শনিবার ● ৪ ডিসেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » অপরাধ » লাঞ্ছনায় কুয়েট শিক্ষকের মৃত্যু : ৯ শিক্ষার্থী বহিস্কার
লাঞ্ছনায় কুয়েট শিক্ষকের মৃত্যু : ৯ শিক্ষার্থী বহিস্কার
এস ডব্লিউ; খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এর ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের প্রফেসর ড. মোঃ সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ৯ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিস্কার করা হয়েছে।গত ০৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ৭৬তম (জরুরী) সভায় তাদের বহিস্কার করা হয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আজ বেলা ৩ তার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
বহিস্কৃতরা হলেন,
(১) সাদমান নাহিয়ান সেজান, সিএসই বিভাগ, রোল-১৩০৭০২৪
(২) মোঃ তাহামিদুল হক ইশরাক, সিই বিভাগ, রোল-১৫০১০৯০
(৩) মোঃ সাদমান সাকিব, এলই বিভাগ, রোল-১৫১৯০৩৩
(৪) আ. স. ম. রাগিব আহসান মুন্না, এলই বিভাগ, রোল-১৫১৯০৪৮
(৫) মাহমুদুল হাসান, সিই বিভাগ, রোল-১৬০১০২৯
(৬) মোহাম্মাদ কামরুজ্জামান, এমই বিভাগ, রোল-১৬০৫০৩৯
(৭) মোঃ রিয়াজ খান নিলয়, সিএসই বিভাগ, রোল-১৬০৭০৭৫
(৮) ফয়সাল আহমেদ রিফাত, এমই বিভাগ, রোল-১৬০৫০৯৩
(৯) মোঃ নাইমুর রহমান অন্তু, এমএসই বিভাগ, রোল-১৬২৭০১০
বিশ্বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিসিটিভির ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্যাদি পর্যালোচনা করে বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা প্রতীয়মান হওয়ায় ছাত্রশৃংখলা ও আচরণবিধির আলোকে অসদাচরণ এর আওতায় সিন্ডিকেটর সভায় ৯ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
একই সিন্ডিকেটের সভায়, প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিলের জন্য বলা হয়েছে।কমিটিতে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মহিউদ্দিন আহমেদকে সভাপতি ও গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আলহাজ উদ্দিনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। এ ছাড়া সদস্য করা হয়েছে কুয়েটের অধ্যাপক ড. খন্দকার মাহবুব, খুলনা জেলা প্রশাসকের একজন প্রতিনিধি ও খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের একজন প্রতিনিধিকে।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (৩০ নভেম্বর) দুপুর ৩ টার দিকে হার্ট অ্যাটাকে মারা যান কুয়েট শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. সেলিম হোসেন। তিনি কুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রফেসর ও লালন শাহ হলের প্রভোষ্ট ছিলেন।জানা গেছে, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন করে রাজনৈতিক উত্তেজনা শুরু হয়েছে। বর্তমান ছাত্রলীগ সভাপতি সরকারি চাকুরি পাওয়ার পর পরই নতুন কমিটি আসার প্রাকমুহুর্তে সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ভাগ হয়ে পড়েছে কয়েকটি উপদলে। এর ভেতর একটি প্রভাবশালী উপদল বর্তমান কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।
সম্প্রতি কুয়েটের লালন শাহ হলে ছাত্র আবাসিক হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য-ব্যবস্থাপক ( ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে, সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান প্যানেলের বিরুদ্ধে নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রভাবিত করার প্রচেষ্টার অভিযোগ ওঠে।
ওই প্যানেলের সদস্যরা, হলের প্রভোষ্ট ড. সেলিম হোসেনকে নিয়মিত হুমকি দিয়ে আসছিলেন, তাদের মনোনীত প্রার্থীকে নির্বাচন করার জন্য। তারই ধারাবাহিকতায়, আজ দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগের একটি ক্যাডার গ্রুপ ক্যাম্পাসের রাস্তা হতে ড. সেলিম হোসেনকে জেরা করা শুরু করে। পরবর্তীতে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষ ( তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) এ প্রবেশ করে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধাঘন্টা ওই শিক্ষকের সাথে রুদ্ধদার বৈঠক করে। এতে তিনি মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন ও অসুস্থ হয়ে যান।
পরবর্তীতে, শিক্ষক ড. সেলিম হোসেন দুপুরে খাবারের উদ্দেশ্যে ক্যাম্পাস নিকটস্থ বাসায় যাওয়ার পর ২ টা ৩০ মিনিটের এ তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। পরে, দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে, কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ছাত্রদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ড. সেলিম একজন অত্যন্ত সজ্জ্বন সৎ মেধাবী শিক্ষক। ছাত্রবান্ধব হিসেবে তার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে৷ ব্যক্তিজীবনে অত্যন্ত অল্প বয়সে তিনি দেশের বাইরে থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে ২০২০ সালে অধ্যাপক পদোন্নতি পান৷ কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিলোনা।
এ বিষয়ে কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান বারবার দাবী তুলেছিলেন, তদন্ত না করে যেন কোন শিক্ষার্থীদের বহিস্কার না করা হয়।