শিরোনাম:
পাইকগাছা, বুধবার, ১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

SW News24
বুধবার ● ২ নভেম্বর ২০১৬
প্রথম পাতা » নারী ও শিশু » শিশুর মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ মায়ের ভূমিকা
প্রথম পাতা » নারী ও শিশু » শিশুর মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ মায়ের ভূমিকা
৬০৮ বার পঠিত
বুধবার ● ২ নভেম্বর ২০১৬
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

শিশুর মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ মায়ের ভূমিকা

---

মোঃ আব্দুল আজিজ ॥

প্রাকৃতিক ভাবেই একটি শিশু বেড়ে ওঠে, বেড়ে ওঠে তার মেধা ও মনন। শিশুর এই মানসিক বিকাশ অনেক খানিই নির্ভর করে তার পরিচর্যার উপর। ঢাকা কলেজের গার্হস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাফিকা সুলতানার মতে শিশুর সুষ্ঠু মানসিক বিকাশে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মায়ের ভূমিকা। প্রতিটি শিশুই তার মায়ের চোখের মনি, হৃদয়ের ধন ও আদরের বস্তু। শিশুকে নিয়ে তাদের মাঝে গড়ে ওঠে বহু আশা ভরসা। তাঁদের কাঙ্খিত আশা আকাঙ্খা পূরনের জন্য মাতৃগর্ভ থেকে পাঁচ বৎসর বয়স পর্যন্ত শিশুর জন্য প্রয়োজন বিশেষ ধরনের স্বাভাবিক যত্ন, পরিচর্যা, আদর, ভালবাসা ও নির্ভরশীলতা। কেননা এ সময় শিশু বিকাশের ভিত্তি গড়ে ওঠে। এ সময়েই শিশুর দৈহিক, মানসিক, আবেগিক, নৈতিক, সামাজিক তথা শিশুর সার্বিক বিকাশ ঘটে। অর্থাৎ তার ব্যক্তিত্বের ভিত্তি মূল গড়ে ওঠে। এ কারণেই পাঁচ বৎসর পর্যন্ত সময়কে ফাউন্ডেশন এইজ (ঋড়ঁহফধঃরড়হ ধমব) বলা হয়।

শিশুর বিকাশ বলতে গ্রোথ এবং ডেভেলপমেন্ট উভয়কেই বোঝায়। গ্রোথ হল আকারগত পরিবর্তন বা পরিমাণগত পরিবর্তন যা কিনা শিশুর ওজন, উচ্চতার মাঝে ধরা পড়ে। অপর দিকে ডেভেলপমেন্ট হল গুনগত পরিবর্তন যা কিনা আচরণের মাঝে ধরা পড়ে। অর্থাৎ একটি শিশুর গ্রোথ এবং ডেভেলপমেন্ট এর উপর ধরা পড়ে তার সার্বিক বিকাশ। এই বিকাশ কালীন সময়ে মায়ের সান্নিধ্য ও যত্নের ভূমিকা অপরিসীম।

সাধারণভাবে একটি শিশুকে আমরা ভূমিষ্ঠ হবার পর দেখতে পাই এবং তার বয়স গণনা করি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ভূমিষ্ঠ হবার ৯ মাস বা ২৮০ দিন পূর্বেই তার জন্মের সূচনা হয়েছে। একটি শিশুর জন্মের সূচনা থেকেই শুরু হয় তার বর্ধন ও বিকাশ । সে কারণে মাতৃগর্ভে থাকাকালীন সময়ে মায়ের খাদ্য, যত্ন, পরিচর্যা, মায়ের মনোভাব, মানসিকতা প্রভৃতি শিশুর সুষ্ঠু বিকাশে গুরুত্বপূণ ভূমিকা রাখে। গর্ভাবস্থায় মা যদি পুষ্টিহীন থাকে তবে সন্তান অপুষ্ট, রুগ্ন ও কম ওজন, উচ্চতা নিয়ে জন্মাবে। সর্বোপরি তার বিকাশ ব্যাহত হবে। যেমন-আয়োডিনের অভাবে শিশু শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নিবে। অনেক সময় বোবা-কালা, হাবা-গোবা, বামুনও হয়ে থাকে। ভিটামিন ‘এ’ এর অভাব হলে অন্ধ, লৌহের অভাবে রক্তস্বল্পতায় ভোগে।

একটি শিশুর শারীরিক বিকাশ নির্ভর করে শিশুর খাদ্য ও যত্নের উপর। জন্মের পর থেকে দুই বৎসর পর্যন্ত শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। এছাড়াও পাঁচ মাস বয়স থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি শর্করা, প্রোটিন, খনিজ লবণ, ভিটামিন তেল প্রভৃতি উপাদানের সমন্বয়ে মিশ্র খাদ্য বা বাড়তি খাবার দিতে হবে। মনে রাখতে হবে শিশুর সুষ্ঠু শারীরিক বা দৈহিক বৃদ্ধির জন্য টিনজাত সেরিলাক বা এ জাতীয় খাদ্য পরিহার করে বাড়ির তৈরী মিশ্র খাদ্য বেশি কার্যকর।

শিশুর মানসিক বিকাশ নির্ভর করে তার মস্তিষ্কের বিকাশের উপর। কারণ মানসিক কর্মকান্ডকে নিয়ন্ত্রণ করছে মস্তিষ্ক। এই মস্তিষ্কের কোষগুলোর গঠন হয় শিশু যখন মাতৃগর্ভে থাকে তখন থেকেই। মস্তিষ্কের বিকাশ নির্ভর করে তার কোষের উপর। একটি শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন তার মস্তিষ্কে দেড় কোটি কোষ থাকে। কিন্তু জন্মের পর এ কোষগুলো বাড়ে না। তবে তার কাজ করার জন্য প্রয়োজন হয় এক কোষ থেকে অন্য কোষের সংযোগ। এই কোষের সংযোগের শতকরা ৮০-৯০ ভাগ জন্মের পাঁচ বৎসরের মধ্যে ঘটে থাকে। প্রথম তিন বৎসর বয়সের মধ্যে এই সংযোগ সবচেয়ে বেশি ঘটে। তার এই সংযোগের উপর নির্ভর করে পরিপূর্ণ বিকাশ। তার মস্তিষ্কের কোষগুলোর সংলাপ ঘটানোর জন্য মস্তিষ্কে কোষগুলোকে সক্রিয় করতে হবে। এই কোষগুলোকে সচল রাখার জন্য একটি পরিবারে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। ছোট শিশুর সাথে হাত মুখ নাড়িয়ে কথা বললে দেখা যাবে শিশু প্রতিক্রিয়া করছে। সে কথা বলার চেষ্টা করছে। শিশুর সান্নিধ্যে মা যতটা থাকবেন পারস্পরিক ক্রিয়ার মাধ্যমে তার মস্তিষ্কের কোষগুলোকে তত বেশি উদ্দীপ্ত করা যাবে। এই উদ্দীপনার ফলে বিভিন্ন কোষের মধ্যে সংযোগ ঘটে। যত বেশি কোষের উদ্দীপনা হবে তত বেশি মস্তিষ্কের বিকাশ হবে।

শিশুকে স্বাভাবিক ভাবে বাড়তে দিতে হবে। খেলাধুলা ও সৃজনশীল কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। এতে শিশু স্বাবলম্বী হয়ে উঠবে তার সামাজিক বিকাশ ঘটবে। তবে বন্ধু নির্বাচনে পিতা-মাতাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে। শিশুর একান্ত সান্নিধ্য থেকে শিশুর সাথে বন্ধুতপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। গল্পের ছলে এসব ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে হবে। বেশি শাসন করতে গেলে অনেক সময় অভিভাবকের সাথে দূরত্ব বেড়ে যায়। সব সময় বকাঝকা করলে সন্তানের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়। শিশুকে শাসন করতে হবে তবে তার মধ্যে আদর ও মায়া মমতার ছোঁয়া থাকতে হবে।

শিশুর সুষ্ঠু মানসিক বিকাশের জন্য সৃজনশীল কাজে যেমন ছবি আঁকা, গল্প , কবিতা পড়া, গান শেখা, কার্টুন দেখা ইত্যাদিতে আগ্রহী করে তুলতে হবে। শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, ২-৩ বৎসর বয়স পর্যন্ত শিশুর নতুন জিনিস শেখার হার সবচেয়ে বেশি থাকে। এসময় মায়ের সান্নিধ্যে থেকে খেলার ছলে গল্পের মাধ্যমে বাস্তবমুখী শিক্ষা দিয়ে শিশুকে ভাল-মন্দ, ভুল শব্দ চিনিয়ে দেয়া সম্ভব। এছাড়াও নিয়মানুবর্তিতা ও ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে শিশুর নৈতিক বিকাশ ঘটাতে হবে।

বর্তমানে কর্মব্যস্ততার কারণে অনেক শিশুই মায়ের যত্ন ও সান্নিধ্য থেকে বঞ্চিত হয়। নিঃসঙ্গ ও একাকী পরিবেশে কিছুটা অনাদরে ও অবহেলায় শিশু বড় হয়। ফলে খারাপ সঙ্গে মিশে যায় ও নানারকম অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় শিশুরা নেশায় পর্যন্ত আসক্ত হয়ে পয়ে। এতে শিশুর সুষ্ঠু বিকাশ ব্যাহত হয়। এজন্য শিশুর মানসিক বিকাশে মায়ের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। মা তহমিনা রত্না জানান, আমার মেয়ে তাহিয়া’র মা এবং বন্ধুই হচ্ছি আমি। আমি আমার সন্তানের সাথে সার্বক্ষণিক বন্ধু সুলভ আচারণ করি। বন্ধুর মতো সব সময় তার যত্ন ও পরিচর্যা করি। শিশুর মানসিক বিকাশে মা তহমিনার মতো সকল মায়েদেরকে সন্তানের কাছে বন্ধু হয়ে উঠতে হবে। মূলত শৈশবে শিশুর সার্বিক বিকাশের উপর নির্ভর করে- তার পরবর্তী জীবনের সুখ ও স্বাভাবিকতা। এ কারণে শত ব্যস্তাতার মাঝেও মা-বাবাকে কিছুটা সময় বের করে নিতে হবে শিশুর সান্নিধ্যে থাকার জন্য।





আর্কাইভ