সোমবার ● ২৪ নভেম্বর ২০২৫
প্রথম পাতা » পরিবেশ » শীতে বেড়েছে পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্য
শীতে বেড়েছে পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্য
দেশে প্রতি বছর শীতের মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসে। শীতে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে শিকারিদের তৎপরতাও বেড়েছে। শিকারিরা বিভিন্ন ফাঁদ, জাল, বিষটোপ এবং অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করে পাখি শিকার করছে এবং বিক্রি করছে। এর ফলে জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনেও ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিকারীদের বিরুদ্ধে দু’একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও যথাযথ তদারকি না থাকায় শিকারীরা তৎপর রয়েছে পাখি শিকারে।
শীতের আগমনে পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেয়েছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয়ে। তবে অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় পাখি শিকারিরা আইনের তোয়াক্কা না করে এসব পরিযায়ী পাখি শিকারে মেতে উঠেছেন। খুলনা জেলার বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, দাকোপ, কয়রা এলাকায় বেশির ভাগ পাখি শিকার করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
পাইকগাছা উপজেলার বাইশারাবাদ,বেতবুনিয়া, তেঁতুলতলা, লতা, হানিমুনকিয়া, বাহিরবুনিয়া, দেলুটি, সোলাদানা, চকবগুড়া, খড়িয়া, আমিরপুর, বাইনবাড়ীয়া, কুমখালীসহ বিভিন্ন এলাকার বিলে ধানের ক্ষেত, খাল-বিল, জলাশয় ও চিংড়ি ঘের থেকে পাখি শিকার করা হচ্ছে। শিকারীরা ওই সব স্থানে বিভিন্ন মাছ ও ফড়িং জাতীয় প্রাণীতে বিষ মিশিয়ে ফাদ পেতে রাখে। তাছাড়া শিকারীরা পাখি শিকারে অভিনব পদ্ধতি বের করেছে। ইন্টারনেট থেকে পাখির ডাক রেকর্ড করে সেই পাখির স্বর ধান ক্ষেতে সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে বাজিয়ে পাখি শিকারে ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করছে। সাউন্ড বক্সে পাখির ডাক শুনে পরিযায়ী ও স্থানীয় পাখিরা ফাঁদে গিয়ে ধরা পড়ছে। এভাবেই শিকারীরা প্রতিদিন ফাঁদ ও বিষ টোপ দিয়ে শত শত পাখি শিকার করছে। এসব পাখির মধ্যে বালিহাঁস, শামুকখোল, নীলশির, লালশির, বড় সরালী, ছোট সরালী, সাদা বক, ধূসর বক, গো বক, পানকৌড়ি, কাদা খোঁচা, মাছরাঙ্গা, রাত চরা ও সারস উল্লেখযোগ্য।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শিকারিরা অবাধে পরিযায়ী পাখি শিকার করে আসছেন। ভোরের আলো ফোটার আগেই শিকার করা পাখিগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়। অগ্রিম টাকা নিয়ে রাতে ক্রেতার বাড়িতে পাখি পৌঁছে দিয়ে আসছে। এসব পাখি আকারভেদে ৩০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা কিংবা এর থেকেও বেশি দামে বিক্রি করা হয়। বক পাখি প্রতিটি ৫০-৭০ টাকা, রাতচোড়া ১০০-১৫০ টাকা, বালিহাঁস ১৫০-২০০ টাকা দরে অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে।
শিকারিরা রাতে ধান খেতে বসে পাখির ডাকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাঁশি বাজান। বাঁশির শব্দে উড়ন্ত পাখিরা বিভ্রান্ত হয়ে নিচে নেমে শিকারির পাতা ফাঁদে পড়ে আটকে যায়। এ ছাড়া শিকারিরা নাইলনের সুতা দিয়ে ছোট-বড় ফাঁদ তৈরি করে পাখির চলার পথে পেতে রাখেন। রাতের বেলা পাখিরা যখন উড়ে বেড়ায় তখন ওই ফাঁদে শত শত পাখি আটকা পড়ে।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুসারে পরিযায়ী পাখি শিকার ও বিক্রয় দণ্ডনীয় অপরাধ। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক লাখ টাকা জরিমানা, এক বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড। একই অপরাধ আবার করলে শাস্তি ও জরিমানা দ্বিগুণ। কিন্তু আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাবে এই মৌসুমে পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়।
এ ব্যাপারে পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহেরা নাজনীন বলেন, পরিবেশের ভারসাম্য ও জীববৈচিত্র রক্ষায় পাখিদের ভূমিকা অপরিসিম। পাখি শিকার বন্ধে প্রশাসন সব সময় তৎপর রয়েছে এবং পাখি শিকারীর বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পাখি শিকার বন্ধে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য সচেতন এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
এবিষয়ে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল জানান, দেশি ও পরিযাযী পাখি শিকার রোধে আমাদের অভিযান চলছে। পাইকগাছার এসব বিলে আমাদের টিম অভিযান পরিচালনা করবে। তাছাড়া খবর পেলে দ্রুত আমরা সেখানে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করে পাখি শিকারিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।






পাইকগাছায় পাখি সুরক্ষায় গণসচেতনতামূলক মাঠসভা ও গাছে পাখির বাসা স্থাপন
পাইকগাছায় পাখির জন্য গাছে বাঁধা মাটির পাত্রে কাঠ বিড়ালিও বাসা বেধেছে
পাইকগাছায় বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবস পালিত
পাইকগাছায় মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে শরতের কাশফুল
খুলনায় পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় করণীয় শীর্ষক কর্মশালা
পাইকগাছায় চেচুঁয়া ফজিলাতুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বনবিবির বৃক্ষরোপন
পাইকগাছায় বোয়ালিয়া হিতামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বনবিবির বৃক্ষরোপন কর্মসুচি
পাইকগাছায় শকুন সচেতনতা দিবস পালিত
পাইকগাছায় শ্রীকণ্ঠপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বনবিবির বৃক্ষরোপন কর্মসুচি 