শনিবার ● ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » শীতের সবজি একটি বড় অর্থনৈতিক খাত
শীতের সবজি একটি বড় অর্থনৈতিক খাত
প্রকাশ ঘোষ বিধান
শীতকাল সবজির ভরা মৌসুম। বাজারে শীতের সবজির বিপুল সমারোহ। ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মুলা, শালগমসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির সরবরাহ বাড়ছে। বাজারে পণ্যের প্রাচুর্য তৈরি হয়েছে। সারা বছর ধরে বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি পাওয়া গেলেও, শীতকালীন সবজিগুলোর নিজস্ব চাহিদা ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে, যা বাজারের গতিপ্রকৃতিকে প্রভাবিত করে। কৃষকের উৎপাদিত শীতের সবজি একটি বড় অর্থনৈতিক খাত, যা কৃষক ও অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বাজারে শীতের হরেক রকম সবজির বৈচিত্র্যময় পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিতে সবজির বড় ভূমিকা রয়েছে, যদিও সরবরাহে ঘাটতি বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ দামের ওঠানামা ঘটায়। মধ্যস্বত্বভোগীর কারণে খুচরা বাজারে দাম বাড়ে। অনেক সময় আগাম চাষ এবং পরিবহন বা অন্যান্য কারণে দাম বেশি থাকে, যা অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে।
শীতের আগাম সবজি চাষ করে কৃষকরা দ্বিগুণ লাভ করতে পারেন, যেমনটি বগুড়াসহ বিভিন্ন জেলার কৃষকরা করেছেন।এটি গ্রামীণ অর্থনীতিকে সচল রাখে এবং কৃষকদের আয়ের উৎস হয়। শুরুর দিকে আগাম সবজির সরবরাহ কম থাকায় দাম অনেক বেশি থাকে শিম ২০০-২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। সরবরাহ বাড়ার সাথে সাথে দাম কমলেও, অনেক সময় তা ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে আসে না। পরিবহন খরচ এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে খামার পর্যায়ে লাভ বেশি হলেও খুচরা বাজারে দাম চড়া থাকে। এখন প্রতিদিন সবজির সরবরাহ বাড়ছে। ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে সবজির দাম। এখন সব ধরনের সবজির দামই ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে চলে এসেছে।
শীতের সবজি একটি বড় অর্থনৈতিক খাত, যা বিশেষত উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিকে বদলে দিতে পারে। বিভিন্ন গবেষণা চলছে সবজির উৎপাদন খরচ, লাভ এবং প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা নিয়ে।
বন্যা বা অতিবৃষ্টির কারণে উৎপাদন ব্যাহত হলে সরবরাহ কমে যায় এবং দাম বাড়ে। খামার থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছানোর পথে দামের অস্বাভাবিক তারতম্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অর্থনীতিতে শীতকালীন সবজির ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
শীতের সবজি শুধু খাদ্য নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক চালিকাশক্তি যা কৃষক, ব্যবসায়ী ও ভোক্তার জীবনকে প্রভাবিত করে, তবে সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা এর স্থিতিশীলতার জন্য জরুরি।
শীতকাল বাংলাদেশে সবজি উৎপাদন এবং অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির প্রাচুর্য দেখা যায়।
শীতকালে বাংলাদেশে প্রধানত যে সকল সবজি চাষ করা হয় তার মধ্যে রয়েছে। আলু: এটি শীতের একটি প্রধান ফসল এবং সারা বছর এর চাহিদা থাকে। টমেটো: শীতকালে টমেটোর ফলন ভালো হয় এবং এটি সালাদ ও রান্নায় বহুল ব্যবহৃত। ফুলকপি ও বাঁধাকপি: এই দুটি সবজি শীতের জনপ্রিয় পদ। মটরশুঁটি: এটি শীতকালীন সবজি, যা বিভিন্ন তরকারিতে ব্যবহার করা হয়। গাজর ও বিট: সালাদ এবং হালুয়া তৈরিতে গাজর ব্যবহৃত হয়। শিম: এটিও শীতকালীন জনপ্রিয় সবজি। পালং শাক ও লাল শাক: এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের শাকের চাষ হয়। বাজারে মূলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, পুঁইশাক, লাউ, চাল কুমড়া, পালংশাক, মিষ্টিকুমড়াসহ শীতের নানাজাতের নতুন নতুন সবজির সমারোহ। এছাড়াও বেগুন, মুলা, লাউ, পেঁয়াজ পাতা, ধনে পাতা ইত্যাদি শীতকালে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে শীতকালীন সবজির প্রভাব অনেক। শীতকালীন সবজি চাষ গ্রামীণ অর্থনীতিতে একটি বড় ভূমিকা রাখে এবং দেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) কৃষি খাতের অবদান বাড়াতে সাহায্য করে। সবজি চাষ, সংগ্রহ এবং বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়, যা বেকারত্ব কমাতে সাহায্য করে।
বর্তমানে দেশে বার্ষিক মোট সবজি উৎপাদন হয় ২২ লাখ টন। দেশে বর্তমানে প্রায় আট লাখ হেক্টর জমিতে বছরে প্রায় ২০ লাখ টনের অধিক সবজি উৎপাদন হচ্ছে। গত তিন দশকে দেশে সবজির উৎপাদন বেড়েছে তিন গুণের বেশি।শীতকালে এখন মোট উত্পাদনের প্রায় ৫২ শতাংশ সবজির উত্পাদন সম্ভব হচ্ছে। বাকি ৪৮ শতাংশ সবজির উত্পাদন হচ্ছে গ্রীষ্মকালে। শীতকালীন সবজিগুলোর মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, গাজর, লেটুস, পালংশাক, ব্রকলি, শালগম, টম্যাটো, মুলা, লাউ, বেগুন ও শিম অন্যতম। গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে আছে ঢ্যাঁড়শ, পটোল, মিষ্টি কুমড়া, কাকরোল, চিচিঙ্গা,ঝিঙা, ডাটা, লালশাক, পুঁইশাক, করলা, শসা ইত্যাদি। কিছু সবজি উভয় মৌসুমেই জন্মে অর্থাত্ সারা বছরই উত্পাদিত হয়। এগুলোর মধ্যে আছে বেগুন, কচু, পেঁপে, কাঁচকলা, শজিনা ইত্যাদি। বাংলাদেশ বর্তমানে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সবজি রপ্তানি করছে বিদেশে। বছরের পর বছর এর পরিমাণ ও আয় বাড়ছে।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, ডেনমার্ক, সুইডেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ওমান ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশে বাংলাদেশের ৫০ জাতের সবজি ও ফলমূল রফতানি হচ্ছে। দেশের চাষযোগ্য জমির মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশে শাকসবজি চাষ হয়। দেশে ৬০ ধরনের ও ২০০ জাতের সবজি উৎপাদিত হচ্ছে। এসব সবজির ৯০ শতাংশ বীজ দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতি বছর উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে ৪০ ভাগ সবজি নষ্ট হচ্ছে। সুতরাং সব ক্ষেত্রে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। কার্গো বিমান চালু, বিদেশি বিমানগুলোয় পণ্য রফতানির ব্যবস্থা গ্রহণ, যেসব দেশে এসব পণ্যের বাজার আছে সেসব দেশে ফ্লাইট বাড়ানো, চলমান ভর্তুকি অব্যাহত রাখাসহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া গেলে এ খাতে আরো বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
উন্নত মানের সবজি বিদেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশী সবজির চাহিদা রয়েছে । সবজির প্রাচুর্য মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটায় এবং খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখে। শীতকালে সবজির সরবরাহ বাড়ায় দাম কমে আসে, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। সামগ্রিকভাবে, শীতকালীন সবজি বাংলাদেশের কৃষি, পুষ্টি এবং অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট






প্রাকৃতিক ভারসাম্য, সৌন্দর্য ও উন্নয়নে পর্বত অপরিহার্য
পরিযায়ী পাখির সুরক্ষা দেওয়া আমাদের সকলের দায়িত্ব
মানবকল্যাণে মৃত্তিকার গুরুত্ব
প্রতিবন্ধী নাগরিক সমাজের বোঝা নয়
আন্তর্জাতিক পুরুষ দিবস
দর্শকদের কাছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম টেলিভিশন
জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় টয়লেটের গুরুত্ব অপরিসীম
বেদেরা বাংলাদেশের অতিপরিচিত প্রান্তিক এক যাযাবর গোষ্ঠী
ভোলা সাইক্লোন ১২ নভেম্বরকে উপকূল দিবস ঘোষণা করা হোক 