![দোল পূর্ণিমা](https://www.swnews24.com/cloud/archives/2021/03/download4-micro.jpg)
![SW News24](https://www.swnews24.com./cloud/archives/fileman/logo.jpg)
সোমবার ● ৯ মে ২০১৬
প্রথম পাতা » ইতিহাস ও ঐতিহ্য » উপকূলাঞ্চল থেকে কৃষি কাজের ঐতিহ্যবাহী লাঙ্গল হারিয়ে যাচ্ছে
উপকূলাঞ্চল থেকে কৃষি কাজের ঐতিহ্যবাহী লাঙ্গল হারিয়ে যাচ্ছে
প্রকাশ ঘোষ বিধান ॥
উপকূলাঞ্চলে কৃষি কাজ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে গরুর লাঙ্গল। যান্ত্রিক আধুনিক চাষাবাধে পাওয়ার ট্রলারের প্রসার ঘটেছে। কম খরচ ও স্বল্প সময়ে অধিক জমি চাষ করা যায় বলে পাওয়ার ট্রলারের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর এর ফলে হারিয়ে যাচ্ছে গরুর লাঙ্গল। কৃষিকাজের ঐতিহ্য লাঙ্গলের চাষাবাদ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। এক সময় গ্রামে জমি চাষের একমাত্র উপকরণ ছিল হস্ত চালিত গরুদিয়ে টানা লাঙ্গল। যা ছিল চাষাবাদে প্রধান কৃষিযন্ত্র এখন আর সেই লাঙ্গলের কদর নেই। এক সময় একটি ইউনিয়নে হাজার হাজার লাঙ্গল দিয়ে চাষাবাদ হতো। আর এখন একটি ইউনিয়নে হাতে গোনা ৮-১০টি লাঙ্গল খুজে পাওয়া দূস্কর হয়ে পড়েছে। উপকূলাঞ্চল থেকে হারিয়ে যাচ্ছে লাঙ্গল।
পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এক সময় হাজার হাজার লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষাবাদ হতো। প্রতি বাড়িতে দু’একটি লাঙ্গল ছিল। এখন একটি গ্রামে একটি লাঙ্গল খুজে পাওয়া যায় না। জানা যায়, ৮০ দশকে পাইকগাছা অঞ্চলে বিলাঞ্চলে জমিতে লবণ পানির চিংড়ি চাষ শুরু হওয়ার পর থেকে চাষাবাদ কমে গেছে। এ ফলে লাঙ্গলের ব্যবহার দিন দিন কমতে থাকে। উপজেলার গদাইপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম এখনো লাঙ্গল দিয়ে চাষাবাদ করে। তিনি জানান, এ ইউনিয়নে ৮-১০টি লাঙ্গল থাকতে পারে। এরা হলো মেলেক পুরাইকাটী গ্রামের হাতেম আলী, পুরাইকাটীর নিতাই, গোপালপুর গ্রামের সফিকুল। মনিরুল আরো জানায়, গরুর লাঙ্গল টিকিয়ে রাখা দূস্কর হয়ে পড়েছে। গরুর লাঙ্গল দিয়ে এক বিঘা জমি চাষ করতে ৫শ টাকা খরচ। আর ট্রাক্টর দিয়ে এক বিঘা জমি দুই চাষ দিতে ২৫০ টাকা খরচ হয়। গরুর লাঙ্গলের চাষে সময় বেশি লাগে আর ট্রাক্টরে সময় কম লাগে। এতে করে জমির মালিক বা কৃষকরা ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করতে আগ্রহী হয়ে পড়েছে। তাছাড়া বর্তমানের লাঙ্গলের এক জোড়া হালের বলদের দাম কম করে হলেও ৭০ হাজার টাকা। তারপর লাঙ্গল ও জোয়াল আছে। সারা বছরে দু’এক মাসের বেশি চাষের কাজ হয় না আর বাকি দশ মাস বিনা কাজে গরু লালন পালন করতে হয়। গরুর বিচালী, খৈল ও কুড়া মূল্য বেড়ে যাওয়ায় গরীব মানুষের মধ্যে গরু পোষা সম্ভব হচ্ছে না। মনিরুল আরো জানায় গরুর লাঙ্গল দিয়ে তারা কৃষি কাজ করলেও সরকারি ভাবে তারা কোন সুযোগ সুবিধা পায় না। এ সব কারণে এ অঞ্চল থেকে গরুর লাঙ্গল হারিয়ে যেতে বাসেছে। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, কৃষিতে দিন দিন উন্নতি হচ্ছে এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ছে। কৃষি কাজে যন্ত্রের বৃদ্ধি পাওয়ায় কম সময়ে অধিক জমি চাষাবাদ করা যায়। কিন্তু গরুর লাঙ্গল দিয়ে সঠিক সময়ে জমি চাষ শেষ করা সম্ভব হয় না। কৃষি কাজ এখন যন্ত্রিক হয়ে পড়েছে। তবে কৃষির ঐতিহ্য গরুর লাঙ্গল টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদেরকে সন্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কৃষি কাজে ব্যবহৃত ঐতিহ্যবাহী হস্তচালিত গরুর লাঙ্গল টিকিয়ে রাখতে হবে। কৃষি কাজের এ ঐতিহ্য যেন হারিয়ে না যায়। সে জন্য যে সকল কৃষক এখনো গরুর লাঙ্গল ধরে রেখেছে তাদেরকে সরকারি ভাবে প্রাপ্ত কৃষি কাজে সার, বীজ অনুদান অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া দরকার। তাহলে এখনো টিকে থাকা কৃষি কাজে ব্যবহৃত এ ঐতিহ্যবাহী লাঙ্গল চাষাবাদের ঐতিহ্য হয়ে টিকে থাকবে।