শিরোনাম:
পাইকগাছা, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

SW News24
সোমবার ● ১৩ মে ২০২৪
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » তিন ফসল ও ফলনের গাছ খেজুর
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » তিন ফসল ও ফলনের গাছ খেজুর
১২৯ বার পঠিত
সোমবার ● ১৩ মে ২০২৪
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

তিন ফসল ও ফলনের গাছ খেজুর

  ---যশোর, খুলনা, নাটোর, রাজশাহী ও ফরিদপুরের গ্রামের কোন কোন হাট বাজারে দেশি খেজুর বিক্রি করতে দেখা যায়। অথচ স্বাধীনতার পরেও ফলটি পাওয়া যেত দেশের বহু হাটবাজারে। সৌদিসহ আরবের খেজুর আসার পর থেকে দেশি এই ফলটি বেহাল দশায় পড়ে।

পাইকগাছার বিভিন্ন স্থানে খেজুর গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে খেজুর। অনেক খেজুরে রঙ ধরেছে। তা দেখে প্রতিটি মানুষের চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। খেজুর পাকতে শুরু করেছে। সড়কের পাশে খেজুর গাছের খেজুরগুলো স্থানীয় ছেলে-মেয়েরা পেড়ে খেতেও শুরু করেছে। অনেকেই পাকা খেজুর বাজারে বিক্রি করছে। বিশ টাকা কেজি দরে খেজুর বিক্রি হচ্ছে। তবে মৌসুমী ফলের ভিড়ে দেশী খেজুরের কদর খুবই কম বাজারে।

দেশি খেজুর গাছের বিস্তৃতি পূর্ব এশিয়া, বিশেষ করে হিমালয়ের পশ্চিম থেকে শুরু করে ভারতবর্ষ থেকে নেপাল ও মিয়ানমার পর্যন্ত। বীজ দিয়েই খেজুরের বংশবৃদ্ধি হয়। খেজুর গাছ বিক্ষিপ্তভাবে এ দেশের প্রায় সর্বত্রই জন্মে। এমনকি সুন্দরবন তথা উপকূলীয় অঞ্চলেও খেজুরের গাছ দেখা গেছে। তবে বেশি ও ভালো খেজুর গাছ জন্মে যশোর, নাটোর, রাজশাহী ও ফরিদপুর জেলায়।---

দেশি খেজুরকে কেউ কেউ বুনো বা জংলি খেজুর নামে ডাকেন। এটা কেউ চাষ করে না, জঙ্গলের গাছ। এর ইংরেজি নাম রাখা হয়েছে উইল্ড ডেট পাম। দেশি খেজুর এ দেশেই উৎপত্তি, এ দেশেই বিস্তার। উদ্ভিদতাত্ত্বিক নামের সিলভেসট্রিস ল্যাটিন শব্দের অর্থই হলো জংলি। এ দেশের বন জঙ্গলেই গাছটি প্রধানত জন্মে থাকে। সাধারণত পতিত অনুর্বর জমিতে, বাঁধের ধারে, পুকুর পাড়ে, জমির আইলে, বাড়ি ও বাগানের চারদিকে, পথের দুই পাশে সারি করে খেজুর গাছ লাগানো হয়। তবে তা ফলের জন্য নয়, রসের জন্য।

গাছের মিষ্টি রস জ্বাল দিয়ে তা থেকে গুড় পাটালি তৈরি করা হয়। এ দেশে খেজুরকে গুড় উৎপাদনকারী ফসল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শীতের দিনে নলেন গুড়ের স্বাদ সবার কাছেই লোভনীয়। খেজুর যেহেতু অন্যান্য ফসলের মতো ব্যাপকভাবে চাষ করা হয় না, বসতবাড়ি, মাঠ, রাস্তার ধারে জন্মে।

বিবিএস এর ২০১৮ সালের হিসেবে এ দেশে মোট খেজুর রসের উৎপাদন ১৬৯০৫৬ টন। মোট ৫১৩২ একর জমির খেজুর গাছ থেকে তা আহরিত হয়েছিল। আর দেশি খেজুরের উৎপাদন ৩৮৯৩৯ টন। সবচেয়ে বেশি খেজুর গাছ আছে রাজশাহী, নাটোর ও যশোরে।---

খেজুর গাছ অ্যারিকেসি পরিবারের ফিনিক্স গণভুক্ত। ফিনিক্সগণের ১৪টি প্রজাতির গাছ পৃথিবীতে রয়েছে। এর মধ্যে দুটি প্রজাতির ফসল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। ফিনিক্স সেইলভিসট্রিস ও রোক্সব। রোক্সব প্রজাতি দেশি বা জংলি খেজুর ও ফনিক্স ডেকটাইলিফেরিয়া এল এল প্রজাতির গাছ আরবি খেজুর বা সৌদি খেজুর নামে পরিচিতি। প্রথমোক্ত প্রজাতির গাছ রস ও দ্বিতীয় প্রজাতির গাছ থেকে সুমিষ্ট ফল পাওয়া যায়। খেজুর গাছ একবীজপত্রী, এক লিঙ্গ বিশিষ্ট বৃক্ষ। অর্থাৎ পুরুষ ও মেয়ে গাছ আলাদা। মেয়ে গাছে ফল ধরে। শাখাহীন গাছ লম্বা হয় প্রায় ৪-১৫ মিটার। গাছের বাকল সদৃশ আবরণে পত্রবৃন্তের দাগ সব কান্ডকে জড়িয়ে থাকে। দেশি খেজুর গাছ বেশ দ্রুতবর্ধনশীল, শাখাবিহীন একটি কান্ড বিশিষ্ট গাছ। দেশি খেজুর গাছের গোড়াটা থাকে মোটা ও স্তুপের মতো শিকড় থাকে। কান্ডে পাতা ঝরে যাওয়ার পরও পত্রখোলের ভিত্তি অংশ কান্ডের সঙ্গে লেগে থাকে যা খেজুর গাছকে বাড়তি সৌন্দর্য দান করে। পাতা পক্ষল, দন্ডের দুই দিকেই হয়, অগ্রভাগ সুচাল, গোড়ায় তীক্ষ শক্ত কাঁটা। গাছের মাথায় পত্রগুচ্ছ নারিকেল-সুপারি গাছের মতো জন্মে। চৈত্র মাসে ফুল ফোটে। কাঁদিতে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল ফোটে। পুরুষ ফুল সাদা ক্ষুদ্রাকার। ফল হয় গ্রীষ্মকালে। ফল প্রায় ডিম্বাকৃতি, হলুদ রঙের, লম্বায় প্রায় ২.৫ সেন্টিমিটার। ভেতরে হালকা বাদামি রঙের একটি বীজ থাকে। বীজের ওপরে পাতলা আবরণের মতো শাঁস থাকে। কাঁচা শাঁস কষটা-নোনতা। কিন্তু পাকলে তা বেশ মিষ্টি হয়। পাকা খেজুরের রঙ লালচে বাদামি থেকে খয়েরি হয়। পাকা খেজুর গ্রাম বাংলার শিশুদের কাছে খুব প্রিয়।

দেশি খেজুরকে চিনি বা গুড় উৎপাদনকারী ফসল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। খেজুর গাছের প্রধান ব্যবহার রস ও গুড় উৎপাদন করা। তবে এর ফলও খাওয়া যায়। দেশি খেজুরের ফলের শাঁস পাতলা, বিচি বড়, পাকা ফলের সংরক্ষণ ক্ষমতা খুবই কম। তবু পাকা ফলের সুমিষ্ট গন্ধ ও মিষ্টি স্বাদ অনেককেই আকৃষ্ট করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের। খেজুর ফল হৃদরোগ, জ্বর ও পেটের পীড়ায় উপকারী। ফল বলবর্ধক। ফলে প্রচুর লৌহ জাতীয় খনিজ উপাদান আছে।

শুষ্ক থেকে আর্দ্র যে কোনো স্থানে দেশি খেজুর গাছ জন্মাতে পারে। দেশি খেজুর গাছের জন্ম ও বৃদ্ধি লাভ সেখানে বেশি ভালো হয় যেখানে দিনের তাপমাত্রা ২৫-৩৫ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড থাকে। তবে তাপমাত্রা কমে গেলেও খেজুর গাছ বেঁচে থাকতে পারে। তরুণ গাছ হিমাঙ্কের কাছাকাছি তাপমাত্রায় ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খেজুর গাছের জন্য বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৪০০-৭০০ মিলিমিটার দরকার হয়। খেজুর গাছের জন্য রোদেলা জায়গা চাই। বিভিন্ন ধরনের মাটিতে খেজুরগাছ জন্মাতে পারে। তবে মাটি অবশ্যই সুনিষ্কাশিত হতে হবে। তা না হলে গাছ টিকবে না। মাটির অম্লমান বা পিএইচ ৫.৫-৭.৫ হলে ভালো। লবণাক্ত মাটিতে খেজুর গাছ ভালো হয়।

বীজ থেকে দেশি খেজুরের চারা তৈরি করা যায়। ভালোভাবে পাকা ফল গাছ থেকে পেড়ে কয়েক দিন রেখে দিলে ফল আরও পেকে খোসা ও শাঁস নরম হয়ে পচে যায়। তখন ফলগুলো চটকে পানিতে ধুয়ে নিলে বিচি পাওয়া যায়। সেগুলো পলিব্যাগে বা বীজতলায় বুনে চারা তৈরি করা যায়। গ্রীষ্মকালে শেষে চারা তৈরি করা যায়। বীজ গজাতে ২-৩ মাস লাগতে পারে।

সাধারণত গাছেই কাঁদিতে দেশি খেজুরের ফল পেকে ঝরে পড়ে, সংগ্রহ করা হয় না। সব ফল একসঙ্গে পাকে না। কয়েক দিন ধরে পাকতে থাকে। ফল পাকার সময় গ্রীষ্মকাল। পাকা ফল পাখিরা খায়। ফল মাটিতে ঝরে পড়ে সেখানেই প্রাকৃতিকভাবে চারা তৈরি হয়। খাওয়ার জন্য ফলের রঙ সবুজ থেকে হলুদ হলে কাঁদির পাটি কেটে কাঁদিসহ সংগ্রহ করা হয়। ঘরে রেখে দিলে ২-৩ দিনের মধ্যে সেসব পরিপক্ব ফল পাকতে শুরু করে। পাকলে ফলের শাঁস নরম হয় ও লালচে মেরুন রঙ ধারণ করে। একটি গাছ থেকে ১০-২৫ কেজি ফল পাওয়া যায়।

পাইকগাছা  কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অসিম কুমার দাশ  জানান,সারা বাংলাদেশেই খেজুর গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তবে ফরিদপুর, যশোর, খুলনা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী ও নাটোর অঞ্চলে এ গাছের আধিক্য দেখা যায়। দেশে যে খেজুর গাছ দেখতে পাওয়া যায় তার ফল গ্রামীণ জনপদে বেশ জনপ্রিয়। তবে গাছির অভাবে খেজুর গাছ থেকে রস আহরণ করা যাচ্ছে না। এ কারণে প্রতি বছর শত শত খেজুর গাছ কেটে ফেলছে। বর্তমানে এ উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার খেজুর গাছ রয়েছে। যা প্রায় সবই ছোট। বড় গাছের সংখ্যা কম। তবে কয়েক বছর আগেও এ উপজেলা লক্ষাধিক খেজুর গাছ ছিল।

খেজুর গাছ দুর্যোগ প্রতিরোধী উদ্ভিদ, প্রতিকূল পরিবেশেও এটি টিকে থাকতে পারে। রাস্তার দু’ধারে, পুকুর পাড় কিংবা ক্ষেতের আইলে এ গাছ বেশী দেখা যায়। পাকা খেজুর দোয়েল, বুলবুলি, শালিক পাখিসহ অন্যান্য পাখিদের খুব প্রিয়। পিঁপড়া ও মৌমাছিরাও এ পাকা খেজুরের স্বাধ নিতে দেখা যায়।





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)