শিরোনাম:
পাইকগাছা, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ন ১৪৩২

SW News24
মঙ্গলবার ● ২৮ জানুয়ারী ২০২০
প্রথম পাতা » উপকূল » প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কাঁকড়া আহরণ
প্রথম পাতা » উপকূল » প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কাঁকড়া আহরণ
৮৭১ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ২৮ জানুয়ারী ২০২০
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কাঁকড়া আহরণ

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান ॥

প্রজনন মৌসুমে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সুন্দরবন ও বন সংলগ্ন নদ-নদীতে প্রজনন মৌসুমে ডিমওয়ালা কাঁকড়া শিকার অব্যাহত রয়েছে। প্রতিবছর ১ জানুয়ারী থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত সুন্দরবনে সব ধরণের কাঁকড়া আহরণ. মজুদ, বিক্রি ও পরিবহন পুরোপুরি নিষিদ্ধ। তবে ২ মাস কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ থাকলেও সুন্দরবন বন বিভাগ মাছ ধরা পাস পার্মিট বন্ধ না করার সুযোগ নিয়ে জেলেরা অবৈধভাবে কাঁকড়া আহরণ করছে। প্রতিনিয়ত এই মানগ্রোভ বন থেকে কাঁকড়া আহরণ করা হচ্ছে। সুন্দরবন হচ্ছে শিলা কাঁকড়ার অন্যতম প্রজনন ক্ষেত্র। এই বন থেকে ছোট কাঁকড়া আহরণ করে তা কাঁকড়া হ্যাচারীতে বড় করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। প্রজননকালীন সময়ে এভাবে কাঁকড়া শিকার  চলতে থাকলে কাঁকড়ার রেনু সংকট সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে অর্থনৈতিক ভাবে উজ্বল সম্ভাবনায় মৎস্য সম্পদ কাঁকড়া অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন মৎস্য বিশেষজ্ঞরা।

জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি এই দুই মাস কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুম। এসময় সুন্দরবনের লোনা পানিতে কাঁকড়া ডিম ছাড়ে। তবে মাঘ মাসের প্রথম আমবস্য বা পূর্ণিমায় সুন্দরবনের শিলা কাঁকড়া সব থেকে বেশী ডিম  ছেড়ে থাকে। ডিম ছাড়ার সময় নদ-নদী ও খালের কুল দিয়ে বিচারণ করে ডিমওয়ালা কাঁকড়া। এসময় ডিমওয়ালা কাঁকড়া কিছুটা শান্ত ও স্থির থাকে। সুন্দরবন ও উপকুল সংলগ্ন নদনদী খালে বন বিভাগের চোখ ফাকি দিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ ডিম ওয়ালা কাঁকড়া ধরা হচ্ছে। ডিম ছাড়ার মৌসুমে অবাধে কাঁকড়া ধরায় কাঁকড়ার প্রজনন ও উৎপাদন আশংখাজনক হারে কমে যাওয়ায় ধারণা করছে বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, ডিসেম্বর থেকে কাঁকড়ার ডিম হওয়া শুরু করে এবং জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী মাস কাঁকড়ার ডিম ছাড়া শুরু করে। তাই প্রজনন মৌসুমে সরকারীভাবে কাঁকড়া ধরার উপর এই ২ মাস নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তার পরেও বন বিভাগের নির্দেশ অমান্য করে সুন্দরবন এলাকায় সারা বছরের মত ব্যাপক হারে কাঁকড়া ধরা অব্যাহত রয়েছে। শীত মৌসুমে কাঁকড়ার ডিম হওয়ায় কাঁকড়া খেতে খুব সুস্বাদু হয়। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁকড়ার চাহিদা ও দাম বেশি থাকায় জেলেরা মাছ ধরার পাস নিয়ে বনে ঢুকে কাঁকড়া শিকার করছে।

উপকূল এলাকার মৎস্য লীজ ঘের গুলিতে প্রচুর পরিমাণ কাঁকড়া পাওয়া যায়। তবে এ সময় মৎস্য লীজ ঘের গুলি আগামী মৌসুমের জন্য পানি নিষ্কাশন করে ঘের প্রস্তুত করায় ঘেরে কাঁকড়ার সংখ্যা কমে গেছে। ঘের এলাকায় কাঁকড়া না পাওয়ায় জেলেরা সুন্দরবন ও উপকুল সংলগ্ন নদনদী খাল থেকে কাঁকড়া শিকার করছে। বনের আহরণকৃত কাঁকড়া আড়ৎ বা বাজারে পৌছাতে পারলে সেটি হ্যাচারী কাঁকড়া বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে।

পাইকগাছার কাঁকড়া ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি দেবব্রত দাশ দেবু জানান, পাইকগাছা পৌর বাজারে প্রায় শতাধিক কাঁকড়া ডিপো সহ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে প্রায় ৫ শতাধিত কাঁকড়া ডিপো রয়েছে। বর্তমান কাঁকড়ার মৌসুম না থাকায় প্রতিদিন ১ টন এর অধিক কাঁকড়া পাইকগাছা পৌর বাজার থেকে ঢাকায় রপ্তানী করা হয়। কাঁকড়া ধরা নিষেধ থাকায় হ্যাচারীর কাঁকড়া বাজারে বিক্রি হচ্ছে। দামের উপর নির্ভর করে কাঁকড়া সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া কাঁকড়া মৌসুমে পাইকগাছা অঞ্চল থেকে ৮ থেকে ১০ টন কাঁকড়া প্রতিদিন ঢাকায় পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে পাইকগাছা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ জাহিদ হোসেন জানান, প্রজনন মৌসুমে জেলারা যাতে কাঁকড়া আহরণ না করে সে জন্য পাইকগাছার গড়ইখালী ইউনিয়ন সংলগ্ন সুন্দরবন এলাকা শিবসা নদীতে পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে। পাইকগাছা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা পবিত্র কুমার দাস জানান, সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণ নিষেদ্ধ থাকলেও অন্য নদ-নদী থেকে কাঁকড়া আহরণের কোন বিধিনিষেধ নেই। এ কারণে উপকুল এলাকায় নদ-নদী ও খালে কাঁকড়া শিকারের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। সুন্দরবনের কাঁকড়া আহরণের বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব বন বিভাগের। সেখানে আমাদের কিছু করার থাকে না। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ আবু সালেহ জানান, সুন্দরবনের নিষিদ্ধ এলাকায় মাছ ও কাঁকড়া ধরায় জেলেদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া আইন শৃংখলা বাহিনী কাঁকড়ার প্রজনন মৌসুমে কেউ যাতে কাঁকড়া আহরণ করতে না পারে সেজন্য টহল জোরদার করা হয়েছে। মৎস্য বিশেষাজ্ঞরা জানান, শুধু সুন্দরবন নয়, উপকূল এলাকার নদ-নদী থেকে কাঁকড়া আহরণ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি কাঁকড়া সরবরাহ ও ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ না করলে কাঁকড়া শিকার বন্ধ করা সম্ভব হবে না। জানুয়ারী ও ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত কাঁকড়া ডিম দেয়। এ জন্য উপকূল এলাকায় কাঁকড়া শিকার বন্ধ ও কাঁকড়ার অভয়াশ্রম চিহ্নিত করা প্রয়োজন। তাছাড়া জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে কাঁকড়ার প্রজনন ও উৎপাদন অনেকটা হুমকিতে। তার উপর প্রজনন মৌসুমে নির্বিচারে মা কাঁকড়া নিধন অব্যাহত থাকলে অচিরেই বিপুল সম্ভাবনাময় এ অর্থনৈতিক মৎস্য খাত কাঁকড়ার বিলুপ্তি ঘটবে।

 





উপকূল এর আরও খবর

পাইকগাছায় উপকূল দিবস পালিত পাইকগাছায় উপকূল দিবস পালিত
দুবলারচরে রাস উৎসবে যেতে উপকূলবাসীর মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি; তৎপর শিকারীরাও দুবলারচরে রাস উৎসবে যেতে উপকূলবাসীর মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি; তৎপর শিকারীরাও
জীবনের ঝুঁকি ও সুদের বোঝা মাথায় নিয়ে জীবিকার লক্ষে জেলেদের সমুদ্রযাত্রা জীবনের ঝুঁকি ও সুদের বোঝা মাথায় নিয়ে জীবিকার লক্ষে জেলেদের সমুদ্রযাত্রা
সুন্দরবনের দুবলারচরে রাসপূজায় যেতে বন বিভাগের পাঁচটি রুট নির্ধারণ সুন্দরবনের দুবলারচরে রাসপূজায় যেতে বন বিভাগের পাঁচটি রুট নির্ধারণ
শীত মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যেতে পাইকগাছার জেলে পল্লীতে প্রস্তুতি চলছে শীত মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যেতে পাইকগাছার জেলে পল্লীতে প্রস্তুতি চলছে
উপকূলীয় কেওড়া ফল বাণিজ্যিকীকরণ অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা আনতে পারে উপকূলীয় কেওড়া ফল বাণিজ্যিকীকরণ অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা আনতে পারে
পাইকগাছায় শিবসা নদিতে ধরা পড়ছে ইলিশ; নাগালের বাইরে দাম পাইকগাছায় শিবসা নদিতে ধরা পড়ছে ইলিশ; নাগালের বাইরে দাম
ভারী বর্ষণে পাইকগাছা শহর ও নিন্মাঞ্চল প্লাবিত; ফসলের ক্ষতি বেড়েছে জনদূর্ভোগ ভারী বর্ষণে পাইকগাছা শহর ও নিন্মাঞ্চল প্লাবিত; ফসলের ক্ষতি বেড়েছে জনদূর্ভোগ
আইলার ১৬ বছর ; আজও উপকূলবাসীকে কাঁদায় আইলার ১৬ বছর ; আজও উপকূলবাসীকে কাঁদায়
সাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় শক্তি; উপকূলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে সাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় শক্তি; উপকূলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে

আর্কাইভ