শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

SW News24
সোমবার ● ৪ অক্টোবর ২০২১
প্রথম পাতা » মুক্তমত » মহালয়া ঘিরে বর্ণিত কাহিনি
প্রথম পাতা » মুক্তমত » মহালয়া ঘিরে বর্ণিত কাহিনি
৩৭৭ বার পঠিত
সোমবার ● ৪ অক্টোবর ২০২১
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

মহালয়া ঘিরে বর্ণিত কাহিনি

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান

‘শারদ প্রাতে’ আলোকবেণু বাজতে আর কয়েকদিন বাকী আছে। চারিদিকে পুজো পুজো রব। মহালয়ার দিন পিতৃপক্ষের অবসান হয়ে, মাতৃপক্ষ শুরু হয়। সেদিনই আক্ষরিক অর্থে দুর্গাপুজোর সূচনা। কথিত আছে মহালয়ার দিন অসুর ও দেবতাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। এই মহালয়ার গুরুত্ব হিন্দু ধর্মে অনেক।পুরাণ মতে, ব্রহ্মার বরে মহিষাসুর অমর হয়ে উঠেছিলেন। শুধুমাত্র কোনও নারীশক্তির কাছে তার পরাজয় নিশ্চিত। অসুরদের অত্যাচারে যখন দেবতারা অতিষ্ঠ, তখন ত্রিশক্তি ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর নারীশক্তির সৃষ্টি করেন। তিনিই মহামায়ারূপী দেবী দুর্গা। দেবতাদের দেওয়া অস্ত্র দিয়ে মহিষাসুরকে বধ করেন দুর্গা। এই জন্যেই বিশ্বাস করা হয় যে, এই উৎসব খারাপ শক্তির বিনাশ করে। মহালয়ার দিন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করার রীতি প্রচালিত আছে। এদিনই দেবীর দুর্গার চক্ষুদান হয়। মহালয়া শব্দটির অর্থ, মহান আলয় বা আশ্রম। এক্ষেত্রে দেবী দুর্গাই হলেন, সেই মহান আলয়।

পুরাণ অনুসারে মহালয়া: কোনও মৃত ব্যক্তির শ্রাদ্ধ শান্তি করলে, তাঁর আত্মা প্রশান্তি লাভ করে এবং সেই আত্মা মুক্তি লাভে সক্ষম হয়। বিশ্বাস করা হয় যে পিতৃপক্ষে শ্রাদ্ধ শান্তি ও তর্পণ করলে পূর্ব পুরুষেরা খুশি হন এবং আশীর্বাদ করেন। তাঁদের কৃপায় জীবনের অনেক বাধা দূর হয়। জীবনের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা থেকেও মুক্তি মেলে। পিতৃপক্ষের শ্রাদ্ধ ও তর্পণের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এ জন্যেই দেবীপক্ষ শুরুর আগে পূর্ব পুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করা হয়।

রামায়ণ অনুসারে মহালয়া: শাস্ত্রের নিয়মানুসারে, অকালে কোনও পুজো করলে ইষ্ট দেবতা ও প্রয়াত পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তর্পণ করতে হয়। শ্রী রামচন্দ্র, দেবী দুর্গার অকাল বোধন করেছিলেন। আর নিয়ম মেনে তাঁকেও পুজোর আগে করতে হয়েছিল তর্পণ। কথিত আছে রামচন্দ্র, মহালয়ার দিন পিতৃ তর্পণ করেছিলেন,আর সেই থেকেই শুরু হয় এই রীতির।

মহাভারত অনুসারে মহালয়া: কথিত আছে, স্বর্গে বসবাস করার সময় কর্ণের আত্মাকে খাবার হিসাবে শুধু সোনা ও রতœ দেওয়া হয়। কারণ দাতা হিসাবে তিনি কখনও পিতৃপুরুষকে জল -খাবার দেননি, সকলকে সোনা -রতœ দান করেছেন। আসলে কর্ণ, প্রথমে তাঁর পিতৃ পরিচয় জানতেন না। যুদ্ধের আগের রাতে কুন্তীর থেকে সে জানতে পারে সকল সত্যি। এরপরই ভুল সংশোধন করতে তর্পণের পরামর্শ আসে।

দেবরাজ ইন্দ্রের অনুসারে: মহালয়া পুরাণ মতে, দেবরাজ ইন্দ্রকে ১৬ দিনের জন্য মর্তে গিয়ে তর্পণ করতে পাঠান যমরাজ। আর এই ১৬ দিনই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হয় এবং সেই সময় থেকেই মহালয়ার দিন এবং তার আগে ১৫ দিন পিতৃপুরুষদের জলদান করা হয়।

পিতৃপক্ষ বৎসরেরর বারটি মাসকে ২টি পক্ষে ভাগ করা হয়েছে, একটি কৃষ্ণ পক্ষ অপরটি শুক্লপক্ষে। প্রতিপদ তিথি থেকে অমাবস্যাকে বলা হয় কৃষ্ণপক্ষ, আবার প্রতিপদ থেকে পূর্ণিমাকে বলা হয় শুক্লপক্ষ। বৎসরে ২৪টি পক্ষের মধ্যে তন্মধ্যে ২টি পক্ষ বিশেষ তাৎপর্য্যপূর্ণ। প্রথমটি পিতৃপক্ষ ও দ্বিতীয়টি দেবীপক্ষ। আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের তিথীকে বলা হয় মহালয়া। এই কৃষ্ণপক্ষকে বলে অপরপক্ষ কিংবা পিতৃপক্ষ। পিতৃপক্ষে স্বর্গত পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে পার্বন শ্রাদ্ধ ও তর্পন করা হয়। হিন্দু দর্শন অনুযায়ী যমালয় থেকে মর্ত্যলোকে এ সময় পিতৃপুরুষেরা আসেন। তাদেরকে তৃপ্ত করার জন্য তিল, জল, দান করা হয় এবং তাদের যাত্রাপথকে আলোকিত করার জন্য উল্কাদান করা হয়। এই অমাবস্যায় পিতৃপূজা সেরে পরের পক্ষে দেবীপূজায় প্রবৃত্ত হতে হয়।

ওঁ পিতা স্বর্গঃ পিতা ধর্ম পিতা হি পরমন্তপঃ। পিতরি প্রীতিমাপন্নে প্রীয়ন্তে সর্বদেবতা।

পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে পার্বন শ্রাদ্ধ ও তর্পণ করার অনুষ্ঠান বা রীতিই হল পিতৃপক্ষ। এই পক্ষ ষোলোশ্রাদ্ধ, কানাপাত, জিতিয়া মহালয়াপক্ষ নামেও পরিচিত। এই পক্ষ সূচীত হয় প্রধানতঃ দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে গণেশ উৎসবের পরবর্তী পূর্ণিমা তিথিতে শেষ হয় মহালয়া অমাবস্যা তিথিতে। সর্বপিতৃ অমাবস্যা দিবসে তিথির নিয়মের বাইরে সকল পূর্বপুরুষেরই শ্রাদ্ধ করা হয়। যারা নির্দিষ্ট দিনে শ্রাদ্ধ করতে ভুলে যান, তারা এই দিন শ্রাদ্ধ করতে পারেন। এই দিন গয়ায় শ্রাদ্ধ করলে তা বিশেষ ফলপ্রসূ হয়। উল্লেখ্য, গয়ায় সমগ্র পিতৃপক্ষ জুড়ে মেলা চলতে হয়। শ্রাদ্ধের সময় সিদ্ধ অন্ন, ময়দা, ঘি ও তিল দিয়ে মাখিয়ে পিন্ডের আকারে উৎসর্গ করা হয়। একে পিন্ড দান বলে। এরপর দুর্বাঘাস, শালগ্রাম শিলা বা স্বর্ণমূর্তিতে বিষ্ণু এবং যমের পূজা করা হয়। এরপর পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে খাদ্য প্রদান করা হয়।

মার্কন্ডেয় পুরাণ গ্রন্থে বলা হয়েছে, পিতৃগণ শ্রাদ্ধে তুষ্ট হলে স্বাস্থ্য, ধন, জ্ঞান ও দীর্ঘায়ু এবং পরিশেষে উত্তরপুরুষকে স্বর্গ ও মোক্ষ প্রদান করেন। পুরাতাত্ত্বিক উষা মেননের মতেও, পিতৃপক্ষ বংশের বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে। এই পক্ষে বংশের বর্তমান প্রজন্ম পূর্বপুরুষের নাম স্মরণ করে তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পিতৃপুরুষের ঋণ হিন্দুধর্মে পিতৃ-মাতৃঋণ অথবা গুরুঋণের সমান গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক:সাংবাদিক





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)