শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

SW News24
বুধবার ● ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » উপকূল » সাগরে মাছ ধরতে যেতে পাইকগাছার জেলে পল্লীতে ব্যাপক প্রস্তুতি
প্রথম পাতা » উপকূল » সাগরে মাছ ধরতে যেতে পাইকগাছার জেলে পল্লীতে ব্যাপক প্রস্তুতি
৪৩৯ বার পঠিত
বুধবার ● ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

সাগরে মাছ ধরতে যেতে পাইকগাছার জেলে পল্লীতে ব্যাপক প্রস্তুতি

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছাঃ করোনার প্রভাব আর মহাজনের চড়াসুদে দাদনে টাকা নিয়ে জীবিকার তাগিতে আশা-হতাশায় সাগর যাত্রার প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলেরা। শীত মৌসুমে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য পাইকগাছার জেলে পল্লীগুলোতে এখন ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। নতুন ট্রলার তৈরি এবং পুরাতন ট্রলার মেরামত, জাল বুনা ও জাল শুকানোর কাজের ধুম পড়ে গেছে। জেলে পল্লীর নারী-পুরুষ ও শ্রমিকরা সুন্দরবনের দুবলার চরে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র গোছাতে কর্মব্যস্ত দিন কাঁটাচ্ছে। সুন্দরবন ও সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার পস্তুতির মধ্য বিরাজ করছে তাদের সারা বছরের জীবিকা অর্জনে আশা-হতাশায় মধ্যে এক খুঁশির আমেজ।--- পাইকগাছা উপজেলার বোয়ালিয়া, হিতামপুর, মাহমুদকাটী, নোয়াকাটি, কপিলমুনি, কাটিপাড়া, রাড়লী, শাহাপাড়া, বাঁকাসহ বিভিন্ন গ্রামের জেলে পল্লী থেকে প্রায় ২৫০টি ট্রলার সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।এ সব কাজে বাড়ীর শিশুরাও সহযোগীতা করছে। নতুন ট্রালার তৈরি, পুরাতন ট্রলারগুলো সংস্কার, জালবুনা, লোহার নোঙ্গর/গ্রাফি, ট্রলারের রং করা, জালে গাবকুটে তার রস লাগানো সহ সমুদ্রে যাওয়ার বিভিন্ন কাজ কর্ম নিয়ে জেলে পল্লীর নারী-পুরুষরা ব্যস্ত দিন কাঁটাচ্ছে।---

উপজেলার বোয়ালিয়া মালোপাড়া সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, জেলাপাড়ার নারী-পুরুষ সকলেই সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। মালোপাড়ায় ৬টি নতুন ট্রলার তৈরী করার কাজ চলছে। মিস্ত্রীরা দিন রাত ট্রলার তৈরী কাজে নিয়োজিত রয়েছে। ট্রলার তৈরী নিয়ে মালো পাড়ায় তৈরি হয়েছে উৎসব মূখর পরিবেশ। মালো পাড়ার বিশ্বজিত বিশ্বাস, পঙ্কজ বিশ্বাসসহ আরো অনেকে নতুন ট্রলার তৈরী করছে। তাছাড়া দিপংকর বিশ্বাস, সিতেরাম বিশ্বাস, তাপস বিশ্বাস, দয়াল মন্ডল তাদের পুরাতন ট্রলারগুলি মেরামত করছে। কপোতাক্ষ নদের তীরে বোয়ালিয়া ব্রীজের দুই পাশে ট্রলার তৈরী ও মেরামতের কাজ চলছে। বোয়ালিয়া মালোপাড়ার বিশ্বজিত বিশ্বাস জানায়, সমুদ্রে মাছ ধরতে য়েতে ১টি  ট্রলার তৈরি করছে। নতুন ট্রলার তৈরী করতে সর্বমোট খরচ পড়ছে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। মহাজনের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়েছে, সাগরে মাছ ধরে তা বিক্রি করে টাকা শোধ করবে বলে তিনি জানান। ট্রালার তৈরি করতে বিভিন্নস্থান থেকে মিস্ত্রী আনতে হয়। সাতক্ষীরা জেলার দরগাপুর শেখ জিল্লাহ, শেখ জহিরুল মিস্ত্রী ট্রলার  তৈরির কাজ করছেও পাইকগাছার মাহমুদকাটির ইন্দ্রজিত সহ ৫ জন সহকারি মিস্ত্রী ট্রলার তৈরির কাজ করছে। ট্রলার তৈরিতে মিস্ত্রীদের থাকা খাওয়া বাদে প্রতিটি নতুন ট্রলার তৈরী বাবদ মজুরী ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। ৬০ ফুট লম্বা ১৭ ফুট চওড়া একটি ট্রলার তৈরি করতে প্রায় ৫শ সেফটি কাঠ লাগছে। সব কাট দিয়ে ট্রলার তৈরি হয় না। এলাকায় পাওয়া যায় এমন চম্বল, বাবলা, লিছু, ছবেদা, মেহগনী ও খৈ কাঠ দিয়ে তারা ট্রলার তৈরি করছে। প্রতি সেফটি খৈ বাবলা ও চম্বল কাঠ ৬শ টাকা থেকে ১৫শ টাকা দরে ক্রয় করেছে। নতুন ট্রালার তৈরির পর তাতে রং করতে প্রায় ২শ কেজি আলকাতরা লাগে। পুরাতন ট্রলার মেরামত করতে ২০-৭০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। একটি নতুন ট্রলারে প্রায় ৩ মন পেরেক, ১শ কেজি জলই/পাতাম প্রয়োজন হয়। ট্রালার তৈরি পর ইঞ্জিন বসাতে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। প্রতিটি ট্রলারে জাল ধরার জন্য ২টি করে নোঙ্গর প্রয়োজন হয়। লোহার তৈরী নোঙ্গর তৈরী করতে খরচ পড়ছে ২৮ হাজার টাকা। প্রতিটি মাছ ধরার জাল তৈরি করতে তাদের খরচ হচ্ছে ৯০ হাজার থেকে ১লাখ টাকা। সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য প্রতি ট্রলারে ২টি জাল প্রয়োজন হয়। প্রতি ট্রলারে জাল ধরার জন্য ৮/১০ জন কর্মচারীর প্রয়োজন হয়। তাদের থাকা-খাওয়া বাদে প্রতি মাসে ১০/১২ হাজার টাকা বেতন দিতে হয়। সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য ট্রলার প্রতি ৫/৬ মাসে সব কিছু মিলে খরচ পড়ে প্রায় ৭/৮ লাখ টাকা।মালো পাড়ার সিতেনাথ বিশ্বাস ,কিনা বিশ্বাসসহ আরো অনেকে জানান, শীত মৈসুমে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য প্রচুর টাকার প্রয়োজন হয়। ৫ থেকে ৬ মাসের জন্য দুবলার চরে অস্থায়ী জেলে পল্লীতে বাসা বেধে থাকা ও মাছ শুকানোর আড়ত তৈরী করতে হয়। এর জন্য অনেক টাকার দরকার পড়ে। সব টাকা নিজের না থাকায় এলাকার বিভিন্ন মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা দাদন নিতে হয়। ৫ থেকে ৬ মাসের জন্য তারা দাদন নিলেও ১ বছরের হিসাবে টাকা দিতে হয়। প্রতি ১ লাখ টাকায় মহাজনদের প্রতি মাসে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা সুদ দিতে হয়।--- জেলে পাড়ার অজয় বিশ্বাস জানান, সরকার আমাদের ব্যাংকের মাধ্যমে ঋৃণের ব্যবস্থা করত তাহলে মাছ ধরে উপার্জিত টাকা ঘরে ফিরে আনতে পারতাম।তানা হলে মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া চড়া সুদের টাকা শোধ করার পর উপার্জিত টাকা ঘরে ফিরে আসে না।তাই জেলে পরিবাররা সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছে, শীত মৌসুমে মাছ ধরতে যাওয়া সময় জেলেদেরকে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হয়। তাহলে তারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতা ফিরে পাবে।

জেলেরা বিভিন্ন মহাজনের অধীনে থেকে সমুদ্রে মাছ ধরতে যায়। মহাজনরা জেলেদের পাস পারমিট করে রাখে। মংলা থেকে পাস নিয়ে জেলেরা মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য দুবলার চরে রওনা দেয়। মংলা হয়ে বলেশ্বর নদী দিয়ে দুবলার চরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।তবে মোংলা ঘুরে দুবলার চরে যেতে পাইকগাছার জেলেদের প্রায় ৩ দিন বাড়তি সময় লাগে এবং খরচ বেড়ে যায় দ্বিগুন বলে জেলেরা জানায়।---

সমুদ্রে যাওয়া জন্য বন বিভাগ থেকে পাশ পারমিট নেয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে। সব কিছু ঠিক থাকলে দূর্গা পূজা শেষে জেলেরা মাছ ধরার জন্য সুন্দরবনের দুবলার চরের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। সূত্রে জানাগেছে, বন সুরক্ষার জন্য বনের ১৩টি চর নিয়ে জেলেরা যে মৎস্য পল্লী তৈরি করে তা এ বছর সীমিত করা হতে পারে বলে জানা গেছে। সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, বঙ্গোপসাগর উপকূলে মাছ ধরার মৌসুম শুরু হতে যাচ্ছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলে বন বিভাগ সে মত তারা সব রকম ব্যবস্থা গ্রহন করবে বলে জানান।---

বোয়ালিয়া জেলে পল্লীর দিপংকর বিশ্বাস ও বিশ্বজিৎ বিশ্বাস জানায়, দূর্গা পূজার পর উপজেলার সকল ট্রলার এক সঙ্গে রওনা দিবে। মংলা হয়ে সুন্দরবনের দুবলার চরে গিয়ে বাসা বেঁধে অবস্থান নিবে। জীবিকার জন্য প্রতি বছর সুমুদ্রে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বনদস্যু ও জলদস্যুদের সাথে জেলেদের জীবন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হয়। মাছ ধরার জন্য গভীর সমুদ্রে ভয়ংকর,বিক্ষুদ্ধ উত্তাল ঢেউয়ের সংগে যুদ্ধ করে জেলেদের জাল ফেলে মাছ ধরতে হয়। জেলে পল্লী মানুষের আয়ের উৎস্য সমুদ্রে মাছ ধরা। তবে এটা জেন তাদের নেশা ও পেশা হয়ে দাড়িয়েছে। এতো বিপদের সংগে লড়াই করে তাদের জীবিকা অর্জন করতে হয়।তাই জেলে পল্লীর নারী-পুরুষ সবাই মিলে প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র তৈরী ও গোছাতে দিন রাত কাজ করছে। এই নিয়ে জেলে পল্লীগুলোতে সাগর যাত্রার মহাকর্মযজ্ঞর প্রস্তুতির চলছে ।





উপকূল এর আরও খবর

পাইকগাছায় রেমালের তান্ডবে দেলুটির ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র পাইকগাছায় রেমালের তান্ডবে দেলুটির ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র
ঘুর্নিঝড় রেমাল এর তান্ডবে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পাইকগাছা লন্ডভন্ড; ৭২ কোটি টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি ঘুর্নিঝড় রেমাল এর তান্ডবে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে পাইকগাছা লন্ডভন্ড; ৭২ কোটি টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষতি
ঘূর্ণিঝড় আইলা’র ১৫ বছর ; উপকূলবাসীকে আজও কাঁদায় ঘূর্ণিঝড় আইলা’র ১৫ বছর ; উপকূলবাসীকে আজও কাঁদায়
ঘূর্ণিঝড় রেমান এর চোখ রাঙানীতে উপকূলের মানুষ আতঙ্কিত ঘূর্ণিঝড় রেমান এর চোখ রাঙানীতে উপকূলের মানুষ আতঙ্কিত
ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে
উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে উপকূলের ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে উৎকণ্ঠা বাড়ছে
পলিথিনমুক্ত উপকূল অঞ্চল গঠনে শ্যামনগরে জেন্ডার সমতা ও জলবায়ু জোটের সভা অনুষ্ঠিত পলিথিনমুক্ত উপকূল অঞ্চল গঠনে শ্যামনগরে জেন্ডার সমতা ও জলবায়ু জোটের সভা অনুষ্ঠিত
উপকূলের সংকট নিরসনে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান উপকূলের সংকট নিরসনে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান
বঙ্গোপসাগরে বৈরী আবহাওয়ায় চারদিন যাবৎ;মাছধরা বন্ধ দুবলারচরে হাজার হাজার জেলে অলস সময় পার করছেন বঙ্গোপসাগরে বৈরী আবহাওয়ায় চারদিন যাবৎ;মাছধরা বন্ধ দুবলারচরে হাজার হাজার জেলে অলস সময় পার করছেন
পাইকগাছায় উপকূল দিবস পালিত পাইকগাছায় উপকূল দিবস পালিত

আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)