শিরোনাম:
পাইকগাছা, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১

SW News24
বুধবার ● ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অতিথি পাখির গুরুত্ব অপরিসিম
প্রথম পাতা » উপ-সম্পাদকীয় » পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অতিথি পাখির গুরুত্ব অপরিসিম
২২০৮ বার পঠিত
বুধবার ● ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অতিথি পাখির গুরুত্ব অপরিসিম

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান

প্রতি বছর শীতকালে আমাদের দেশে অতিথি পাখি আসছে। শৈতপ্রবাহ, খাদ্যভাব, আশ্রয় সংকট ইত্যাদি দুঃসহ পরিস্থিতিতে এসব পাখি হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে উপযুক্ত আশ্রায় ও খাদ্যভান্ডার খুজে নেয়। শীত প্রধান অঞ্চল আগস্ট পরবর্তী সময়ে ক্রমশ শীতের প্রচন্ডতায় বরফে ঢেকে যায়। আকাশ থাকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা। তীব্র শৈতপ্রবাহের কারণে পাখিদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এসব পাখির একটা বড় অংশ আমাদের দেশে আসে। আমরা তাদের অতিথি পাখি বলে ডাকি।

আমাদের দেশের কিছু সংখ্যক মানুষ অতিথি পাখির প্রতি সহানুভূতি প্রবণ আচরণ করে না। শিকারীরা অতিথি পাখি মারার জন্য ওত পেতে বসে থাকে। আইনের ফাঁক-ফোকর, নানা ছল-চাতুরি করে অতিথি পাখি শিকার করছে। বিষটোপ, ফাঁদ, জাল, ইয়ারগান এমনকি বন্দুক দিয়েও শিকারীরা পাথি নিধন করছে। আর পাখির মাংশে রসনাতৃপ্ত করে তাদের লোভ মিটায়। তাদের অনুভূতির যেন শুধুই ভোগের লালসা। অতিথি পাখির আগমনের শুরু থেকে লোভী মানুষগুলো তৎপর থাকে পাখি নিধনষজ্ঞে। অতিথির আগমনে সবাই আনন্দে উৎসুক থাকে। অতিথিকে দেওয়া হয় আলাদা মর্যাদা। আর আমাদের দেশে অতিথি পাখির আগমনে কিছু লোক পাখি শিকারের পায়তারায় লিপ্ত থাকে। যা আমাদের জন্য মটেই কাম্য নহে। পাখির আগমন ও বিচারনের কাহিনী জানলে কোন বিবেকবান মানুষ শিকারের কথা ভাবতেও পারবে না।

প্রকৃতির বেরী অবস্থা থেকে জীবনরক্ষার তাগিদে এসব পাখি দেশান্তরী হতে বাধ্য হয়। এ অতিথি পাখির কেউ কেউ আমাদের দেশে আসে পৃথিবীর অর্ধেক পরিধি পেরিয়ে। এরা আসে সুমেরু অঞ্চল, উত্তর ইউরোপ, উত্তর ও মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের মালভূমি, তিব্বত উপত্যকা, হিমলয় অঞ্চল, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ থেকে। ঝড়-ঝঞ্চা, কুয়াশা-বৃষ্টিসহ বিরুপ আবহাওয়া উপেক্ষা করে প্রতি বছরই অতিথি পাখিরা উড়ে আসে আমাদের দেশে। এদের পাড়ি দিতে হয় মহাসমুদ্র, বিশাল মরুভূমি আর সুউচ্চ পর্বতমালা। এসব পাখিদের অধিকাংশ ৩০ থেকে ৩৫ হাজার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে আমাদের দেশে আসে। চলার সময় এরা ৫ থেকে ১২ কিলোমিটার ওপর দিয়ে উড়ে যায়। এদের গতিবেগ ঘন্টায় ৩০ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত হয়। এসব পাখি একটানা এক হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে পারে। এরা দল বেধে চলে। এসব পাখির ভেতর দিবাচর ও নিশাচর উভয় শ্রেণির রয়েছে।

আমাদের দেশে শীত কালে অতিথি পাখিরা অধিক সংখ্যায় আসে। বর্ষা ও গ্রীষ্ণ ঋতুতেও বেশ কয়েক প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে আসে। পাখি বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে ৬০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এর মধ্যে জলচর শ্রেণির পাখির সংখ্যা প্রায় দেড় শত। শীতকালীন অতিথি পাখিসহ অতিথি পাখির সংখ্যা প্রায় ২০০। এর মধ্যে ২০ প্রজাতির হাঁস পাখি রয়েছে। বাংলাদেশে নিয়মিত যে সব পাখি আসছে সেগুলো হলো, লেনজা হাঁস, চখা, কমনশেল ডাক, ওজিয়ন, মানিক জোড়, গাংকবুতর, বনেনি, নারুন্দি, এবোটিস øাইপ, কাদাখোচা, গিরিয়া, লালশির, গারওয়াল, পিয়ংচিনা, ভেলোপাখি, ল্যাভি, বনহুর, লাইরাল, কসাই, হুদহুদ, আবাবিল, বুবি, টিটি, সাবস, টার্ণ, শ্লোভয়, পেট্রেল, বাজ, ঈগল, চিল, ভুবনচিল, ব্রাউন শ্রহিক, গাংচিল, রায়ুনিয়া, নাইরাব, ফ্লাইকেচার, পাণ্ডামুরগি, লালবুক, রাজসরালি, পাতিসরালি, বালিহাঁস, গিরিয়াহাঁস, তিলিহাঁস, পুটকি, নীলকণ্ঠ, বৌরী, চখাচখি, চটক, খনঞ্জন, বাদামি কসাই এবং কয়েক প্রজাতির ফ্লাইকেচার, ওয়ারলার ও ব্যাবলার গোত্রসহ আরও অনেক প্রজাতির। আমাদের দেশে শীতকালীন অতিথি পাখিরা সাধারণত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস থেকে আসতে শুরু করে এবং মার্চ-এপ্রিল মাসে ফিরে যেতে থাকে। অতিথি পাখি ৭-৮ মাস আমাদের দেশের জলাভূমি, পাহাড় ও বনাঞ্চলে বিচারন করে।

অতিথি পাখির এক বিশাল সংখ্যক কিট-পতঙ্গ খেয়ে জীবন ধারণ করে। এসব পাখিরা বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসলকে রোগ বালাই মুক্ত রাখে। এক শ্রেণির হাঁসজাতীয় পাখি আছে, যারা শুধু ক্ষেতের আগাছার বীজ খেয়ে জীবন ধারণ করে। এর ফলে প্রকৃতি গতভাবে জমির আগাছা দমন হয়। আবার কিছু পাখি ইদুর খেয়ে শস্য রক্ষায় সাহায্য করে। আর কিছু পাখি মাছ খেয়ে জীবন ধারণ করে। পাখির বিষ্ঠা মাটিতে জমা হয়ে মাটিকে ফসফরাস ও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ করে। পাখি মানব জাতির জন্য অমুল্য সম্পদ। পরিবেশের ভারসম্য রক্ষায় পাখির গুরুত্ব অপরিসিম। পাখির অপরূপ সৌন্দর্য মানুষকে শুধু মনোমুগ্ধ করেনা মানব জাতির অপরিসিম উপকারও করে। আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ পাখির জীবন সুরক্ষা খুবই জরুরী। অতিথি পাখির প্রতি আমাদের সহানুভূতি প্রবণ হতে হবে। কেহ যেন পাখি শিকার না করে, তার জন্য  আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। এর পাশাপাশি সবাইকে পাখি সংরক্ষণে ঐক্যবন্ধ ভাবে কাজ করতে হবে।

লেখকঃ সাংবাদিক





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)