

শুক্রবার ● ২৩ মে ২০২৫
প্রথম পাতা » উপকূল » সাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় শক্তি; উপকূলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে
সাগরে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় শক্তি; উপকূলের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে
প্রকাশ ঘোষ বিধান ঃ ঘূর্ণিঝড় শক্তির চোখ রাঙানীতে উপকূলের মানুষের মনে আতঙ্ক বাড়ছে। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে দুর্বল বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলবাসীর ভরসারস্থল বেড়িবাঁধ। সেই বেড়িবাঁধ দূর্বল থাকায় উপকূলবাসীর মনে শঙ্কা বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী ৩০ মে নাগাদ উপকূলে আঘাত হানতে পারে সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় শক্তি। এই মে মাসে সুন্দরবন উপকূলে আছড়ে পড়েছিল আইলা, ফণী, বুলবুল, ইয়াস, আম্পান, রোমেল এর মতো প্রলয়ংকরী সব ঘূর্ণিঝড়। তাই উপকূলীয় এলাকার সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
দেশ জুড়ে বয়ে যাচ্ছে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ। তাতানো রোদ্দুরে পুড়ছে জনপদ। জ্বালাপোড়া গরমে জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। উত্তপ্ত বাতাসে ছড়াচ্ছে আগুনের হলকা। তীব্র উষ্ণতার মধ্যেই বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ঘূর্ণিঝড়টির নাম শক্তি। এটি শ্রীলঙ্কার প্রস্তাবিত নাম। আগামী ৩০ মের মধ্যে এ ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় জনপদগুলো প্রতিবছরই প্রকৃতির এক কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যায়। ঘূর্ণিঝড় নামের এক ভয়াল বাস্তবতা তাদের জন্য নতুন কিছু নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে এই ঘূর্ণিঝড় এখন আগের তুলনায় আরও অপ্রত্যাশিত, তীব্র ও ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রতিটি নিম্নচাপ যেন একটি সম্ভাব্য দুর্যোগের আশঙ্কা নিয়ে আসে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরে ঝড়, নিম্নচাপ, লঘূচাপের মতো দুর্যোগ এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাস আমাদের দেশে নতুন নয়। দুই দশক আগেও কয়েক বছর পর দু-একটি ঝড় বা নিম্নচাপ হতো। এখন প্রতি বছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঘন ঘন এই বিধ্বংসী প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ। তবে, বেশী গর্জন করা মেঘ সর্বদা বর্ষণ হয় না। তাই সামাজিক যেগাযোগ মাধমে অতিরঞ্জিত বার্তা দিয়ে উপকূলবাসীর মাঝে আতংক ছড়ানো উচিত নয়। সাইক্লোন সম্পর্কে উপকূলবাসী অনেক অভিজ্ঞ। সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য দেওয়া দরকার।
উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে। ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠায় পড়েছেন খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট উপকূলের হাজার হাজার মানুষ। তিন জেলার ২হাজার ৬ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ৫১কিলোমিটার বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ। পাইকগাছা উপজেলায় ২৫০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে এর মধ্যে ৩৮ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় যদি খুলনা উপকূলে আঘাত নাও হানে, তবুও এর প্রভাবে নদনদীতে পানির চাপ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। আর পানি বাড়লে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ভয় আছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় শক্তির সম্ভাব্য আঘাতের সময়কাল সামনে রেখে বঙ্গোপসাগরের অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ওড়িশা উপকূল ও বাংলাদেশের চট্টগ্রাম উপকূলের মধ্যবর্তী যে কোনো স্থানের ওপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করার প্রবল আশঙ্কা করা যাচ্ছে। তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত বেশি। ঘূর্ণিঝড়টি যদি বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে আসে, তাহলে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া, ভারী বৃষ্টি এবং জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা রয়েছে।