

শনিবার ● ১৬ আগস্ট ২০২৫
প্রথম পাতা » উপকূল » উপকূলীয় কেওড়া ফল বাণিজ্যিকীকরণ অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা আনতে পারে
উপকূলীয় কেওড়া ফল বাণিজ্যিকীকরণ অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা আনতে পারে
প্রকাশ ঘোষ বিধান; পাইকগাছা :
সুন্দরবনসহ উপকূলীয় অঞ্চলে কেওড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে ফলে ভরে গেছে প্রতিটি গাছ। কেওড়া গাছ মুলতো সুন্দরবন কেন্দ্রিক বৃক্ষ হলেও উপকূলীয় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন বিস্তৃর্ণ এলাকার নদীর চরভরাটি জমিতে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে অন্যান্য প্রজাতির গাছের সাথে কেওড়া গাছের চারা লাগানো হচ্ছে। সুন্দরবন সংলগ্ন পাইকগাছা উপজেলার শিবসা, ভদ্রা, মিনহাজ, কড়ুলিয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের চরভরাটি জমিতে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রচুর পরিমাণে কেওড়া গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। এছাড়া এলাকার বিভিন্ন স্লুইস গেটের ধারে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো বড় বড় কেওড়া গাছ রয়েছে।
সুন্দরবন অঞ্চলের সবচেয়ে সৌন্দর্য্যমন্ডিত গাছ কেওড়া। লবণযুক্ত মাটিতে এ গাছ ভাল জন্মে। সারি সারি সবুজে ভরা কেওড়া গাছ দেখলে সবারই নজর কাড়বে। সুন্দরবন ঘেষা নদ-নদী, খালের চরগুলোতে ব্যাপক হারে কেওড়া গাছ জন্মে।
কেওড়া ফল উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা বয়ে আনতে পারে। কেওড়া গাছ বর্ধনশীল হওয়ায় গাছে দ্রুত ফল ধরে। এক একটা গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরে। আশ্বিন মাস পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এসময় এলাকার হাট-বাজার গুলোতে কেওড়া ফল কিনতে পাওয়া যায়। প্রতি কেজি কেওড়া ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। কেওড়া গাছের বাণিজ্যিক ব্যবহার উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
উপকূলীয় এলাকার অনাবাদী লবণাক্ত জমিতে কেওড়া গাছ ব্যাপক ভাবে জন্মে। যা উপকূলের প্রান্তিক জনগণের বাড়তি আয়ের উৎস। কেওড়া ফলটি টক স্বাদযুক্ত হওয়ায় বিভিন্ন জায়গায় রপ্তানি করে অনেক পরিবারের রুটি-রুজির ব্যবস্থা হয়। কেওড়া ফলকে ঘিরেও আচার, চাটনি,জেলিসহ বিভিন্ন খাদ্যে গড়ে উঠতে পারে শিল্প। উপকূলীয় অর্থনীতিতে কেওড়া ফল নতুন মাত্রা আনতে পারে।
সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় জেলা সমূহের লোকজন কেওড়া ফলের সাথে ছোট চিংড়ি মাছ ও মসুরীর ডাল রান্না করে খেয়ে থাকে। তাছাড়া, কেওড়া ফল হতে আচার ও চাটনী তৈরী করা হয়। কেওড়া ফলেও রয়েছে অনেক গুণ। এ ফল পেটের অসুখের চিকিৎসায় বিশেষতঃ বদহজমে ব্যবহৃত হয়। এই ফলের চাটনি, টক আর ডাল রান্না করে রসনা মেটাচ্ছে অনেকে মানুষ। অন্যদিকে, সুন্দরবনে উৎপন্ন মধুর একটা বড় অংশ আসে কেওড়া ফুল হতে। কেওড়া ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়, যা একটি মূল্যবান খাদ্যপণ্য। এটি একটি লবণাক্ততা সহিষ্ণু গাছ এবং এর ফল ও পাতা স্থানীয় জনগণের খাদ্য ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।
সুন্দরবন অঞ্চলের সবচেয়ে সৌন্দর্যমন্দিত গাছ কেওড়া। নতুন জৈব-বর্জ্য সমৃদ্ধ, মোটামুটি বা অধিক লবণযুক্ত মাটিতে এ গাছ ভাল জন্মে। বাংলাদেশ, ভারত ও মায়ানমারের বিস্তৃত বনাঞ্চলে এই গাছ দেখা যায়। সরল পাতা বিপরীতমুখী, ফুল উভলিঙ্গ। ফল প্রায় গোলাকৃতির এবং ব্যাস ২-৩ মিলিমিটার। এর পাতা জিওল গাছের পাতার মতো সরু-লম্বাটে। ছোট ছোট হলুদ বর্ণের ফুল হয়। এ ফুলের মধুও সুস্বাদু। একটি ফলে বীজের সংখ্যা ২৫-১২৫টি। কেওড়া ফলের আকৃতি ডুমুরের মতো। সবুজ রঙের ফলের ওপরের মাংসল অংশটুকু টক স্বাদের। ভেতরে বেশ বড় বীচি। কেওড়া ফলের আকৃতি ডুমুরের মতো দেখতে।
সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় কেওড়া ফলের চাষ ও বাণিজ্যিকীকরণ হলে অর্থনীতিতে নতুন মাত্র যোগ হতে পারে। কেওড়া ফল স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করে। কেওড়া ফলের বাণিজ্যিকীকরণ উপকূলীয় এলাকার মানুষের জন্য বাড়তি আয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কেওড়া ফল থেকে আচার, জ্যাম, জেলি ইত্যাদি তৈরি করে বাজারজাত করা যেতে পারে। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে কেওড়া ফলের বাণিজ্যিক ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
উপকূলীয় কেওড়া ফল বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করা যেতে পারে। এই ফলের বাণিজ্যিকীকরণ সম্ভব হলে তা উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হতে পারে। বর্তমানে বাজারের কেওড়া ফলের চাহিদা রয়েছে। সুষ্ঠুভাবে এর চাষ ও বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের আয় বাড়ানো যেতে পারে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ হতে পারে।