শিরোনাম:
পাইকগাছা, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ন ১৪৩২

SW News24
মঙ্গলবার ● ৯ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » প্রাকৃতিক ভারসাম্য, সৌন্দর্য ও উন্নয়নে পর্বত অপরিহার্য
প্রথম পাতা » মুক্তমত » প্রাকৃতিক ভারসাম্য, সৌন্দর্য ও উন্নয়নে পর্বত অপরিহার্য
৩২ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ৯ ডিসেম্বর ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

প্রাকৃতিক ভারসাম্য, সৌন্দর্য ও উন্নয়নে পর্বত অপরিহার্য

---প্রকাশ ঘোষ বিধান

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ আধার বলা হয় পর্বতকে। অদ্ভুত রহস্যের প্রতিশব্দ যেন পর্বত। বিশাল শরীর নিয়ে রাজসিক ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে থাকে। তার অনমনীয় উচ্চতা যেন আকাশকেও ছুতে চায়। কিন্তু নিজে কঠিণ শিলায় গঠিত অথচ কী ভীষণ শান্ত ও স্থির।

প্রকৃতির অপরূপ দান পাহাড়-পর্বত। পরিবেশ নিয়ে সারা বিশ্বই এখন বেশ সোচ্চার। আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাহাড়-পর্বত প্রকৃতির অপরিহার্য উপাদান। পৃথিবীর প্রায় ১০ ভাগের ১ ভাগ মানুষ বাস করে পার্বত্য অঞ্চলে। পৃথিবীর প্রয়োজনীয় মিঠাপানির প্রায় অর্ধেক সরবরাহ করে পর্বতমালা। উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের অভয়ারণ্য হিসেবে পর্বত গুরুত্বপূর্ণ।

পর্বত পৃথিবীর ভূত্বকের একটি উঁচু এবং খাড়া অংশ, যা আশেপাশের ভূমি থেকে সাধারণত ৩০০ মিটারের বেশি উঁচু এবং চূড়া বা শৃঙ্গযুক্ত হয়। সাধারণত আশেপাশের এলাকা থেকে বেশ উঁচু হয়, যা একে মালভূমি বা পাহাড় থেকে আলাদা করে।পর্বতের গঠন শিলাস্তূপ দ্বারা গঠিত এবং এটি মালভূমি ও পাহাড়ের চেয়ে ভিন্ন। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ (৮৮৪৮ মিটার), যা হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমাউন্ট এভারেস্ট।

পৃথিবীর টেকটোনিক প্লেটগুলি যখন একে অপরের সাথে ধাক্কা খায় বা একটি প্লেট অন্যটির নিচে চলে যায়, তখন ভূত্বক ভাঁজ হয়ে বা ওপরে উঠে পর্বত তৈরি হয়। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত লাভা, ছাই এবং শিলা জমাট বেঁধে পর্বতের সৃষ্টি করতে পারে। যেমন মাউন্ট ফুজি হলো আগ্নেয় পর্বত। চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের কৈলাশ পর্বতকে হিন্দুধর্ম, বন, বৌদ্ধ এবং জৈন এ চারটি ধর্মে পবিত্র বলে মনে করে। তেমন আয়ারল্যান্ডে মাউন্ট ব্র্যান্ডন, মাউন্ট আরারাত, ইউরোপে আল্পস পর্বতমালা পবিত্র বলে মনে করা হয়।

মানুষের জীবনে পর্বতের গুরুত্ব অপরিসীম। বিশ্বের অর্ধেক মানুষ পর্বত থেকে মিঠা পানি পেয়ে থাকে। পৃথিবীর মোট স্থলভাগের এক-চতুর্থাংশের চেয়েও বেশি প্রায় ২৭ শতাংশ জায়গা জুড়ে আছে বিস্তৃত পর্বতরাশি। এ পর্বতরাশি থেকে প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছে পৃথিবীর ২২ শতাংশ মানুষ। পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ পর্বত থেকে আহরিত সম্পদ দ্বারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছে। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবন অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়।

১১ ডিসেম্বর ছিল আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস। পর্বতকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার কৌশল হিসেবে সারা বিশ্বে পর্বত দিবস পালিত হয়ে আসছে। ১৮৩৮ সালে পর্বত দিবস প্রথম পালন করার আভাস পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের মাউন্ট হোলিওক কলেজের ছাত্ররা ঐ অঞ্চলের পর্বতকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য ক্লাস বর্জন করে হোলিওক পর্বতের দিকে যাত্রা শুরু করেন। পরে ১৮৭৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের স্মিথ কলেজ পর্বত দিবস উদ্যাপন করে। যুক্তরাষ্ট্রের জুনিয়েতা কলেজ তাদের পর্বত দিবসের ঘোষণা দেয় ১৮৯৬ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এমনিভাবে পর্বত দিবস পালন করা শুরু করে। জনজীবনে পর্বতের গুরুত্ব যে অপরিসীম, তা অনুধাবন করে ২০০২ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রতি বছর ১১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস হিসেবে পালন করার ঘোষণা হয়।

নান্দনিক সৌন্দর্যের সমারোহে পর্বত মানুষকে মুগ্ধ করে। বিশ্বের জীববৈচিত্র্যময় হটস্পটগুলোর প্রায় অর্ধেকই এই পর্বতরাশি।প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলানিকেতন পর্বত দেশি বিদেশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পার্বত্য জেলাগুলো ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল। পর্যটকরা পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্বত ভ্রমণ করে। পাহাড়ি প্রকৃতির মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈচিত্র্যময় জীবন সংস্কৃতি ও কৃষ্টি স্বমহিমায় অনন্য করে তুলেছে। সে জন্য এ অঞ্চলে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে, যা এ অঞ্চলের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পর্বত আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রাকৃতিক সম্পদ। জীবজগতের এক বৃহৎ পরিসরের সবুজ ও বাহারি গাছপালা, বিভিন্ন প্রজাতি এবং বিভিন্ন ভাষা, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিগতভাবে বিচিত্র সম্প্রদায়ের মানুষ পর্বতগুলোর আশপাশে বসতি স্থাপন করে জীববৈচিত্র্য গড়ে তুলে প্রকৃতিসৃষ্ট পর্বতগুলোকে যেন মিতালির বন্ধনে জড়িয়ে রেখেছে। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবন অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। পর্বতমালা, নদ-নদী, বহু প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী এ অঞ্চলকে করেছে বৈচিত্র্যপূর্ণ। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন অপরিহার্য।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ও মানুষের অপরিকল্পিত ভূমি ব্যবহারের কারণে বিশ্বব্যাপী পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি, খরা, ঝড়-ঝঞ্ঝা, অপরদিকে বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে বন উজাড় হচ্ছে। এই দুইয়ের প্রভাবে পার্বত্য এলাকায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। পর্বতমালা, নদ-নদী, বহু প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী এ অঞ্চলকে করেছে বৈচিত্র্যপূর্ণ।

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য পার্বত্য চট্টগ্রামকে ঘিরে রেখেছে। বাংলাদেশ সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় দেশের পাহাড়ি মানুষের জীবমান উন্নয়নে ও পার্বত্য প্রতিবেশ সুরক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। জনজীবনে পর্বতের তাৎপর্য ও পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা বাড়াতে পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। নিজেদের বাঁচার তাগিদেই প্রকৃতিসৃষ্ট পর্বত ও পরিবেশকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন অপরিহার্য।

লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)