

শনিবার ● ১১ জানুয়ারী ২০২৫
প্রথম পাতা » ইতিহাস ও ঐতিহ্য » অযত্ন- অবহেলায় মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মামার বাড়ি
অযত্ন- অবহেলায় মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মামার বাড়ি
সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস ও হারিয়ে যেতে বসেছে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত পাইকগাছার কাটিপাড়া মামার বাড়ি। কাটিপাড়াস্থ মামার বাড়িটি কবির শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত একটি স্থান। এটি সংরক্ষণে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
বাংলা সাহিত্যের মহাপুরুষ আধুনিক বাংলা কাব্যের রূপকার মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৫৮ সাল থেকে ১৮৬২ সাল পর্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যেই রচিত হয় কবির সাহিত্য জীবন। মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে তিনি একে একে রচনা করেন মহাকাব্য তিলোত্তমাসম্ভব, মেঘনাদবধ, ব্রজাঙ্গনা, বীরাঙ্গনা, শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, একেই কি বলে সভ্যতা, কৃষ্ণ কুমারী, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো ইত্যাদি নাটক ও প্রহসনসহ বিভিন্ন কাব্য ও কবিতা। কবি মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদের জলকে মায়ের দুধের সঙ্গে তুলনা করে এবং তাকে চির অমর করে রাখার জন্য রচনা করেছিলেন বিখ্যাত সনেট কবিতা কপোতাক্ষ নদ। কবিতাবলি সনেট মধুসূদনের সাহিত্য জীবনে এক অতি মূল্যবান অমর সৃষ্টি, সনেট কবিতার জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যাকাশে এক বিশেষ স্থান দখল করে আছেন।
১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলা প্রেসিডেন্সির যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু কায়স্থ পরিবারে মধুসূদন দত্ত জন্ম গ্রহন করেন। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন যশোর জেলার কেশবপুর থানার কপোতাক্ষ তীরের সাগরদাঁড়ি গ্রামের প্রভাবশালী জমিদার। মাতা জাহ্নবী দেবী ছিলেন খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী ইউনিয়নের কাটিপাড়া গ্রামের গৌরীচরণ ঘোষের মেয়ে। মামার নাম বংশী লাল ঘোষ। বেশির ভাগ সূত্রমতে সাগরদাঁড়িতেই কবির জন্ম হিসাবে দাবি করা হয়ে থাকে। মহাকবি মাইকেলের শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোর মধ্যে তার মামার বাড়ি অন্যতম। তৎকালীন সময়ে কবির মামার বাড়ির মন্দিরে প্রতি বছর দোল উৎসব উদযাপিত হতো। আর এ উৎসবে কবি তার মায়ের সঙ্গে মামার বাড়িতে আসতেন। এমনকি ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করার পরও কবি সর্বশেষ একবার তার মামার বাড়িতে এসেছিলেন। এলাকায় প্রচলন আছে, খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করায় মামার বাড়ির নারীরা তাকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। কাছারি বাড়িতেই কবিকে বসতে এবং খাইতে দেওয়া হয়।
বর্তমানে কবির মামার মূলবাড়িটি যেখানে ছিল সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। স্মৃতি হিসেবে এখনো অরক্ষিত অবস্থায় কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৩টি মন্দিরের অংশ বিশেষ। ১৭২০ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হয় মন্দির ৩টি। যার একদিকে রয়েছে দোল মন্দির। এটি সবচেয়ে উচ্চ। মাঝে রয়েছে শিব মন্দির, যার পরেই রয়েছে চণ্ডী মন্দির। সংরক্ষণের অভাবে মন্দিরগুলোও ধ্বংস হতে চলেছে। এ জন্য এলাকাবাসীর দাবি কবির স্মৃতিবিজড়িত মামার বাড়ির শেষ স্মৃতিটুকু হারিয়ে যাওয়ার আগেই সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে।