সোমবার ● ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » সুন্দরবন » লোনাপানির সুন্দরবন ও উপকূলীয় বালুচরে নিচে লুকিয়ে আছে মিঠাপানির ভান্ডার
লোনাপানির সুন্দরবন ও উপকূলীয় বালুচরে নিচে লুকিয়ে আছে মিঠাপানির ভান্ডার
সুন্দরবনের অনেক চরে মাটির কিছুটা গভীরে মিঠা পানি পাওয়া যায়। যা মূলত বৃষ্টির জমা হওয়া পানি। সমুদ্রের লোনা পানির তুলনায় বৃষ্টির পানি হালকা হওয়ায় তা মাটির ওপরের স্তরে লেন্স আকারে জমা থাকে। জোয়ারের সময় এই মিঠা পানির স্তর লোনা পানির চাপে কিছুটা উপরে উঠে আসে, যার ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ বা বন্যপ্রাণীরা গর্ত খুঁড়ে সেই পানি সংগ্রহ করতে পারে। তবে সব চরে বা সব সময় এই পানি পাওয়া যায় না।
সুন্দরবনের ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সেখানে গর্ত খুঁড়ে মিঠাপানি পাওয়া যায়। সন্দরবনের চরে মাটির গর্তে মিঠাপানি পাওয়ার বিষয়টি একটি বিশেষ প্রাকৃতিক কৌশল, যা মূলত রেইনওয়াটার হারভেস্টিং বা বৃষ্টির পানি সঞ্চয়ের ওপর নির্ভর করে।
সুন্দরবনের অনেক স্থানে বন বিভাগ এবং স্থানীয়রা বড় গর্ত বা পুকুর খনন করে রাখে। বর্ষাকালে এই গর্তগুলো বৃষ্টির পানিতে ভরে যায়। যেহেতু সুন্দরবনের নিচের স্তরের পানি লবণাক্ত, তাই এই বৃষ্টির পানিই পশুপাখি এবং মানুষের একমাত্র ভরসা। বাঘ, হরিণসহ বনের প্রাণীদের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য বন বিভাগ বিভিন্ন এলাকায় কৃত্রিমভাবে গর্ত বা পুকুর খনন করে দেয়। বৃষ্টির পানি এসব গর্তে জমা হয়ে থাকে, যা সারাবছর প্রাণীদের পানির চাহিদা মেটায়। শুষ্ক মৌসুমে যখন বৃষ্টি কম হয়, তখন বাষ্পীভবন এবং চারপাশের লবণাক্ত পানির চাপে অনেক সময় গর্তের পানিও কিছুটা নোনা হয়ে যায়। তাই বর্ষার বৃষ্টির পানি ধরে রাখাই এখানে মিঠাপানির প্রধান উপায়।
সুন্দরবন ও উপকূলীয় কিছু কিছু চরে বালির স্তর ফিল্টার হিসেবে কাজ করে। বৃষ্টির পানি বালির স্তরের মধ্য দিয়ে চুইয়ে নিচে জমা হয়। জোয়ারের নোনা পানি সরাসরি না ঢুকলে, মাটির গভীরে একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত বৃষ্টির পানি মিষ্টি থাকে।
সুন্দরবনের চরে মাটির গভীরে মিঠা পানির বড় ভান্ডার আছে, যা হাজার বছরের পুরোনো এবং লবণাক্ত পানির নিচে সংরক্ষিত। অগভীর স্তর লবণাক্ত এবং ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত উত্তোলন, ঘূর্ণিঝড় ও লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ সুন্দরবনের মিঠা পানির উৎসকে সংকটে ফেলছে, বিশেষত গ্রীষ্মকালে। বিজ্ঞানীরা মাটির গভীরে বিশাল প্যালিওওয়াটার বা প্রাচীন পানির ভান্ডারের সন্ধান পেয়েছেন, যা এই অঞ্চলের মানুষ ও বন্যপ্রাণীর জন্য সুপেয় পানির একটি বড় উৎস হতে পারে।
সুন্দরবনের চরের গভীরে মাটির নিচে প্রাচীন মিঠা পানির বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে, যা হাজার হাজার বছর আগে শেষ বরফ যুগের সময় জমা হয়েছিল এবং যা উপরের লোনা পানির স্তর দ্বারা প্রাকৃতিকভাবে সুরক্ষিত। আন্তর্জাতিক গবেষকরা এটি আবিষ্কার করেছেন এবং এটি উপকূলীয় অঞ্চলের পানির সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তবে এটি খুব ধীরে রিচার্জ হয় বলে সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত।
প্রাচীন পানির উৎস প্লাইস্টোসিন যুগের, প্রায় ১৫ থেকে ২৯ হাজার বছর পুরোনো, যা সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা কম থাকাকালীন জমা হয়েছিল। মিহি কাদা এবং শক্ত মাটির একটি স্তর (প্যালেসল) উপরের লবণাক্ত পানি থেকে এই মিঠা পানির ভান্ডারকে আলাদা করে রেখেছে, যা একে অক্ষত রেখেছে। সুন্দরবনের নিচে R1 ও R2 নামে দুটি প্রধান মিঠা পানির স্তর শনাক্ত করা হয়েছে, যা ৮০০ মিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, নিউ মেক্সিকো ইনস্টিটিউট অব মাইনিং অ্যান্ড টেকনোলজি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা খুলনা শহর থেকে সুন্দরবনের ১২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে আধুনিক ভূ-তড়িৎ-চৌম্বকীয় প্রযুক্তি, ম্যাগনেটোটেলুরিক ব্যবহার করে ভূগর্ভের অভ্যন্তরীণ গঠন পরীক্ষা করেন। গবেষকদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, খুলনার উত্তরের অংশে প্রায় ২০০ থেকে ৮০০ মিটার গভীরে বিস্তৃত আছে বিশাল এক মিঠাপানির স্তর। এটি প্রায় ৪০ কিলোমিটার বিস্তৃত এবং পানির লবণাক্ততা এত কম যে সরাসরি মিঠাপানি হিসেবে চিহ্নিত করা গেছে।
লবণাক্ততা ও আর্সেনিকের কারণে পানির সংকটে থাকা উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য এটি সুপেয় পানির একটি বড় উৎস হতে পারে। এই প্রাচীন মিঠা পানির ভান্ডার সংরক্ষণ করা এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাস্তুতন্ত্র ও পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।






পলিথিন ও প্লাস্টিক সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক হুমকি
সুন্দরবনে নিখোঁজের দুইদিন পর প্রবাসী নারী পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার
সুন্দরবনে রাস পূজায় আটক ৩২ হরিণ শিকারিকে কারাগারে প্রেরণ
পাইকগাছায় প্লাস্টিক ও পলিথিন দূষণ প্রতিরোধে বনজীবিদের দক্ষতা ও উন্নয়ন কর্মশালা
সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস উৎসব ৩ নভেম্বর থেকে শুরু
শুঁটকি মৌসুমে দুবলারচরে জেলেদের উৎসব
সুন্দরবনে শামুক নিধনে হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য
পূর্ব সুন্দরবনে তিন মাসে ১৪৮ জেলে আটক, ফাঁদসহ ২৪২ টি ট্রলার ও নৌকা জব্দ
৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে খুলছে সুন্দরবনের দ্বার 