শিরোনাম:
পাইকগাছা, বৃহস্পতিবার, ২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

SW News24
মঙ্গলবার ● ১৬ জুন ২০২০
প্রথম পাতা » উপকূল » আম্ফান জলোচ্ছ্বসঃ লোনা পানির নাকানি চুবানি কয়রার জনজীবন।
প্রথম পাতা » উপকূল » আম্ফান জলোচ্ছ্বসঃ লোনা পানির নাকানি চুবানি কয়রার জনজীবন।
৭০০ বার পঠিত
মঙ্গলবার ● ১৬ জুন ২০২০
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

আম্ফান জলোচ্ছ্বসঃ লোনা পানির নাকানি চুবানি কয়রার জনজীবন।

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান ঃ পানিতে ডুবে আছে ঘর। উঠানে বুক সমান পানি। ঘর ডুবে যাওয়ায় কয়রার গোবরা বাজারের দোকান ঘরে উঠেছে ইসরাফিল হোসেন সরদার। দোকানের মেঝেতে পাতা চৌকিটাও পানিতে ডুবে আছে। জোয়ারের পানিতে ডুবে যায় ভাটায় মেঝের পানি কিছুটা মেনে যায়। তারই উপারে বসবাস। ইসরাফিলের স্ত্রী আকলিমা বেগম চৌকির উপর পাতানো চুলায় দিনে রাতে একবার রান্না করতে পারে। চৌকির উপরে রান্না, খাওয়া ও ঘুমানো। রাতে স্ত্রী আকলিমা ছেলে মেয়ে নিয়ে চৌকির উপরে ঘুমায়। জায়গা না হওয়ায় ডুবান্ত ঘরের পাশে ডিঙ্গি নৌকার উপর ইসরাফিলর ঘুমানোর জায়গা। ইসরাফিল কখনো দিন মজুর, কখনো মাছের ব্যবসা করে। তার সংসার ভালোই চলছিলো। আম্ফানে বাঁধ ভেঙ্গে লোনা পানিতে ছয়লব হয়ে হয়ে যাওয়ায় কোন কাজকর্ম নেই। টানাটানি জীবনে নেমে এসেছে বিপর্যয়।

গোবরা গ্রামের ইট বিছানো পথ জোয়ারের সময় কোথায় থাকে হাঁটু পানি, কোথাও কোমর পানি। রাস্তার দুই ধারের ঘরবাড়ীগুলো পানির নিচে ডুবান্ত। ডুবে থাকা বাড়ীর চলাচলের পথের উপরে বাঁশের সাঁকো দেওয়া হয়েছে। সাঁকো দিয়ে বাড়ী থেকে চলাচল করছে। সাঁকো এখনো চলাচলের পথ। ঘরের ভিতর মাঁচা তৈরী করে কোন রকমে তার উপরে বসবাস। গোবরা, হরিণটানা গ্রামের রাস্তার দু’ধারে পানি থই থই করছে। পানিতে ডুবে আছে ঘরবাড়ী, মৎস্য ঘের, ফসলের ক্ষেত। ---

গোবরা ঘাটাখালী ভাঙ্গা বাঁধের পার্শ্বে দিন মজুর গণি সরদারের বাড়ী। তার স্ত্রী মাকছুদা পানিতে কাজ করছে। তার ঘরের মেঝে পানিতে ডুবু ডুবু করছে। তিনি বলেন, লবন পানিতে সব তলানো। সারা দিন পানি মধ্যে থাকি। যাওয়ার তো জায়গা নেই। ঘরের মধ্যে পানি। ফসল ক্ষেত, টয়লেট, চলার পথ সবকিছু ডুবে আছে। পানির কলটাও ডুবে গেছে। খাওয়ার পানির খুবই সমস্যা। অনেক কল নষ্ট হয়েছে গেছে। ভাটার সময় দুরের কল থেকে পানি আনতে হয় লবন পানি সাঁতরাইয়ে।---

নাজুক বেঁড়িবাঁধ গুলি ভেঙ্গে গ্রামের পর গ্রাম লবন পানিতে তলিয়ে গেছে। বিপর্যয় নেমে এসেছে জনজীবনে। ঘরের ভিতরে পানি, রাতে ঘুমানোর সমস্যা। খোলা আকাশের নিচে বাঁধের উপর ঘুমাতে হয়। টয়লেট ডুবে থাকায় অপেক্ষা করতে হয় ভাটার কখন পানি কমে যাবে। পানি কমলে টয়লেটে যাওয়া। গোসল করতে হয় লোনা পানিতে। কখনো কলের পানিতে। গোবরা গ্রামের অতিশয়পর বৃদ্ধ ইমান আলী (৯৫) জানান, জীবনে কত ঘুর্ণিঝড় দেখলাম, কিন্তু এমন ঝড় দেখিনি। লবন পানিতে সব তলিয়ে গেছে। পানি নামছে না। লবন পানিতে নেমে কলের পানিতে কোন রকমে ভাটার সময় গোসল করতে হচ্ছে। হাজতখালীর ভাঙ্গা বাঁধের পার্শ্বে ছোট বাচ্চাদের লবন পানি থেকে বাঁচাতে ড্রামের ভিতরে পানি দিয়ে গোসলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপকূলের জীবন যাপনের তৈরী হয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। ---

কয়রার উত্তরবেদকাশী ইউনিয়নের হাজতখালী গ্রামে পানিতে তলানো। গোটা গ্রামবাসী হাজতখালীর বেঁড়িবাঁধের উপরে। কোন বাঁধের উপর কোন জায়গা নেই। যে যেখানে পেরেছে সে সেখানে খুপড়ি ঘর বানিয়ে বসবাস করছে। হাজতখালী স্লুইজ গেট থেকে কাশিরহাটখোলা পর্যন্ত বাঁধ ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেয়েছে। মাত্র আধা কিলোমিটার বাঁধে কয়েকশ পরিবার ঘর বেঁধেছে। খাবার পানি, টয়লেট, রান্নার জায়গা, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি সবকিছু মিলেমিলে একাকার। মানুষ খাদ্য ও খাবার পানি সংকটে ভুগছে। ---

কয়রার বেঁড়িবাঁধ ভেঙ্গে গোটা এলাকা পানিতে তলিয়ে আছে। উপজেলা পরিষদও তলানো। লোনা পানি ঢোকার মিষ্টি পানির আধার নষ্ট হয়েছে। অকেজো হয়েছে উপজেলার নয়শত নলকুপ। তাছাড়া ব্যক্তিগত আরও তিনশত নলকুপ নষ্ট হয়েছে। ফলে খাবার পানির তিব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ২০০৭ সালের ১৫ই নভেম্বর সিডরের জলোচ্ছ্বসের পর পানি দ্রুত নেমে গিয়েছিল। ২০০৯ সালে আইলার জলোচ্ছ্বসের পানিও দ্রুত মেনে যায়। ২০১৯ সালে ঘুর্ণিঝড় ফনি ও বুলবুলের আঘাতে তেমন ক্ষতি হয়নি। কিন্তু গত ২০মে আম্ফানের তান্ডবে বাঁধ, ঘরবাড়ী, রাস্তা, ফসলের ক্ষেত সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে যায়। উপজেলার কয়রা সদর, উত্তরবেদকাঁশী, দক্ষিণদেবকাঁশী ও মহারাজপুর ইউনিয়নের ৫২টি গ্রামে বিশুদ্ধ পানির তিব্র সংকট দেখা দিয়েছে। অন্য তিনটি ইউনিয়নেরও আংশিক এলাকায় পানি সংকট রয়েছে। খুলনা জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহে কয়রা সদরে দুইটি ভ্রাম্যমান প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। প্রশাসনের লোকজন সদর থেকে বিশুদ্ধ পানি নিয়ে প্রত্যন্ত এলাকায় পৌছে দিচ্ছে। তাছাড়া চলতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি পানি সংরক্ষনের জন্য ২৩৮টি তিন হাজার লিটার ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন পানির ট্যাংকি দূর্গত এলাকায় বিতরন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জাতীয় সংসদ সদস্য মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু জানান, ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সেবা দিতে সরকারি সার্বিক সহযোগীতা অব্যাহত আছে এবং খাওয়ার পানি পেতে কাউকে কষ্ট পেতে না হয় সে জন্য সকল সুবিধা পেতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রানলয়ে যোগযোগ করেছেন। তিনি আরও জানান, লবন পানি মুক্ত হলে ক্ষতিগ্রস্থ ৩২টি গ্রামে গভীর নলকুপ, পুকুর খনন, পানির প্লান্ট নির্মান ও বৃষ্টি পানি সংরক্ষনের জন্য বিপুল পরিমান পানির ট্যাংকি সরবরাহ করা হবে। ---

লোনা পানিতে ভাসছে কয়রা। গোটা এলাকা পানিতে থই থই। লবন পানির নাকানি চুপানি খেয়ে জীবন যাপন করছে কয়রা বাঁধ ভাঙ্গা এলাকার মানুষ। জনজীবনে নেমে এসেছে বিপর্যয়। দুর্গত এলাকার মানুষের কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু প্লাবিত লবন পানির কবে শুকাবে সে অপেক্ষায় দিনপার করছে। লবন পানিতে বসবাস তাদের করে শেষ হবে সে অপেক্ষায়।





উপকূল এর আরও খবর

উপকূলের সংকট নিরসনে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান উপকূলের সংকট নিরসনে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান
বঙ্গোপসাগরে বৈরী আবহাওয়ায় চারদিন যাবৎ;মাছধরা বন্ধ দুবলারচরে হাজার হাজার জেলে অলস সময় পার করছেন বঙ্গোপসাগরে বৈরী আবহাওয়ায় চারদিন যাবৎ;মাছধরা বন্ধ দুবলারচরে হাজার হাজার জেলে অলস সময় পার করছেন
পাইকগাছায় উপকূল দিবস পালিত পাইকগাছায় উপকূল দিবস পালিত
১২ নভেম্বর উপকূল দিবস ঘোষিত হোক ১২ নভেম্বর উপকূল দিবস ঘোষিত হোক
উপকূলের সংকট নিরসনে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন উপকূলের সংকট নিরসনে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন
বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণে জন্য পাইকগাছার জেলে পল্লীতে ট্রলার তৈরির ধুম বঙ্গোপসাগরে মাছ আহরণে জন্য পাইকগাছার জেলে পল্লীতে ট্রলার তৈরির ধুম
পাইকগাছা শিবসা নদীর চরে আড়াই মন ওজনের শুশুক উদ্ধার পাইকগাছা শিবসা নদীর চরে আড়াই মন ওজনের শুশুক উদ্ধার
উপকূলীয় অঞ্চলকে দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করার দাবী উপকূলীয় অঞ্চলকে দুর্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করার দাবী
জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনার উপকূলীয় এলাকা পরিদর্শন করলেন বেলজিয়ামের রানি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত খুলনার উপকূলীয় এলাকা পরিদর্শন করলেন বেলজিয়ামের রানি
শ্যামনগরে উপকূল দিবসে উপকূলের মানুষের বাঁচার দাবী শ্যামনগরে উপকূল দিবসে উপকূলের মানুষের বাঁচার দাবী

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)