রবিবার ● ১৬ নভেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় টয়লেটের গুরুত্ব অপরিসীম
জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় টয়লেটের গুরুত্ব অপরিসীম
প্রকাশ ঘোষ বিধান
স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে প্রতিটি মানুষেরই চাই ভালো টয়লেট। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, টয়লেটকে এড়িয়ে চলার কোনো সুযোগ কারোরই নেই। মানুষের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শৌচাগারের ভূমিকা অনেকটাই। খোলা জায়গায় শৌচ করলে রোগ ছড়াতে পারে।
বিশ্ব শৌচাগার বা টয়লেট দিবস হল বিশ্বব্যাপী স্যানিটেশন সংকট মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিতে অনুপ্রাণিত করার জন্য ১৯ নভেম্বর টয়লেটের দিবস পালিত হয়। বিশ্বব্যাপী, ৩.৪৭ বিলিয়ন মানুষ স্যানিটেশন ছাড়াই বাস করে এবং প্রায় ৪১৯ মিলিয়ন মানুষ খোলামেলা মলত্যাগ করে। আপাতভাবে টয়লেট গুরুত্বপূর্ণ মনে নাও হতে পারে। কিন্তু মানুষের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শৌচাগারের ভূমিকা অপরিসীম। খোলা জায়গায় শৌচ করলে রোগ ছড়াতে পারে। এছাড়াও সঠিক পদ্ধতি মেনে শৌচ না করলে নানারকম রোগ ছড়ায়। কিছু কিছু রোগে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশই শৌচাগারের পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে পিছিয়ে রয়েছে।
সারা বিশ্বে প্রায় ৩৬০ কোটি মানুষ এই অসুবিধার মধ্যে রয়েছেন। অল্প আয়ের দেশগুলোতে এই সমস্যা বেশি। এছাড়া দুর্গম অঞ্চলগুলোতে মানুষ এখনও শৌচের সমস্যায় ভুগছেন। আপাতভাবে নির্দিষ্ট স্থানে টয়লেট বা শৌচাগার ব্যবস্থাকে গুরুত্বপূর্ণ না মনে হলেও মানুষের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এর ভূমিকা অনেক।
২০০১ সালে ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশনের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক সিম এ দিবস পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ২০১৩ সালে জাতিসংঘ বিশ্ব টয়লেট দিবসকে একটি আনুষ্ঠানিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। বিশ্বজুড়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, স্যানিটেশন এবং সঠিক টয়লেট ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দিনটি পালন করা হয়। দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষের মানসম্মত স্যানিটেশন সুবিধা নেই, যা স্বাস্থ্যের উন্নয়নে একটি বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা।
বিশ্বে এখনো প্রায় ৩৬০ কোটি মানুষ নিরাপদ স্যানিটেশনের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিশুদ্ধ পানির অভাব, একই সঙ্গে অপরিকল্পিত স্যানিটেশনব্যবস্থার কারণে দেখা দেয় নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি। ফলে কলেরা, ডায়রিয়া ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে প্রতিনিয়ত। জাতিসংঘের এক হিসাবে, বিশ্বে সাতশত কোটি মানুষের মধ্যে আড়াইশত কোটি মানুষের উন্নত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নেই। একশ কোটি মানুষ খোলা জায়গায় মল-মূত্র ত্যাগ করেন।
ডাব্লিউটিও’র সর্বশেষ তথ্যমতে, বিশ্বে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মানুষ বর্তমানে সঠিক ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। অর্থাৎ বিশ্বের ৪০ ভাগ মানুষ স্যানিটেশন সুবিধার বাইরে রয়ে গেছে। টয়লেট অপর্যাপ্ততার কারণে প্রতিনিয়ত মানুষ বিভিন্নরকম স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় ভুগছে।
টয়লেট মানেই সেখানে জীবাণুর কারখানা। মানববর্জ্য মল-মূত্রের সাথে মানুষের সংস্পর্শ রোধ করা স্যানিটেশনের একটি অংশ। পায়খানার পরে সাবান দিয়ে হাত ধোওয়া। স্যানিটেশন ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্যই হল একটি পরিচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে মানুষের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করা যাতে জীবাণু সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যায়। ডায়রিয়া, শিশুর অপুষ্টি ও শারীরিক বিকাশে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ার একটি প্রধান কারণ যা উন্নত স্যানিটেশনের মাধ্যমে কমানো সম্ভব। তাই টয়লেট পরিচ্ছন্নভাবে ব্যবহার করা খুবই জরুরি।
নগর মহানগরে বেশীরভাগ পাবলিক টয়লেটের অবস্থাই করুণ। কোনটির দরজা নেই, ছিটকিনি নেই, পর্যাপ্ত আলো-বাতাস নেই, বিদ্যুৎ নেই। অপরিস্কার, ময়লা, দুর্গন্ধ, ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে, ময়লা পানি জমে থাকে, নেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এমন চিত্র স্কুল ও হাসপাতালগুলোতেও। যাও বা কিছু আছে, সেগুলোও ব্যবহার উপযোগী নয়। নারীদের জন্য এসব টয়লেট তো রীতিমত বিভীষিকাময়। অধিকাংশ মানুষ কর্মস্থলে অফিস, আদালতে বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এবং শিশু ও ছেলে-মেয়েরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময় অবস্থান করছে। এসমস্ত প্রতিষ্ঠানের প্রায় অধিকাংশগুলোতেই যে টয়লেট রয়েছে তা ব্যবহার অনুপযোগী ও অপর্যাপ্ত। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যর উপর।
নগর জীবনে পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট থাকলে মানুষের মধ্যে যত্রতত্র মল-মূত্র ত্যাগের সম্ভাবনা কমবে, এতে জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশের উন্নতি ঘটবে। সুতরাং, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় যেমন স্বাস্থ্যকর পাবলিক টয়লেট গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি পরিবেশ রক্ষায়ও পাবলিক টয়লেটের গুরুত্ব অপরিসীম।
স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনে প্রতিটি মানুষেরই চাই ভালো টয়লেট। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, টয়লেটকে এড়িয়ে চলার কোনো সুযোগ কারোরই নেই। টেকসই পয়ঃনিষ্কাশন প্রতিটি মানুষের জন্যই অপরিহার্য। সুস্বাস্থ্যের জন্য বাড়িতে ও কর্মস্থলে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ টয়লেট ব্যবস্থা অত্যন্ত জরুরি।
লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট






বেদেরা বাংলাদেশের অতিপরিচিত প্রান্তিক এক যাযাবর গোষ্ঠী
ভোলা সাইক্লোন ১২ নভেম্বরকে উপকূল দিবস ঘোষণা করা হোক
রাসপূর্ণিমার আধ্য়াত্মিক তাৎপর্য
নিজ শহরকে বসবাসের যোগ্য করে তোলার দায়িত্ব শহরবাসীর
আলোর উৎসব দীপাবলি
নিরাপদ সড়ক সবারই কাম্য
অর্থনৈতিক উন্নয়নে গ্রামীণ নারীদের অবদান ও স্বীকৃতি
মায়াবী সুন্দরবন; বিস্ময়, ভয় আর হাজারো প্রতিকূলতা
মুখোশে চোখ সুন্দরবনে মানুষের জীবনরক্ষার এক অভিনব কৌশল 