শিরোনাম:
পাইকগাছা, রবিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২

SW News24
রবিবার ● ২৬ অক্টোবর ২০২৫
প্রথম পাতা » বিবিধ » নিজ শহরকে বসবাসের যোগ্য করে তোলার দায়িত্ব শহরবাসীর
প্রথম পাতা » বিবিধ » নিজ শহরকে বসবাসের যোগ্য করে তোলার দায়িত্ব শহরবাসীর
৪০ বার পঠিত
রবিবার ● ২৬ অক্টোবর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

নিজ শহরকে বসবাসের যোগ্য করে তোলার দায়িত্ব শহরবাসীর

---প্রকাশ ঘোষ বিধান

সারা বিশ্বে অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি শহর। আধুনিকায়নের যুগে পুরো পৃথিবী দিন দিন শহরকেন্দ্রিক হয়ে উঠছে। মানুষের সভ্যতাও ছুটছে শহরের দিকে। কম- বেশি সব দেশেই একই অবস্থা। উন্নত জীবন, সহজলভ্যতা, কাজের সুযোগ সব কিছুই একজন নাগরিককে শহরের দিকে টানে।

শহর বলতে গতিশীল ও পরিবর্তনশীল জীবনযাত্রার প্রতীককে বোঝায়। ৩১ অক্টোবর বিশ্ব শহর দিবস। ২০১৪ সাল থেকে প্রতিবছর এই দিনে জাতিসংঘের উদ্যোগে দিবসটি পালন করা হয়। মানবসভ্যতা দিন দিন আরও বেশি করে শহরকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। এখন বিশ্বের সব জায়গায় মানুষই চায় শহরে থাকতে। এ কারণেই শহরের জনসংখ্যা বাড়ছে দিন দিন। কিন্তু যেসব সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য মানুষ শহরে আসছে, সেই সুযোগ সুবিধাগুলোও তো বজায়ও রাখতে হবে। সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিবছর ৩১ অক্টোবর জাতিসংঘের উদ্যোগে পালন করা হয় বিশ্ব শহর দিবস। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়। সভা-সেমিনার করে নগরের বিভিন্ন সমস্যা-সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়।

বিশ্বের নানা প্রান্তে অনেক শহর আছে, যেগুলো মানবসভ্যতা বিকাশের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে। এসব প্রাচীন শহরের হাত ধরেই গড়ে উঠেছে আধুনিক সভ্যতা। বিশ্বের এমন প্রাচীন শহর; লেবাননের রাজধানী বৈরুতের প্রায় ২৫ মাইল দক্ষিণে সিডন শহর অবস্থিত। এটি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্ভবত ফিনিশীয় সভ্যতার প্রাচীনতম শহরগুলোর একটি। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩৩ অব্দে শহরটি দখল করেছিলেন। বুলগেরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর প্লোভদিভ। এটি ছিল রোমান সাম্রাজ্যের একটি প্রধান শহর।বৈরুত লেবাননের রাজধানী। একই সঙ্গে শহরটি দেশটির সাংস্কৃতিক, প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমের কেন্দ্র। বৈরুতের ইতিহাস প্রায় পাঁচ হাজার বছর পুরোনো। লেবাননের আরেকটি ঐতিহাসিক শহর টায়ার। হেরোডোটাসের মতে, গ্রিক পুরাণের কিংবদন্তি ইউরোপা ও ডিডোর জন্মস্থান টায়ার শহর প্রতিষ্ঠিত হয় ২ হাজার ৭৫০ খ্রিষ্টপূর্বে। সাত মাস অবরুদ্ধ করে রাখার পর ৩৩২ খ্রিষ্টপূর্বে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট শহরটি দখল করেছিলেন। ৬৪ খ্রিষ্টপূর্বে এটি রোমান সাম্রাজ্যের অংশ হয়।সাইপ্রাসের দক্ষিণ উপকূলীয় বন্দর শহর লারনাকা। এটি দেশটির তৃতীয় বৃহত্তম শহর। ফিনিশীয় সভ্যতার মানুষেরা এ শহর প্রতিষ্ঠা করেন। তখন এর নাম ছিল সিটিয়াম।স্পেনের ঐতিহাসিক শহর ক্যাদিজ। এটি আইবেরিয়ান উপদ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত।ভারতের উত্তর প্রদেশের শহর বারানসি। স্থানীয়ভাবে বেনারস নামে শহরটি বেশি পরিচিত। গঙ্গা নদীর পশ্চিম তীরে ঐতিহাসিক এই প্রাচীন শহরের অবস্থান। হিন্দু ও বৌদ্ধ উভয় ধর্মের মানুষের কাছে এটি অত্যন্ত পবিত্র শহর। কিংবদন্তি অনুসারে, ৫ হাজার বছর আগে হিন্দু দেবতা শিব শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।গ্রিসের রাজধানী এথেন্স। একই সঙ্গে এথেন্স দেশটির সবচেয়ে বড় শহরও। এই শহরকে পশ্চিমা সভ্যতার সূতিকাগার এবং গণতন্ত্রের জন্মস্থান বলা হয়।শুশ পৃথিবীর প্রাচীনতম শহরগুলোর একটি। অ্যাসিরীয়রা দখল করার আগে শুশ এলামাইট সাম্রাজ্যের রাজধানী ছিল। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক।

বাংলাদেশে মোট পাঁচ ধরনের এলাকাকে শহরাঞ্চল বা শহুরে এলাকা বা শহর এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এগুলো হলো - সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, উপজেলা সদরদপ্তর ও তৎসংশ্লিষ্ট মৌজা, সেনানিবাস। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট ৫৩২টি শহরাঞ্চল রয়েছে যেগুলোর মধ্যে কতগুলো সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা দ্বারা পরিচালিত হয়। পরিসংখ্যান ব্যুরো অনুযায়ী যেসকল শহরাঞ্চলের জনসংখ্যা এক লাখ বা তার বেশি এবং সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা দ্বারা পরিচালিত সেই শহরাঞ্চলকে পৌরনগর বলা হয়। সেই হিসাব অনুযায়ী মোট ৪৬টি পৌরনগর রয়েছে। এই ৪৬টি পৌরনগরের মধ্যে ১২টি সিটি কর্পোরেশন ও ৩৫টি পৌরসভা দ্বারা পরিচালিত হয়। পৌরনগগর গুলোর মধ্যে ৮টি বিভাগীয়, ৩০টি জেলা ও ৯টি উপজেলা পর্যায়ে রয়েছে। যেসকল শহরাঞ্চলের জনসংখ্যা এক লাখের এর কম এবং পৌরসভা দ্বারা পরিচালিত সেই শহরাঞ্চলকে পৌরশহর বল হয়।

২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬,৫১,৫৮,৬১৬। মোট জনসংখ্যার ৩১.৫১ শতাংশ শহরাঞ্চলে বসবাস করে। অর্থাৎ শহরাঞ্চলে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা ৫,২০,৪৯,৪৫৯। শহরাঞ্চলে বসবাসকারী নারীদের তুলনায় পুরুষের সংখ্যা বেশি। শহরাঞ্চলের মোট আয়তন ১৯,৯১০ কিমি।

দ্রুত নগরায়নের ফলে ঢাকায় যানজট, জলাবদ্ধতা, পরিবেশ, পানি, শিল্প ও শব্দদূষণ বাড়ছে। সবুজায়ন হ্রাস পাওয়ায় নগরে তাপমাত্রা বাড়ছে। ফলে সংক্রামক-অসংক্রামক সব ধরনের রোগ দিন দিন বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে নগর জীবনের চাপ, উদ্বেগ প্রভৃতির সামষ্টিক প্রভাবে মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি।

বর্তমান বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শহরের বাসিন্দারা বন্যা, ঝড়, তাপমাত্রা বৃদ্ধির মতো নানান রকমের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে। একটি বাসযোগ্য নগর ও জনবসতি গড়তে জনস্বাস্থ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে শহরের পরিকল্পনা করতে হবে। পাশাপাশি বিশ্ব শহর দিবস উপলক্ষে সিটি করপোরেশন নাগরিক সভা এবং সেমিনার করলে পরিকল্পিত শহর নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

স্বাধীনতার এতো বছর পরেও ঢাকার বর্জ্য ব্যবস্থায় উন্নতি হয়নি। ঢাকা বা অন্য শহরগুলোতে শিশুদের খেলার কোনো জায়গা নেই। এই অবস্থার পরিবর্তনের দায় কারো একার নয়। আমাদের তরুণ তরুণীদের নগরীকে বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

যেহেতু অধিকাংশ মানুষ শহরেই থাকে তাই এই শহরকে বসবাসের যোগ্য করে তোলার দায়িত্বও আমাদের শহরবাসীর। শহরকে উন্নত রাখা ও পরিষ্কার রাখা আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। নিজের শহরটাকে ভাল রাখার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখাই হবে যথার্থ শহর, হবে বাস করার আদর্শ শহর। তবেই তো হবে আরও ভাল শহর, আরও ভাল জীবন।

বিশ্ব শহর দিবস দিনে নিজের শহরটাকে প্রাণ ভরে ভালবাসতে হবে। আর পরবর্তী প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে হবে পরিছন্ন সুন্দর এক শহর। তার জন্য শহরের উন্নয়নের জন্য কাজ করতে হবে।

লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)