপর সবচেয়ে বেশি চাপ পড়বে। এতে যানজটসহ সড়ক দুর্ঘটনা মাত্রা আরো বেড়ে যাবে বলে বিশেষাজ্ঞদের ধারনা। সম্প্রতি সড়কটি পরিপূর্ণভাবে প্রসস্তকরণের মধ্যদিয়ে দুই লেনে উন্নিত হতে যাচ্ছে। চলতি অর্থ বছরে ১৮ ফুট বিশিষ্ট মুল সড়কসহ দুই পাশে ৬ফুট, ৬ফুট করে ১২ ফুট প্রশস্ত করণ বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। যাহা পরিপূর্ণ ২ লেন ( অর্থাৎ ৩০ ফুট) বিশিষ্ট একটি আঞ্চলিক মহাসড়ক। ইতিমধ্যে সড়কটির জিরোপয়েন্ট থেকে আঠারোমাইল পর্যন্ত দু’টি ভাগে মোট ২৮কিঃমিঃ দৈর্ঘ এ সড়কটি নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৪ কোটি টাকা। যাহা গত ২৮ আগস্ট সোমবার ওই কাজের টেন্ডার ড্রপিং হয়েছে বলে জানা গেছে। এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কটি জাতীয় মহাসড়কের আওতায় ৪ লেন হবে। এতে সড়ক দুর্ঘটনার হাত থেকে মানুষ বাঁচবে। যান চলাচলের চাপে এবং রাস্তাটি বর্তমানে ভেঙ্গে খানাখন্দ হওয়াতে মৃত্যুপুরিতে পরিনত হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাস্তার ফুটপাত দখলে থাকা এক ব্যাক্তি বলেন, রাস্তা ৪ লেন হবে শুনে সরকারের বিনা নোটিশে আমাদের দোকানঘর ভেঙ্গে সরিয়ে এনেছি। চুকনগর বাজারের বড় ব্যবসায়ী কৃষ্ণনন্দী জানান, দীর্ঘদিন রাস্তাটা জরাজীর্ন অবস্থায় চলে আসছে। এলাকার মানুষের দাবী ছিল সড়কটি চার লেন হওয়ার। কিন্তু সরকার ইতোমধ্যে ২ লেনে উন্নীতকরণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। সেটা হলেও অপেক্ষাকৃত যানজট কমবে। তবে ধারণ ক্ষমতা বেশি হওয়া দরকার। কারন সড়কে অত্যান্ত ভারী যানবাহনের চাপ।
ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খান আলী মুনসুর বলেন, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে যানচলাচলের অতিরিক্ত চাপ। এরপর পদ্মা সেতু চালু হলে তো রাস্তায় যানজট আরো বাড়বে। জনগুরুত্বপুর্ন সড়কটি আরো প্রসস্তকরণসহ কমপক্ষে ৫০ মেঃটন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন হওয়া দরকার।
এ প্রসঙ্গে ভোমরা স্থল বন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম জানান, পদ্মা সেতু চালু হলে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থল বন্দরের সাথে খুলনাসহ সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব সহজ হবে। বিশেষ করে ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী যানবাহনগুলো (অর্থাৎ ১০ চাকা ও ১৪ চাকার ট্রাক) ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করবে। সেক্ষেত্রে সড়কটিতে ব্যাপক চাপ পড়বে। তিনি বলেন, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কটি জাতীয় সড়কের আওতায় এনে চার লেনে উন্নীতকরণের একান্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি রোডের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। অন্তত কমপক্ষে ৫০ মেট্রিক টন ক্ষমতা সম্পন্ন। ভোমরা বন্দর দিয়ে বিশেষ করে পাথর ভর্তি যেসব ট্রাকগুলো চলাচল করে তাতে ৫০/৬০ মেট্রিক টন লোড থাকে।
এ প্রসঙ্গে সড়ক ও জনপদ বিভাগ খুলনা জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোঃ রুহুল আমীন বলেন, শুধুমাত্র জাতীয় মহাসড়কগুলো চার লেন করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে আঞ্চলিক সড়কগুলোও চার লেনে উন্নীত হবে। খুলনা-সাতক্ষীরা আঞ্চলিক সড়কটি’র জিরোপয়েন্ট হতে চুকনগর ভায়া আঠারোমাইল পর্যন্ত (২৮কিঃমিঃ) পরিপুর্নভাবে দুই লেন উন্নীতকরণ হচ্ছে। যার ধারণ ক্ষমতা থাকবে ১৫ থেকে ২০ মেট্রিক টন। কিন্তু গাড়ি চালকরা সড়ক আইন অমান্য করে অতিরিক্ত লোড নিয়ে চলাচল করায় রাস্তার স্থায়িত্ব কমে যায়। সঠিক নিয়মে চললে রাস্তাটি ১৫/২০ বছর স্থায়িত্ব থাকবে। তিনি বলেন, একই সাথে ওই সড়কের শহর কেন্দ্রীক ময়লাপোতা থেকে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত চার লেনে উন্নীতকরণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। গত ২৮ আগস্ট একাজের টেন্ডার (সোমবার) ড্রপিং হয়েছে। এখনো রিসিভ করা হয়নি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহের দিকে কাজ শুরু হবে।
এ প্রসঙ্গে খুলনা-৫ আসনের সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ এমপি বলেন, গত ২ বছর আগে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কটি উন্নীতকরণের জন্য আমি ডিও-লেটার দিয়েছিলাম। যদিও সড়কটি ২ লেনে উন্নীত হচ্ছে। পর্যাক্রমে আরো প্রশস্ত হবে এবং জাতীয় মহাসড়কে উন্নীত হবে। পরবর্তিতে আমি সড়কটি ৪ লেনে উন্নীতকরণের জন্য দাবী রাখবো। যেহেতু সড়কটি ভোমরা স্থল বন্দরের সাথে সরাসরিভাবে যুক্ত হবে। এছাড়া লোড ক্যাপাসিটি যাতে পর্যাপ্ত থাকে সে দাবীও রাখবো।