

রবিবার ● ২২ জুন ২০২৫
প্রথম পাতা » কৃষি » হারিয়ে যাচ্ছে জমির সবুজ সার ধৈঞ্চার চাষ
হারিয়ে যাচ্ছে জমির সবুজ সার ধৈঞ্চার চাষ
উপকূলের পাইকগাছায় এক সময় জমিতে ধৈঞ্চার চাষ জনপ্রিয় ছিলো। জমির প্রাণ ফেরাতে কৃষকরা নিয়মিত সবুজ সার হিসাবে ব্যবহার করতেন ধৈঞ্চা। কিন্তু কালের বিবর্তনে জমিতে হাইব্রিড ফসল আর রাসায়নিক সারের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় ধৈঞ্চার চাষ উঠেই যাচ্ছে। এর ফলে ক্রমশ মাটি হারাচ্ছে তার স্বাভাবিক প্রাণশক্তি। এভাবে চলতে থাকলে মাটি হারিয়ে ফেলবে তার স্বাভাবিক উর্বরা শক্তি। বাড়বে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার। সে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে চাষাবাদের খরচ।
মাটির প্রাকৃতিক উর্বারতা বাড়াতে জৈব সারের বিকল্প নেই। সবুজ সার হিসাবে খ্যাত ধৈঞ্চা গাছ মাটির সঙ্গে মিশে উর্বাতরা শক্তি বৃদ্ধি করে। একই মাটিতে বারবার আবাদ করার ফলে মাটির শক্তি হ্রাস পায়। ধৈঞ্চার সবুজ চারা গাছ মাটির সঙ্গে চাষ করে মিশিয়ে দিলে মাটি তার পূর্ণশক্তি ফিরে পায়। মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ধৈঞ্চা চাষের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি একটি সবুজ সার, যা মাটির উর্বরতা বাড়াতে সাহায্য করে।
তবে উপজেলার বিভিন্ন রাস্তার পাশে বা ক্ষেতের আইলে জ্বালানিকাঠ এবং পশুখাদ্য হিসেবে ধৈঞ্চার চাষ প্রচলন রয়েছে। ধৈঞ্চার হলুদ ফুল সবজি হিসেবে খাওয়া হয়।
উপজেলার হিতামপুর ব্লকের কৃষক সামাদ সরদার বলেন, আগে বাপ-দাদারা প্রতি বছর একবার ধৈঞ্চার চাষ করতেন। মোটামোটি একমাসের মধ্যেই সবুজ চারায় ছেয়ে যেত ফসলের মাঠ। নরম ও সবুজ ধৈঞ্চার ক্ষেতে লাঙল দিয়ে চাষ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া হতো। সপ্তাহের মধ্যেই জমিতে ধৈঞ্চা পচে মাটির সাথে মিশে যেত। জৈব সারের চাহিদা মিটে যেত। সে সময় জমিতে প্রচুর ফসল ফলতো। কিন্তু এখন জমিতে সবুজ সার ও গোবর সার ব্যবহার প্রায় বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
পাইকগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ একরামুল হোসেন বলেন, ধৈঞ্চার ব্যবহার এখন কমে গেলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্রান্তিক এ অঞ্চলের কৃষকেরা বিনা পরিশ্রমে বাজারে সার পায় এজন্য ধৈঞ্চা চাষে অনিহা। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের ধৈঞ্চারমতো প্রাকৃতিক সবুজ সারের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। কৃষকদের নিয়মিত রাসায়নিক সার, বীজ ও কীটনাশকের ব্যবহারের কুফল সম্পর্কে বুঝানো হচ্ছে।
কৃষক পর্যায়ে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমানো গেলে মাটিতে ফসলের জন্য উপকারী পোকা মাকড়, কেঁচো প্রভৃতির বংশ বিস্তার হবে। এর ফলে জমিতে উৎপন্ন বিভিন্ন ফল ও ফসলের উৎপাদন খরচ অনেক কমে যাবে ও কৃষকরা উপকৃত হবেন।