সোমবার ● ২৯ এপ্রিল ২০১৯
প্রথম পাতা » সারাদেশ » ‘ভাতা নয়, মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চাই’ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী সাইকেল মিস্ত্রি শহর আলী
‘ভাতা নয়, মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি চাই’ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনকারী সাইকেল মিস্ত্রি শহর আলী
আহসান হাবিব, আশাশুনি : ‘জীবনবাজি রেখে সংসারের মায়া ত্যাগ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাড়িয়ে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি আজও পাননি। অনেক চেষ্টা করেছি, দপ্তরে দপ্তরে ঘুরেছি, তবুও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতিটুকু আদায় করতে পরিনি। আমাদের সংসারে অভাব আছে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে কামলা দিয়ে বাকী জীবন কাটিয়ে দিতে পারব। সরকারের কাছ থেকে কোনো টাকা কিংবা ভাতা না নিয়ে কষ্টে হলেও হয়ত চলতে পারব কিন্তু আমাদের প্রাপ্য মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মানটুকু কি পাব না ?’ মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি না পয়ে আক্ষেপ করেছেন আশাশুনির শোভনালী ইউনিয়নের বদরতলা গ্রামের ভুমিহীন মৃত. সুরমান আলীর পুত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী শহরআলী, মৃত. শ্যামালী কারীকরের পুত্র জোহর আলী ও মৃত. এহাজার আলী মোল্ল্যার পুত্র মাদার মোল্যা। এমনটি মেনে নিতে পারছেন না মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী-সন্তানরা। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য ভারতে টাকীর আম বাগান ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শেষে জীবনবাজি রেখে ৯নং সেক্টরে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন শহর আলী, জোহার আলী ও মাদার মোল্যা। বাংলাদেশে এসে তারা উভয়ই বদরতলা ক্যাম্পে যুদ্ধকালিন কমান্ডার আব্দুল হাকিম ও ক্যাপ্টেন শাহাজান মাষ্টারের নেতৃত্বে কুন্দুড়িয়া, ব্যাংদহা, এল্লারচরসহ বিভিন্ন এলাকায় সম্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। শুই তাই নয় নিজ এলাকায় ক্যাম্প থাকায় তৎকালিন মুক্তিযোদ্ধাদের সকল প্রকার সহযোগিতা হাতও বাড়িয়ে দেন তারা। কিন্তু দেশ স্বাধীনের ৪৮ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি তারা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর স্ব-স্ব কাজ কর্ম বেছে নেন সংসার ঠেকানোর জীবন যুদ্ধে। আর তখন থেকে অভাব অনটনের সাথে আর এক যুদ্ধে লিপ্ত হন তারা। মুক্তিযোদ্ধাদের অসহায়ত্বের কথা ভেবে যখন সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাড়ালেন। তখন যুদ্ধকালিন কমান্ডার আব্দুল হাকিম তাদের অভাব অনটনের কথা ভেবে মুক্তিযুদ্ধের সার্টিফিকেট গুলো জমা নেন মাথা গোজার ঠাই করে দিতে জমি বন্দোবস্ত করে দেয়ার আশ্বাসে। কিন্তু বিধিবাম বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম’র মৃত্যুর সাথে সাথে শেষ হয়ে যান সকল স্বপ্ন। তাই আজও আর ফিরে পাননি তাদের সার্টিফিকেট গুলো। সরেজমিন ঘুরে দেখা জানাগেছে, শহর আলী বয়স ৭০ বছর। সংসারে তার সদস্যের সংখ্যা ৯ জন। শেষ বয়সে নিজেই সাইকেল মেরামতের কাজ করে চালাচ্ছেন সংসার। মাথা গোজার ঠাঁই বলতে রয়েছে চরভরাটি মাত্র ৪ শতক জমি। জোহর আলী কারিকরের সংসারে সদস্যের সংখ্যা ৬ জন। মাথা গোজার ঠাঁই ১০ শতক খাস জমির উপর ঘর বেঁধে বসবাস করেছেন। মাদার মোল্যার নেই আর্থিক সংকট। তাই জীবন সায়াহ্নে এসে নিজের কাজের স্বীকৃতিটুকু পাওয়ার জন্য মানসিক চিন্তায় তিনিও মর্মাহত। না পাওয়ার বেদনায় এদের সকলেরই দাবি অর্থ কিংবা ভাতা চাই না চায় মুক্তিযুদ্ধের সম্মানটুকু। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা দেব দুলাল রায় জানান, মুক্তিযুদ্ধের সময় উল্লেখিত ব্যক্তিরা বদরতলা ক্যাম্পে থাকত। বজলুর রহমান জানান, আমি নিজে দেখেছি তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে। তরুন প্রজন্মের সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি তার দাদা ও পিতার মুখে শুনেছেন তাদের মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনের কথা। ভূক্তভোগীরা স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে ঘটনার বিবরণ দেয়ার এক পর্যায়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, বাকী জীবনে কি মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি কি আর পাব ? না হয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী মুক্তিযুদ্ধের স্বীকৃতি নিয়ে যেন রাষ্ট্রীয় মর্যদায় আমাদের দাফন করা হয়।