মঙ্গলবার ● ২ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » মাটি একটি অমূল্য সম্পদ
মাটি একটি অমূল্য সম্পদ
মাটি একটি অমূল্য সম্পদ। মাটি ও পানি দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ যা ছাড়া জীবন, জীবিকা ও সভ্যতা টিকে থাকা অসম্ভব। নদীমাতৃক বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতি মূলত কৃষিকেন্দ্রিক। উদ্ভিদের জন্ম-বৃদ্ধিতে ও মানবকল্যাণে মৃত্তিকার গুরুত্ব অপরিসিম।
বাংলাদেশের মৃত্তিকা প্রধানত ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা এবং মেঘনা নদী দ্বারা গঠিত বদ্বীপ অঞ্চলের উপর নির্ভরশীল। মৃত্তিকা বা মাটি হলো পৃথিবীর উপরিভাগের নরম, দানাদার আবরণ যা খনিজ পদার্থ, জৈব পদার্থ, জল, গ্যাস এবং জীব দ্বারা গঠিত। এটি প্রাকৃতিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাথর থেকে তৈরি হয় এবং জীবজগতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আধার, যা উদ্ভিদ ও মাটির জীবের জীবনকে সমর্থন করে।
পাথর গুঁড়ো হয়ে সৃষ্ট কণা এবং জৈব পদার্থের মিশ্রণে মৃত্তিকা গঠিত হয়। ভূ-ত্বক, জলস্তর, বায়ুস্তর এবং জৈবস্তরের মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে মাটি তৈরি হয়। মৃত্তিকার সাধারণত চারটি প্রধান প্রকার রয়েছে: এটেল মাটি, বেলে মাটি, লাল মাটি ও দোআঁশ মাটি। মৃত্তিকার প্রকারভেদ এবং এর সংরক্ষণ পদ্ধতিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অপরিকল্পিত কৃষিচর্চা মাটির ক্ষয় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে মাটি ও পানি দূষিত হচ্ছে।
বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস প্রতি বছর ৫ ডিসেম্বর পালিত হয়। এই দিনটি পালনের মূল উদ্দেশ্য হলো মাটির গুরুত্ব সম্পর্কে বিশ্বব্যাপী সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং মাটি রক্ষার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ২০১৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৬৮তম অধিবেশনে ৫ ডিসেম্বরকে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণী দেহের পচন থেকে সৃষ্ট অংশ, যা মাটিকে উর্বর করে। খনিজ ও জৈব পদার্থের পুষ্টি উপাদান দ্রবীভূত করে উদ্ভিদের গ্রহণের উপযোগী করে তোলে। মাটির কণাগুলির মাঝখানে ফাঁকা জায়গায় বাতাস থাকে, যা অণুজীব ও উদ্ভিদের শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য প্রয়োজন। মাটিতে অসংখ্য অণুজীব, পোকামাকড় এবং প্রাণী বাস করে যা জৈব পদার্থ পচাতে এবং মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। মৃত্তিকা সংরক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে টেরেস ফার্মিং, কনট্যুর ফার্মিং, মালচিং, ক্রপ রোটেশন এবং উইন্ড ব্রেকস।
মৃত্তিকার স্বাস্থ্য রক্ষা মানে আমাদের ভবিষ্যৎ রক্ষা। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় মৃত্তিকার প্রতি যত্নশীল হওয়া আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। মৃত্তিকা রক্ষার জন্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার এবং প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা। বৃক্ষরোপণ এবং বনভূমি সংরক্ষণের মাধ্যমে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ। পানি সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মৃত্তিকার আর্দ্রতা বজায় রাখা।
বর্তমান বিশ্বে মৃত্তিকার অবক্ষয়ের হার অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। শিল্পায়ন, বন নিধন, অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার এবং অপ্রতিরোধ্য নগরায়নের কারণে মৃত্তিকার উর্বরতা হারাচ্ছে। এফএও এর মতে, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ২৪ বিলিয়ন টন উর্বর মৃত্তিকা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ এবং মানুষের জীবনযাত্রায় মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ত মাটি দেশের অন্যান্য অবক্ষয় সাধিত মাটির মধ্যে অন্যতম। লবণাক্ততা মাটির উৎপাদনশীলতা ও বাস্তুতন্ত্রকে বিনষ্ট করে এবং কৃষি উৎপাদন ও খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করে। মাটির অবক্ষয় কিভাবে সর্বোত্তম উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তা নির্ধারণের জন্য লবণাক্ত মাটি সম্পর্কে আরও বিশদ জ্ঞান অর্জনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। লবণাক্ত মাটির বিারূপ প্রভাব সম্পর্কে কৃষি গবেষক, বিজ্ঞানী, শিক্ষক, কৃষক সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে।
মৃত্তিকা শুধুমাত্র কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনের জন্যই নয়, বরং পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।মৃত্তিকা আমাদের জীবনের প্রতিটি স্তরে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। এটি শুধু গাছপালা জন্মানোর মাধ্যম নয়; বরং পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য, পানি পরিশোধন, কার্বন সঞ্চালন এবং জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষায় এটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।






প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজের বোঝা নয়
আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস
দর্শকদের কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম টেলিভিশন
জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় টয়লেটের গুরুত্ব অপরিসীম
বেদেরা বাংলাদেশের অতিপরিচিত প্রান্তিক এক যাযাবর গোষ্ঠী
ভোলা সাইক্লোন ১২ নভেম্বরকে উপকূল দিবস ঘোষণা করা হোক
রাসপূর্ণিমার আধ্য়াত্মিক তাৎপর্য
নিজ শহরকে বসবাসের যোগ্য করে তোলার দায়িত্ব শহরবাসীর
আলোর উৎসব দীপাবলি 