মঙ্গলবার ● ২৮ অক্টোবর ২০২৫
প্রথম পাতা » উপকূল » দুবলারচরে রাস উৎসবে যেতে উপকূলবাসীর মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি; তৎপর শিকারীরাও
দুবলারচরে রাস উৎসবে যেতে উপকূলবাসীর মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি; তৎপর শিকারীরাও
প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছা ঃ দুবলারচরের রাসমেলা হলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব, যা প্রতি বছর কার্তিক বা অগ্রহায়ণ মাসের পূর্ণিমা তিথি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবে পুণ্যার্থীরা রাসপূর্ণিমা উপলক্ষে সমুদ্রস্নান ও রাসপূজা করেন। বর্তমানে পরিবেশগত সংরক্ষণের জন্য মেলা আয়োজন সীমিত রাখা হয়, তবে পুণ্যস্নান ও পূজা হয়ে থাকে।
সুন্দরবনের দুবলারচরে রাসমেলা ঘিরে উপকূল অঞ্চলে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মেলায় যেতে পূর্ণার্থী ও দর্শনার্থীদের প্রস্তুতি চলছে। প্রতিবছর কার্তিক মাসের শেষ বা অগ্রহায়ণের প্রথম দিকে শুক্লপক্ষের ভরা পূর্ণিমায় সুন্দরবনের দুবলারচর আলোরকোলে ৩ দিন ব্যাপী রাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এটি এশিয়ার সব থেকে বড় সমুদ্র মেলা। ৩ নভেম্বর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ৩ দিন ব্যাপী রাসমেলা অনুষ্ঠিত হবে। হাজার হাজার পুর্ণার্থী ও দর্শনার্থীদের আগমনে মেলা উৎসব মূখর হয়ে ওঠে। এ মেলাকে কেন্দ্র করে সুন্দরবন উপকূলবর্তী মানুষের মধ্যে উৎসব মূখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মেলায় যাওয়ার জন্য ট্রলার ভাড়াসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি চলছে। হিন্দু ধর্মালম্বীরা পূর্ণিমার জোয়ারে নোনা জলে স্নানের মধ্যদিয়ে পাপমোচন হয়ে মনস্কামনা পূর্ণ হবে, এ বিশ্বাসে রাসমেলায় যোগ দিলেও সময়ের ব্যবধানে এখন নানা ধর্ম ও বর্ণের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকা যোগে তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীরা সমবেত হয়। আসে অসংখ্য বিদেশী পর্যটকও। তবে মেলাকে সামনে রেখে চোরা শিকারী ও মৌসুমী শিকারী চক্র সুন্দরবনের হরিণ শিকারের সুযোগ নেয়। তাই তাদের আগাম তৎপরতাও শুরু হয়ে যায়।
সূত্র জানাগেছে, সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলার চোরা শিকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। সুন্দরবনে প্রবেশে কড়াকড়ির মধ্যেও রাস পূর্ণিমার মেলাকে ঘিরে শিকারীদের হরিণ নিধনের সুযোগ গ্রহণ করে। সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলার শিকারীরা রাসমেলার আড়ালে হরিণ শিকারের ফাঁদ, জাল, বরশিসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরীতে ব্যস্ত। রাসমেলা উপলক্ষ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা গ্রহণ করা হলেও শ্যামনগর, কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, মংলা, রামপালসহ উপকূলীয় এলাকার শিকারীরা মেলা শুরু হওয়ার ১০/১৫ দিন আগে জেলে বা বনজীবী সেজে বনের মধ্যে প্রবেশ করে রেখে আসা শিকার করার উপকরণ। মেলার আনন্দে মেতে উঠা দর্শনার্থী ও নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাকি দিয়ে এসব ফাঁদ দিয়ে হরিণ শিকারের সুযোগ গ্রহণ করে। রাসমেলার সময় হিরণ পয়েন্ট, দুর্বারচর আলোর কোল সহ বিভিন্ন চর ও সুন্দরবন সাগর মোহনায় পুর্ণার্থী, দর্শনার্থী ও পর্যাটক সহ হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এ সময় জনসমুদ্রে শিকারী চক্র মিশে গিয়ে চোখ ফাকি দিয়ে হরিণ নিধনে মেতে উঠে। ব্যাপক নজরদারী থাকা স্বত্বেও শুধুমাত্র হরিণ শিকারের উদ্দেশ্যে এ বিশাল মেলায় দর্শনার্থীরুপে আগত শিকারীদের আটকানো অনেক সময় সম্ভব হয় না।
পুণ্যনস্নানে অংশ নিতে দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের ৩ থেকে ৫ নভেম্বর-এ তিন দিনের জন্য অনুমতি প্রদান করা হবে এবং প্রবেশের সময় এন্ট্রি পয়েন্টে লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকার প্রবেশ ফি, অবস্থান ফি এবং লোকের সংখ্যা অনুযায়ী বিধি মোতাবেক রাজস্ব আদায়পূর্বক পাশ প্রদান করা হবে। অনুমতি পেতে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিসহ তীর্থযাত্রীদের আবেদন করতে হবে। প্রতিটি অনুমতিপত্রে সিল মেরে পথ/রুট উল্লেখ্য করা হবে এবং তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীগণ পছন্দমত একটি রুট বা পথ ব্যবহার করবেন। ৩ নভেম্বর দিনের ভাটায় যাত্রা আরম্ভ করতে হবে। রাসপূূর্ণিমা পুণ্যনস্নানের উদ্দেশ্যে নৌযান নির্ধারিত রুটে শুধু দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবে। বন বিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া কোথাও লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকা থামানো যাবে না। ট্রলারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লাইফ জ্যাকেট বা বয়া সংরক্ষণ করতে হবে।
রাসপূর্ণিমা পুণ্যনস্নানে সময় কোন বিস্ফোরকদ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও বহন নিষিদ্ধ। কারো কাছে কোন আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরকদ্রব্য, হরিণ মারার ফাঁদ, দড়ি, গাছ কাটার কুড়াল, করাত ইত্যাদি অবৈধ কিছু পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন অবস্থায়ই সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক যেমন প্লাস্টিকের প্লেট, পানির বোতল, গ্লাস বা চামচ বহন করা যাবে না। লঞ্চ, ট্রলার, নৌকায় এবং পুণ্যনস্নান স্থলে মাইক বাজানো, পটকা, বাজি ইত্যাদি ফোটানোসহ সকল প্রকার শব্দ দূষণ নিষিদ্ধ। রাসপূর্ণিমায় আগত পুণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট হতে প্রাপ্ত সনদপত্রের মূলকপি সাথে রাখতে হবে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হলেন এ জেড এম হাছানুর রহমান জানান, পুণ্যনস্নান নিরাপদে যাতায়াতের জন্য দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জন্য সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ পাঁচটি পথ নির্ধারণ করেছে। এ সকল পথে বন বিভাগ, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল দল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।






জীবনের ঝুঁকি ও সুদের বোঝা মাথায় নিয়ে জীবিকার লক্ষে জেলেদের সমুদ্রযাত্রা
সুন্দরবনের দুবলারচরে রাসপূজায় যেতে বন বিভাগের পাঁচটি রুট নির্ধারণ
শীত মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যেতে পাইকগাছার জেলে পল্লীতে প্রস্তুতি চলছে
উপকূলীয় কেওড়া ফল বাণিজ্যিকীকরণ অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা আনতে পারে
পাইকগাছায় শিবসা নদিতে ধরা পড়ছে ইলিশ; নাগালের বাইরে দাম
ভারী বর্ষণে পাইকগাছা শহর ও নিন্মাঞ্চল প্লাবিত; ফসলের ক্ষতি বেড়েছে জনদূর্ভোগ
আইলার ১৬ বছর ; আজও উপকূলবাসীকে কাঁদায়
সাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় শক্তি; উপকূলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে
পাইকগাছায় উপকূল দিবস পালিত 