![দোল পূর্ণিমা](https://www.swnews24.com/cloud/archives/2021/03/download4-micro.jpg)
![SW News24](https://www.swnews24.com./cloud/archives/fileman/logo.jpg)
শুক্রবার ● ২৭ জানুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » মিডিয়া » সাংবাদিকতায় নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা
সাংবাদিকতায় নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা
প্রকাশ ঘোষ বিধান=
জনজীবনে গণমাধ্যমের প্রভাব অপরিসীম। সংবাদপত্রকে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার অনিবার্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। রাষ্টের চতুর্থ স্তম্ভ হলো গণমাধ্যম, আর সাংবাদিকদের বলা হয় জাতীর বিবেক। তাই সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে সাংবাদিকের পাঠকদের কাছে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ও সংবাদ তুলে ধরাই মূল লক্ষ্য।
বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় বিভক্তি নতুন কোনো বিষয় নয়। বিএফইউজে, ডিএফইউজে ভাগাভাগি হয়েছে। আর তাছাড়া দেশে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠণ গড়ে উঠেছে। তাদের কেন্দ্র কমিটি, জেলা কমিটি, উপজেলায় কমিটি ও ইউনিয়ন কমিটি করা হচ্ছে। কমিটি করতে সাংবাদিক প্রয়োজন, আর এ সুযোগে আলু-পটল বিক্রেতা, পান ব্যবসাহী, শ্রমিক মজুর সাংবাদিক সেজে কার্ড গলায় ঝুলিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এখন প্রায় প্রতিটি জেলায় ও উপজেলায় সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। এই বিস্তার এখন ইউনিয়ন পর্যন্ত ছড়াচ্ছে। দেশে সাংবাদিকদের সংগঠন ব্যাঙের ছাতার মত তো বাড়ছে আর সেই সাথে সংবোদিকের সংখ্যা। তবে নৈতিকতাটা দিন দিন আরও তলানিতে নামছে।
বাংলাদেশে এখন অনলাইন মিডিয়ার ছড়াছড়ি। প্রায় প্রতিটি উপজেলা ও ইউনিয়নে কয়েকটি অনলাইন মিড়িয়া আছে। এমনকি ফেসবুক পেজ মিড়িয়ার নাম দিয়ে চালানো হচ্ছে। এতে সাংবাদিকদের সংখ্যা বাড়ছে প্রত্যন্ত এলাকায়। এসব সাংবাদিকের অনেকে টাকাকড়ি কামানোর ধান্দাও করছেন। ফলে এরা পথভ্রষ্ট হচ্ছেন। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চাইছেন। বিশেষ করে ফেসবুক ও অনলাইন মিডিয়াগুলোর কোনোটিতে গসিপ নিউজের বন্যা বইয়ে দেয়া। পত্রিকায় চোখ রাখুন অমুক বা তমুকের বিরুদ্ধে নিউজ হচ্ছে, আসছে সিরিজ নিউজ। এটা কি রিপোর্টিং না কোন উদ্দেশ্য প্রণোদিত। না কি এটি কি চাঁদা নেয়ার সংকেত, না হুমকি! তবে এ আগাম বার্তার কোন নিউজ পত্রিকার পাতায় দেখা যায় না। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হলো ব্লাকমেইলিংয়ের। আর চাঁদা না দিলে ভিত্তিহীন রিপোর্ট করা হচ্ছে। আর ভয় ভিতি হুমকি পর হুমকি। পাড়া থেকে শুরু করে গ্রামে গড়ে উঠছে এক ধরনের সাংবাদিক। ফেসবুকে, অনলাইন মিডিয়ায় এদের কারো কারো ভিজিটিং কার্ড দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। তাদের অনেক পদবি। নিজে নামের সঙ্গে টাইটেল জুড়ে দিয়ে কার্ডের প্রচার। সাধারণ মানুষকে ভয় দেখানো ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসাবে জাহির করা তাদের প্রধান কাজ। আর এসব নামধারি সাংবাদিকদের প্রশ্রায় দিচ্ছে কিছু সিনিয়র সাংবাদিক তার দল ভারি করার জন্য। মোটরসাইকেল, গাড়ির পেছনে সাংবাদিক লিখে পার পেয়ে যাচ্ছে অনেক চোরাকারবারি, মাদক ব্যবসায়ী, দালালচক্র। এমন সাংবাদিকতা কোন নৈতিকতার আওতায় পড়ে না। তবে এখানে নির্বিকার সরকারি আইন প্রয়োগকারী বাহিনী।
সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। আর সাংবাদিকরা সমাজের জন্য অনেক কিছুই পারেন। সৎ সাংবাদিকতার অন্যতম শক্তি এরা কোনোভাবেই রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট নয়। আর তাই তাদের চোখ খোলা, কান সজাগ। বাংলাদেশে এমন নৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠতে পদে পদে বাঁধা পাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে- রাজনীতিকরা সাংবাদিকদের প্রলোভন দেখিয়ে ব্যবহার করে নেন। তারা নিজেদের প্রয়োজনে সাংবাদিকদের ব্যবহার করেন। সাংবাদিকের নৈতিকতা ভুলে লোভে পড়ে সমাজ তথা সাধারণ মানুষের ক্ষতি করছে। ধনী লোক, শিল্পপতি, বিখ্যাত ব্যক্তিদের কোনো বিপদে ফেলতে পারলে অনেক সাংবাদিক উল্লসিত হন। তাদের সেই উল্লাস প্রতিফলিত হয় তাদের লেখায়। এটা সাংবাদিকের বিকৃত ও অসুস্থ মানসিকতার প্রকাশ। এ ধরনের মানসিকতা সাংবাদিকতা পেশার জন্য উপযুক্ত নয়। সাংবাদিকের দৃষ্টি হবে বস্তুনিষ্ঠ। তিনি লিখবেন সত্যের পক্ষে, তথ্য ও প্রমাণ দিয়ে । রিপোর্টে কাউকে অভিযুক্ত করা হলে তাতে অবশ্যই সেই অভিযুক্তের বক্তব্য থাকতে হবে। অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেয়া সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী। তার লেখার সাথে উভয় পক্ষের বক্তব্য প্রকাশ করা তাঁর প্রধান র্কতবের মধ্যে পড়ে। যা সঠিক ভাবে পালন করা হয় না, আর এমন অসৎ সাংবাদিকরা ভিত্তিহীন মনগড়া নিউজ করে সমাজ তথা জাতি ও রাষ্ট্রকে বিভ্রান্ত করছে।
সাংবাদিকতা করার আগে এর বেসিক বিষয়গুলো জানা দরকার। বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রগতির পেছনে সাংবাদিকতার অনেক অবদান রয়েছে। অন্য সব পেশার তুলনায় সাংবাদিকতা মহৎ পেশা। নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বই সাংবাদিকতার মূল শক্তি। সু-সাংবাদিকতার প্রাণশক্তি হলো সংশ্লিষ্ট পত্রিকার কর্মীরা। সম্পাদক তার নেতৃত্ব দেন। একজন সাংবাদিক খুব নৈতিক হওয়ার পরও পেশাদারিত্ব বজায় না রাখলে অথবা পেশাদারিত্ব থাকার পরও নৈতিক না হলে সাংবাদিকতা হয় না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকদরা দক্ষ হয়। বর্তমান সময়ে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সাংবাদিক হিসেবে অনেকেই সততা ধরে রেখেছেন, এটি প্রশংসনীয়।
গণমাধ্যমের একটা নীতিমালা থাকে। সেটা সম্পাদকীয় নীতি। আর গণমাধ্যমের মালিক পক্ষ তাদের পছন্দমতো কিছু নীতি ঠিক করতে পারে। সেই নীতির আলোকেই প্রতিটি গণমাধ্যম পরিচালিত হয়। গণমাধ্যমে কর্মরত সব সাংবাদিক সেই নীতি অনুসরণ করেই কাজ করে থাকেন। এটা মোটামুটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। প্রত্যেক গণমাধ্যমের একটা নৈতিকতা থাকে। ইংরেজিতে যাকে বলে এথিকস। গণমাধ্যমের নীতি যাই হোক না কেন, এথিকস তাকে মেনে চলতেই হবে। এটাও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।
অন্য সব পেশার মধ্যে থেকে সাংবাদিকতা মহৎ পেশা। স্বাধীন চিন্তা করার সুযোগ আছে সে জন্যই সাংবাদিকরা মহৎ হয়ে ওঠেন। সাংবাদিককে সবসময় নিবিড় পর্যবেক্ষণ নিয়ে এগিয়ে যেতে হয়, যা প্রতিনিয়তই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উপযুক্ত হতে হয়। তবে দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে বহুমুখী কাজে পারদর্শী হওয়া এখন যুগের দাবি। না হলে আপনাকে ফেলে যুগ এগিয়ে যাবে।
একজন সৎও আর্দাশবান সাংবাদিক হিসাবে আস্থা গড়ে উঠতে বছরের পর বছর সময় লাগে, তবে এ আস্থা নষ্ট হতে কোনো একটি সংবাদই যথেষ্ট। সাংবাদিকদের ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও ভিন্নমত প্রকাশের সাহস রাখতে হয়। এর মাধ্যমেই একটি সমাজের স্থায়িত্ব বেড়ে যায়। এ পেশা সমাজের অগ্রগতি ও পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে। বর্তমান বাংলাদেশের অগ্রগতির পেছনে সাংবাদিকতার একটি বড় অবদান রয়েছে। কেউ মুথ ফুটে বলুক বা না বলুক, এটাই সত্য।
সাংবাদিককে বলা হয়, জাতির মানদন্ডের বিবেক। প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের বিভিন্ন ঘটনাবলী নিরপেক্ষ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। সাংবাদিকের সকল কিছু বিবেচনা করে পৃথিবীতে একটি শ্লোগান প্রচলিত আছে, সেটা হলো, একজন প্রকৃত সাংবাদিকের কোন বন্ধু নাই বা সাংবাদিকের কোনো বন্ধু থাকতে পারে না। সারা পৃথিবীতে এখনও হাজার হাজার সংবাদকর্মী নিরপেক্ষ বা নৈতিকতার মধ্যে রেখে জীবন বাজি রেখে সংবাদ সংগ্রহ করছে।
সাংবাদিকের কাজ হল সংবাদ সংগ্রহ করা। সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত কর্মীকে বলা হয় সাংবাদিক। পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা খুবই সম্মানজনক একটি পেশা। এ পেশায় সততা ও দায়িত্বশীলতা প্রথম ও প্রধান কথা। সাংবাদিকতা’র পূর্বশর্ত হচ্ছে নিরপেক্ষতা বা নিরপেক্ষ থাকা। আবার নিরপেক্ষ শব্দটির মধ্যে একাধিক প্রশ্নের উত্তরও নিহত হয়েছে যা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বড় সংবাদকর্মী তথা সংবাদমাধ্যমগুলো মধ্যেও যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। একজন সংবাদকর্মীকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে থেকে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যবহুল সংবাদ তৈরি করতে হয়, যা প্রত্যেক সংবাদকর্মীর জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। আবার, সংবাদটি প্রকাশের পর পাঠক প্রতিক্রিয়া কি হয় সেদিকেও একজন সংবাদকর্মীর খেয়াল রাখতে হয়। একজন সাংবাদিক সবার আগে নিজের বিবেক ও সত্যের কাছে পরে সংবাদের পাঠকের কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন। এর বাইরে কারো কাছে সাংবাদিক দায়বদ্ধ নন। অপরদিকে সংবাদটির গুরুত্বকে ঘিরে পাঠকের পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থান সত্বেও সংবাদটি বিপুল জনগোষ্ঠীর নিকট সমাদৃত হয়। এতে করে উক্ত সংবাদকর্মী ও সংশ্লিষ্ট মিডিয়ার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। শুধু দেশে নয় দেশের সীমানা পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সাংবাদিকতার পূর্বশর্ত হচ্ছে একজন সংবাদকর্মীর নিরপেক্ষতা ও নৈতিকতা।
লেখক; সাংবাদিক ও কলামিস্ট