শিরোনাম:
পাইকগাছা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

SW News24
শুক্রবার ● ১৩ নভেম্বর ২০১৫
প্রথম পাতা » ফিচার » পূর্ণিমায় রাসমেলাকে ঘিরে সুন্দরবনে হরিণ শিকারীদের ব্যাপক প্রস্তুতি
প্রথম পাতা » ফিচার » পূর্ণিমায় রাসমেলাকে ঘিরে সুন্দরবনে হরিণ শিকারীদের ব্যাপক প্রস্তুতি
৬৩৮ বার পঠিত
শুক্রবার ● ১৩ নভেম্বর ২০১৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

পূর্ণিমায় রাসমেলাকে ঘিরে সুন্দরবনে হরিণ শিকারীদের ব্যাপক প্রস্তুতি

---

প্রকাশ ঘোষ বিধান, পাইকগাছা ঃ সুন্দরবনে প্রবেশে কড়াকড়ির মধ্যেও রাসপূর্ণিমার মেলাকে ঘিরে  শিকারীদের হরিণ নিধনযজ্ঞের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। ২৪ নভেম্বর থেকে ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত ৩ দিন রাসমেলা অনুষ্ঠিত হবে। সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলার শিকারীরা রাসমেলার আড়ালে হরিণ শিকারের ফাঁদ, জাল, বরশি সহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছে। হরিণ শিকারী চক্রের দৌরত্ব আশংখাজনক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় পরিবেশবিদরা আশঙ্কা করছেন, সারা বছর সুন্দরবনে শিকারী চক্রের হাতে যে পরিমাণ হরিণ শিকার হয় আর রাসমেলার সুযোগে সেই সমপরিমাণ হরিণ শিকার হতে পারে।
সুন্দরবন সংলগ্ন বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় শতাধিক অবৈধ শিকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। এসব শিকারী চক্র হরিণ নিধনের পর মাংস, চামড়া, হাঁড়, শিং বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। লন্ডন ভিত্তিক ওয়াইল্ড লাইফ ট্রাষ্ট অফ বাংলাদেশ ও জুলজিক্যাল সোসাইটির তথ্য মতে, সুন্দরবনে বছরে প্রায় ১০ হাজারের বেশী হরিণ শিকারীদের হাতে মারা পড়ে। সুন্দরবনের বন বিভাগের হিসাব মতে সুন্দরবনের বাংলাদেশের অংশে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার চিত্রা হরিণ রয়েছে। বনের আয়তন খাদ্য, ও পরিবেশের উপর এর সংখ্যা নির্ভর করে। প্রতিবছর কয়েক হাজার হরিণ মারা পড়ে। আবার কয়েক হাজার হরিণ জন্ম নেয়। সুত্রমতে ৮/১০ বছরের ব্যাবধানে বনে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হরিণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে শিকারী চক্র বার বার আটক হলেও মুক্তি পাওয়ায় শিকারী চক্রের তৎপরতা বেড়ে চলেছে। অভিনব কায়দায় তারা হরিণ শিকার করে। শিকারী সুত্রে জানা গেছে, লাইলনের তৈরী ফাদ,জাল পেতে, স্পিং বসানো ফাঁদ, বিষটোপ, তীর, গুলি করে, কলার মধ্যে বরশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা ফাঁদ ও ঘাস পাতার উপর চেতনা নাশক ঔষধ দিয়ে হরিণ নিধন করা হয়। ফাঁদ পেতে শিকারীরা লাঠি নিয়ে আশে পাশে লুকিয়ে থাকে। হরিণ ফাঁদে আটকা পড়লে তারা ছুটে গিয়ে হরিণকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। এক পর্যায়ে হরিণ দুর্বল হয়ে পড়ছে নৌকায় করে সুবিধামত স্থানে বা মাটির গর্তে লুকিয়ে রাখে। পরে সময় ও চাহিদামত হরিণ জবাই করে মাংস, চামড়া, শিং ও হাঁড় ক্রেতাদের কাছে পৌছে দেয়। রাসমেলাকে সামনে রেখে পেশাদার শিকারীরা বনজীবী সেজে বন বিভাগ থেকে মাছ ও কাঁকড়া ধরার পাশ মারমিট নিয়ে মেলা শুরুর পুর্বেই হরিণ শিকারের উ্পকরণ নিয়ে বনের মাঝে লুকিয়ে রেখে আসে। রাসমেলা উপলক্ষ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা গ্রহণ করা হলেও শ্যামনগর, কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, মংলা, রামপাল, সহ উ্পকুলীয় এলাকার শিকারীরা মেলা শুরু হওয়ার ১০/১৫ দিন আগে বনের মধ্যে প্রবেশ করে রেখে আসা শিকারের উপকরণ দিয়ে হরিণ শিকার করে। আবার রাস মেলা শুরু হলে বিশেষ কায়দায় উপকরণ নিয়ে যাওয়া শিকারীরা তীর্থ যাত্রীদের সাথে একত্রিত হয়ে মিশে যায়। মেলার আনন্দে মেতে উঠা দর্শনার্থী ও নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ ফাঁদ দ্বারা হরিণ নিধনযজ্ঞে মেতে উঠে। রাসমেলার সময় হিরণপয়েন্ট, দুর্বারচর আলোরকোল সহ বিভিন্ন চর ও সুন্দরবন সাগর মোহনায় পুর্ণার্থী, দর্শনার্থী ও পর্যাটক সহ লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম ঘটে। এ সময় জনসমুদ্রে শিকারীচক্র মিশে গিয়ে চোখ ফাকি দিয়ে হরিণ নিধনে মেতে উঠে। ব্যাপক নজরদারী থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র হরিণ শিকারের উদ্দেশ্যে এ বিশাল মেলায় দর্শনার্থীরুপে আগত শিকারীদের কোনভাবে আটকে রাখা সম্ভব হয় না। এ ব্যাপারে সুন্দরবন বন বিভাগের পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহির উদ্দীন আহম্মেদ জানান, বন বিভাগের জনবল ও লজিষ্টিক সংকট দীর্ঘদিনের। এ সমস্যা নিরসন না হওয়ায় শিকারী দমনে প্রত্যাশিত ফল পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে রাস মেলার সময় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পর্যান্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও টহল জোরদার করা হচ্ছে। পাশাপাশি র‌্যাব, পুলিশ, কোষগার্ড ও বনরক্ষীদের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্রতি বছর রাস মেলার সময় কয়েক হাজার হরিণ নিধনের আশংকা রয়েছে। তাছাড়া প্রতিনিয়ত হরিণ নিধন হচ্ছে। এভাবে হরিণ নিধন হলে হরিণের সংখ্যা আশংখাজনক হারে হ্রাস পাবে। বিপন্ন হবে চিত্রাহরিণ। বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন হারাবে তার ঐতিহ্য।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)