মঙ্গলবার ● ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
প্রথম পাতা » সারাদেশ » জামিনে মুক্তি পেলেন ঝুমন দাশ
জামিনে মুক্তি পেলেন ঝুমন দাশ
এস ডব্লিউ নিউজ: অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন ঝুমন দাশ (২৫)। আইনি প্রক্রিয়া শেষে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে তিনি সুনামগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পান। গত বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট কিছু শর্ত সাপেক্ষে তাঁকে জামিন দেন।
৬ মাস ১২ দিন কারাবাসের পর কারাগার থেকে বের হয়েই ঝুমন দাশ তাঁর মা নিভারানী দাশকে জড়িয়ে ধরেন। মায়ের পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নেন। নিভারানী দাশ তখন ছেলের কপালে চুমো খান। এ সময় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
মুক্তির পর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ঝুমন দাশ প্রথমেই প্রধানমন্ত্রীকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান এবং বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করেন। তিনি তাঁর পাশে দাঁড়ানোয় সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
কারা ফটকে ঝুমন দাশের মা নিভারানী দাশ বলেন, ‘ছয় মাস ধরে ছেলের মুখ দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। আজ সেই আশা পূরণ হলো। খুব কষ্টে দিন গেছে, বলে বোঝাতে পারব না। ঝুমন মুক্তি পাওয়ায় আমি খুশি। তবে নিঃশর্ত মুক্তি পেলে আরও বেশি খুশি হতাম।’
সুনামগঞ্জে ঝুমন দাশের আইনজীবী দেবাংশু শেখর দাশ বলেন, ‘ঝুমন দাশের কারামুক্তিতে তাঁর পরিবারের সঙ্গে আমরাও খুশি। তবে আরও আগেই তার জামিন হওয়া উচিত ছিল। এ মামলার বিচারিক প্রক্রিয়ায় ঝুমন ন্যায়বিচার পাবেন।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ঝুমন দাশ গত ১৭ মার্চ থেকে সুনামগঞ্জ কারাগারে ছিলেন। তাঁর বাড়ি সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামে।
হেফাজতে ইসলামের তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হক গত ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা শহরে এক সমাবেশে বক্তব্য দেন। মামুনুল হকের ওই বক্তব্যের সমালোচনা করে পরদিন ১৬ মার্চ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ তুলে ১৭ মার্চ সকালে নোয়াগাঁওয়ে আশপাশের তিনটি গ্রামের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে মানুষের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়।
এ ঘটনায় ঝুমন দাশকে ১৬ মার্চ রাতেই আটক করে পুলিশ। পরদিন তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করলে আদালতের আদেশে তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর ২২ মার্চ শাল্লা থানায় তাঁর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করে পুলিশ। পরে তাঁর মুক্তির দাবিতে সুনামগঞ্জ, সিলেট, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালিত হয়। দেশের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ তাঁর মুক্তির দাবি জানান। সুনামগঞ্জে ঝুমন দাশ একাধিকবার জামিনের আবেদন করলেও তাঁর জামিন হয়নি। পরে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করা হয়।
এ দিকে নোয়াগাঁও গ্রামে মানুষের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলার ঘটনায় থানা ও আদালতে আরও তিনটি মামলা হয়েছিল। এসব মামলায় আসামি প্রায় দুই হাজার। এর মধ্যে ঝুমন দাশের মা নিভারানী দাশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এসব মামলায় এ পযন্ত ১১৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। বর্তমানে সবাই জামিনে আছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ঝুমন দাশ একসময় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পণ্য বিক্রেতার কাজ করতেন। পরে নিজেই প্রসাধনসামগ্রী বিক্রির ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর স্ত্রী সুইটি রানী দাশ সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজে পড়েন। তাঁদের এক বছর বয়সী এক ছেলে আছে। এ ছাড়া পরিবারে তাঁর মা, এক ভাই ও দুই বোন আছেন। ঝুমনের আয়েই সংসার চলে।
মঙ্গলবার কারাগার থেকে বের হওয়ার পর কারা ফটকে ঝুমন দাশকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান জেলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা-কর্মীরা।