সোমবার ● ১১ নভেম্বর ২০১৯
প্রথম পাতা » সংস্কৃতি ও বিনোদন » সুন্দরবনে দুবলা চর ও উপকূলের বিভিন্ন স্থানে রাস উৎসব শুরু
সুন্দরবনে দুবলা চর ও উপকূলের বিভিন্ন স্থানে রাস উৎসব শুরু
প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছা ॥
১২ নভেম্বর রাস উৎসব শুরু। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে দুবলার চরে রাস উৎসব স্থগিত হলেও পূজা অর্চনা অনুষ্ঠিত হবে। দুবলার চর সহ উপকূলের বিভিন্ন উপজেলায় রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। শুক্লপক্ষের চাঁদের আলোয় শোভিত নিরব সুন্দরবন চরাঞ্চল সরব হয়ে উঠবে পূণ্যার্থীদের পূজা ও আরাধনায়। দূর্গম সাগর-প্রকৃতির অভাবমায় সৌন্দর্যের মাঝে পূর্ণ্য অর্জন আর সঞ্চার যেন মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। কার্তিক-অগ্রহায়ণে শুক্লপক্ষের ভরাপূর্ণিমা সাগর উছলে ওঠে। চাঁদের আলোয় সাগর-দুহিতা দুবলার চরে আলোর কোল মেতে ওঠে রাস উৎসবে।
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ প্রাচীন সমুদ্র রাসমেলা সুন্দরবনের সাগরদুহিতা দুবলারচরে অনুষ্ঠিত হয়। রাস উৎসব নিয়ে নানা মত রয়েছে। ধারণা করা হয় ১৯২৩ সালে ঠাকুর হরিচাঁদের অনুসরী হরি ভজন নামে এক হিন্দু সাধু এই উৎসব শুরু করেছিল। এই সাধু ২৪ বছরও বেশি সময় ধরে সুন্দরবনের গাছের ফল-মূল খেয়ে জবিন-যাপন করতেন। তিনি হরিচাঁদ ঠাকুরের স্বপ্নাদৃষ্টি হয়ে পূজা-পর্বনাদি ও অনুষ্ঠান শুরু করেন দুবলার চরে। তারপর থেকে মেলা বসেছে লোকালয়ে এই মেলা নীল কোমল মেলা নামে পরিচিত। অন্যমত হিন্দু ধর্মালম্বীদের অবতার শ্রীকৃষ্ণ কোন এক পূর্ণিমা তিথিতে পাপমোচন এবং পূর্ণলাভে গঙ্গাøানের স্বপ্নাদেশ পান। সেই থেকে শুরু হয় রাস উৎসব। আবার কারও কারও মতে শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমা রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সাথে রাসনৃত্যে মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ।
বঙ্গোপসাগরের মোহনায় সুন্দরবনের দুবলাচরে ও আলোর কোলে রাস পুর্ণিমায় রাধাকৃষ্ণের পুজা, পুর্ণ্যøান অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষ্যে রাস উৎসবে পুর্ণিমা তিথিতে চরে নির্মিত মন্দিরে নামজ্ঞোগ্য, রাধাকৃষ্ণ, কমল কামিনি ও বনবিবির পূজা অনুষ্ঠিত হবে। অটুট বিশ্বাস আর পুর্ণ ভক্তিতে কমল কামিনীর দর্শন মেলে। পুণ্যার্থীরা কমল কামিনী দর্শনের আশায় নিলকোমলের সাগর মোহনায় সাগর ঢেউঢেয় øান করে। রাস পুর্ণিমায় প্রথম আসা সমুদ্র ঢেউকে নিলকোমলের ঢেউ বলা হয়। এই প্রথম ঢেউয়ে পুর্ণাথিরা তাদের হাতে ধরে রাখা প্রসাদ ঢেউয়ে উৎসর্গ করে øান সেরে শেষ করে। এ বছর ১৩৬ তম রাস উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
প্রকৃতির অকৃপণ হাতের সৃষ্টি লোনা জলের সাগরের এই রাসমেলায় দূর-র্দূরান্তে তীর্থযাত্রীদের ঢল নামে। ভয়ঙ্কর সুন্দর এই সুন্দরবন। যেখানে একদিকে অ্যাডভেঞ্চার, অন্যদিকে ভয় আর শিহরণ। জলে কুমির, আর ডাঙ্গায় বাঘ। বনের প্রতিটি মূহুর্ত যেন রহস্য আর রোমাঞ্চকের এই মেলায় দর্শনার্থীরা প্রাকৃতিক সৌন্দার্যের অভাবনীয় রূপ উপভোগ করে। প্রতিবছর উৎসবের দিনগুলোতে নিরব সুন্দরবন যেন লোকালয় হয়ে জেগে ওঠে।
হিন্দুধর্মাবলম্বী লোকেরা পুর্ণিমার প্রথম প্রহরে সাগর জলে¯œান করে মনোবাসনা পুর্ণ ও পাপমোচন হবে এ বিশ্বাস নিয়ে রাসমেলায় যোগদিলেও সময়ের ব্যবধানে এ উৎসব নানা ধর্ম ও বর্ণের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এ সময় অসংখ্যক বিদেশী পর্যটকদেরও আগমন ঘটে। আবাল বৃদ্ধ বনিতা, নির্বিশেষে সাগর চর এলাকায় উপস্থিতিতে কোলাহল, পদচালণায় মুখরিত হয়ে উঠবে। প্রতি বছর রাস উৎসব মানুষের মিলন মেলায় রূপ নেয়। সাগরপাড়ে দুবলা ও আলোরকোল চর সমুহে অনুষ্ঠিত রাস উৎসব সুন্দরবনের ঐতিহ্যকে আরো সমৃদ্ধ করেছে।