শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

SW News24
রবিবার ● ৫ জুন ২০১৬
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা এম,এ গফুর
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা এম,এ গফুর
৫৪৫ বার পঠিত
রবিবার ● ৫ জুন ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

ভাষা সৈনিক ও মুক্তিযোদ্ধা এম,এ গফুর

---

॥ প্রকাশ ঘোষ বিধান ॥

আজ ভাষা সৈনিক এমএ গফুরের ৪৪তম মৃত্যু বার্ষিকী।  ১৯২৮ সালে ৯ মে কয়রা উপজেলার হরিনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর খুলনা জেলায় দু’জন মাত্র জনপ্রতিনিধি প্রত্যক্ষ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। প্রথমে যার নাম নিতে হয় পাইকগাছা ও আশাশুনি থানার এমএনএ এম,এ গফুর। ১৯৭১ সালের প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা সরকারকে নগদ ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দান করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এম,এ গফুর। একাধারে তিনি ছিলেন, ভাষা সৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, সমাজসেবক।

পিতা জনাব আলী সানার ঘরে বাংলা ১৯২৮ সালের ৯ মে জন্ম নেন এই দেশ বরেণ্য নেতা এম,এ গফুর। মাতা সোনাবান বিবি অতি কষ্টে লালন পালন করে গড়ে তোলেন এই শিশুকে। মৌখালী খাসমহল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু। এরপর স্থানীয় বিভিন্ন বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করে ১৯৪৪ সালে আশাশুনির বুধহাটা স্কুল থেকে এন্ট্রান্স পাশ করেন। ভর্তি হন খুলনা বি.এল কলেজে। যোগ দেন নয়া সাংস্কৃতিক সংসদ সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। রাজনৈতিক দল গণতন্ত্রী দলের খুলনা জেলা সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত হন। শুরু হয় ভাষা আন্দোলন। এম,এ গফুর ভাষা সংগ্রাম কমিটির খুলনা জেলা আহবায়কের দায়িত্ব নিয়ে ছাত্র ও যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। পাল্টে যায় তার রাজনৈতিক জীবনের প্রেক্ষাপট। দ্রুত তিনি চলে আসেন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃত্বে। ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠিত হলে তিনি জেলা সম্পাদের দায়িত্ব পান এবং প্রবল গতিতে রাজনৈতিক অঙ্গন সরগরম করে রাখেন। ১৯৬৯ এর গণআন্দোলনে এম,এ গফুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে খুলনা ছাত্র জনতা কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন। নজর কেড়ে নেয় তৎকালীন বাঙ্গালীয় ধারক বাহক ও পথ প্রদর্শক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের।

১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক সরকার নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আশির্বাদ পুষ্ট হয়ে পাইকগাছা ও আশাশুনি হতে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে এম,এ গফুর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বিপ্রার্থী ছিলেন মুসলিমলীগের প্রভাবশালীনেতা খান এ সবুর। বাংলাদেশের পাঁচটি আসন মুসলিমলীগের  হিসাব থাকলেও খান এ সবুর ছিল জয়ের তালিকায়। কিন্তু প্রেক্ষাপট পাল্টে “খাবো দাবো সবুরের, ভোট দিব গফুরের” এই শ্লোগানে মুখরিত করে অভাবনীয় জয় এনে দিল এম,এ গফুর। অকল্পনীয়ভাবে এতদাঞ্চলের মানুষ গফুরকে জয়ী করে এমএনএ পদে বসালেন। তিনি নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নে মনোনিবেশ করেন। শুরু করেন বেড়িবাঁধ, খাল কাটাসহ রাস্তাঘাটের উন্নয়নমূলক কাজ। এরই মধ্যে স্বাধীনতাযুদ্ধ এবং দেশ স্বাধীন। তিনি স্বাধীনতাযুদ্ধের একজন অন্যতম সংগঠক ছিলেন। এমএনএ পদে থাকাকালীন ১৯৭২ সালের ২২ ফেব্র“য়ারী তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান পাইকগাছার আলমতলা নামক স্থানে আসেন বেড়িবাঁধের উদ্বোধন করতে। সেখানে তিনি এম,এ গফুরকে মন্ত্রীত্বের মত লোভনীয় প্রস্তাব দিলে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, অবহেলিত খুলনার এলাকার উন্নয়নের গতি ধারা অব্যহত রাখার কথা বলেন। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি কুচক্রী মহল ১৯৭২ সালের ৬ জুন এম,এ গফুর নদী পথে নৌকাযোগে বিভিন্ন খালের বাঁধ ও বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করে তের আলিয়া নদীর বাঁধ দেখে সন্ধ্যায় পাইকগাছায় উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পাইকগাছার সাহাপাড়া নামকস্থানে পৌছালে পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা গুলিবর্ষন করে। তাদের বুলেটের আঘাতে এম,এ গফুর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। একই সাথে তার সঙ্গী চাঁদখালীর রিয়াজউদ্দীন ঢালী ও হরিনগহরের কামাল হোসেনেরও মৃত্যু হয়। এম,এ গফুরের স্ত্রী লায়লা গফুর স্বামী হত্যার বিচার না পেয়ে তিনি ধুকে ধুকে মৃত্যুবরণ করেছেন। পাইকগাছা-আশাশুনির মানুষ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই মহান নেতার মৃত্যুর খবরে। আজও এই কলঙ্ক বয়ে বেড়াতে হচ্ছে এই জনপদে।

এ ঘটনায় ঐ সময় করা মামলায় ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করে বলে জানা যায়। মামলার কোন অগ্রগতি না হওয়ায় মামলাটি হেমাগারে চলে যায়। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও এই হত্যার বিচার হয়নি। জাতির জনকের এত নিকটতম শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার হত্যার বিচার দীর্ঘ ৪৪ বছরে না হওয়ায় হতাশা বিরাজ করছেন দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের মাঝে। সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করছেন। এলাকাবাসী মামলাটি পুনঃজীবিত করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা হোক। গফুর হত্যার বিচার না হলে দক্ষিণ অঞ্চল কলঙ্কমুক্ত হবে না বলে বিজ্ঞজনেরা অভিমত দিয়েছেন। তার প্রতি রইল আমাদের গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী। আমরা তাকে আজীবন স্মরণ করব বিনম্র শ্রদ্ধার সাথে।

লেখকঃ সাংবাদিক





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)