![দোল পূর্ণিমা](https://www.swnews24.com/cloud/archives/2021/03/download4-micro.jpg)
![SW News24](https://www.swnews24.com./cloud/archives/fileman/logo.jpg)
বুধবার ● ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » উপকূলীয় অঞ্চলে কেওড়ার বাম্পার ফলন
উপকূলীয় অঞ্চলে কেওড়ার বাম্পার ফলন
চলতি মৌসুমে সুন্দরবন সহ উপকূলীয় অঞ্চলে কেওড়ার বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে ফলে ভরে গেছে প্রতিটি গাছ। কেওড়া গাছ মুলতো সুন্দরবন কেন্দ্রিক বৃক্ষ হলেও উপকূলীয় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকার নদীর চরভরাটি জমিতে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে অন্যান্য প্রজাতির গাছের সাথে কেওড়া গাছের চারা লাগানো হচ্ছে।
সুন্দরবন সংলগ্ন পাইকগাছা উপজেলার শিবসা, ভদ্রা, মিনহাজ, কড়ুলিয়া নদী ও কপোতাক্ষ নদের চরভরাটি জমিতে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রচুর পরিমাণে কেওড়া গাছের চারা রোপন করা হয়েছে।
কেওড়া দ্রুত বর্ধনশীল একটি গাছ। এর গড় উচ্চতা ২০ মিটার। এ গাছের পাতা চিকন, ফল আকারে ছোট ও গোলাকার। কেওড়া সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান বৃক্ষ। সুন্দরবনে নদী ও খালের তীর এবং চরে এ গাছ বেশি জন্মায়। এর কাঠ দিয়ে ঘরের বেড়া, দরজা, জানালা তৈরি ও জ্বালানী হিসাবে কাঠ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর পাতা সুন্দরবনের তৃণভোজী প্রাণীর প্রধান খাদ্য। ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ঔষধী গুনাগুন রয়েছে। কেওড়া গাছ প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময়ও ক্ষয়ক্ষতি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে। বর্তমানে উপকূলীয় এলাকার চরভরাটি জমিতে ব্যাপক হারে কেওড়া গাছ লাগানো হচ্ছে।
বাণিজ্যিক ভাবে কেওড়া চাষ সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার অর্থনীতির জন্য অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। কেওড়া চাষ এ অঞ্চলের দারিদ্র বিমোচনের অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে বলেও অনেকেই মনে করেন।
এছাড়া এলাকার বিভিন্ন স্লুইচ গেটের ধারে প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো কেওড়া গাছের বাগান রয়েছে। কেওড়া বর্ধনশীল হওয়ায় গাছে দ্রুত ফল ধরে। ফাগুনে ফুল ফটে, চৈত্র-বৈশাখে ফল ধরে, আর আষাঢ়-শ্রাবণ ও ভাদ্র-আশ্বিন মাস পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। এক একটা গাছে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরে। এতো বেশি ফল ধরে যে, ফলের জন্য গাছের পাতা দেখা যায় না।
এসময় এলাকার হাট-বাজার গুলোতে কেওড়া ফল কিনতে পাওয়া যায়। প্রতি কেজি কেওড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়ে থাকে। চিংড়ি দিয়ে কেওড়ার টক রান্না খুব সুস্বাধু হয়।
কেওড়া উপকূলীয় অঞ্চলের অতিপরিচিত একটি ফল। ফলটির রয়েছে প্রচুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। কেওড়া ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। যা মানবদেহের জন্য অতিপ্রয়োজনীয়। কেওড়া ফল রক্তে কোলেস্টেরল ও শরীরের চর্বি কমায়। এতে রয়েছে ঔষধী গুনাগুন চুলকানি, ও পাঁচড়ার রোগ প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে থাকে। এটি পাকস্থলীর অ্যাসিডিটি কমায়। কেওড়া গাছ ও ফল অত্যান্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী হওয়ায় বাণিজ্যিক ভাবে এর চাষ করলে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার মানুষের জীবন যাত্রায় অর্থনীতির নতুন দিগন্তের সূচনা হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষাজ্ঞরা। উপজেলা বন কর্মকর্তা প্রেমানন্দ রায় বলেন, কেওড়া চাষ অত্যান্ত লাভ জনক। এ গাছ দ্রুতবর্ধনশীল হওয়ায় ৩/৪ বছরের মধ্যে ফল ধরে এবং প্রথম বারই ২০ থেকে ৪০ কেজী পর্যন্ত ফল হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে প্রতিবছর ফল বাড়তে থাকে।
উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, উপকূলীয় অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে চরভরাটি জমি রয়েছে। জোয়ার-ভাটা হয় এমন চরভরাটি জমিতে যদি বাণিজ্যিকভাবে কেওড়া চাষ করা হয় তাহলে একদিকে বাঁধ ও পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ করার পাশাপাশি এর কাঠ জ্বালানি ও ফল বাজারে বিক্রি করে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। এমনকি কেওড়া বাগানে মধু উৎপাদন করেও প্রচুর টাকা আয় করা সম্ভব। কেওড়া চাষে তেমন কোন পরিচর্যা লাগে না এবং লবণ সহিষ্ণু হওয়ায় এর উৎপাদন খরচও অনেক কম। এ জন্য অধিক হারে কেওড়া চাষ করার মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন সহ উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনীতি গতিশীল করা সম্ভব বলে তিনি জানান।