শিরোনাম:
পাইকগাছা, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

SW News24
রবিবার ● ৬ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বর্ষাকাল গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়
প্রথম পাতা » মুক্তমত » বর্ষাকাল গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়
১৮ বার পঠিত
রবিবার ● ৬ জুলাই ২০২৫
Decrease Font Size Increase Font Size Email this Article Print Friendly Version

বর্ষাকাল গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়

--- প্রকাশ ঘোষ বিধান

বর্ষাকাল গাছ রোপণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এ সময় গাছ লাগালে খুব দ্রুতই তা মাটির মাঝে শিকড় ছড়ায়। বর্ষাকালে বৃক্ষ রোপণের জন্য জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস উপযুক্ত সময়। এই সময়ে মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকে এবং বৃষ্টির পানি গাছের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গাছ বেড়ে ওঠার জন্য যেসব উপাদান প্রয়োজন তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সব উপাদান বৃষ্টির পানিতে রয়েছে। বৃষ্টির পানিতে নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সালফেট ও নাইট্রেট আয়ন রয়েছে। এ কারণে বৃষ্টির সময় গাছের সতেজতা অনেক গুণ বেড়ে যায়।

বর্ষার শুরু অথবা শেষের দিকের সময়টা গাছ লাগানোর ভালো। তবে  প্রথম বৃষ্টির পরপরই চারা লাগানো উচিত হবে না। কারণ প্রথম কয়েক দিন বৃষ্টির পরপরই মাটি থেকে গরম গ্যাসীয় পদার্থ বের হয়, যা চারা গাছের জন্য খুবই ক্ষতিকর এমনকি চারা মারা যায়। বিশেষ করে জুন, জুলাই এবং আগস্ট মাস চারা রোপণের জন্য সব থেকে ভালো সময়।

বৃষ্টির কারণে মাটিতে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা থাকে, যা চারাগাছের শিকড় দ্রুত বিস্তারে সাহায্য করে। বৃষ্টির পানি গাছের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে, যা তাদের দ্রুত বৃদ্ধি পেতে সহায়তা করে। বর্ষার শুরুতে বা শেষের দিকে চারা রোপণ করা হলে, তা দ্রুত প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। এই সময় চারা রোপণ করলে, ঝড়ের প্রকোপ থেকে রক্ষা করা সহজ হয়। বর্ষাকালে গাছ লাগানোর জন্য আলাদা করে সেচের প্রয়োজন হয় না, যা শ্রম ও সময় উভয়ই সাশ্রয় করে।

নির্দিষ্ট অঞ্চল ও মাটির ধরনের জন্য গাছের সঠিক প্রজাতির গাছের চারা নির্বাচন করাই গুরুত্বপূর্ণ। মাটির ধরন বুঝে এ সময় ফলজ,বনজ, ঔষধি ও শোভাবর্ধক গাছ লাগানো যেতে পারে। ফলজ গাছের মধ্যে আম, কাঁঠাল, জাম, জামরুল, লিচু, পেয়ারা, আমড়া, বেল, নারিকেল, লেবু, জাম্বুরা, আমলকী, লটকন, খেজুর, কুল ইত্যাদি। বনজ গাছের মধ্যে দেবদারু, মেহগনি, সেগুন, শিশু, রেইনট্রি, শাল, শিমুল ইত্যাদি।
শোভাবর্ধক গাছের মধ্যে কদম, বকুল, চেরি, পলাশ, টগর, গন্ধরাজ, কৃষ্ণচূড়া, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম, অশথ, ছাতিম, চালতা, কাঠগোলাপ ইত্যাদি। ঔষধি গাছের মধ্যে নিম, তুলশী, বাসক, গাঁদা, অর্জুন, বহেরা, হরিতকী ও আমলকী ইত্যাদি।

গাছ লাগালে একসঙ্গে দু’টি কাজ হবে। গাছগুলো অক্সিজেন দেবার পাশাপাশি ফলও দেবে। এছাড়া পাখির জন্যও খাদ্যের একটা ভালো উৎস তৈরি হবে। গাছগুলো ভবিষ্যতে ফার্নিচারের অভাব পূরণ করার পাশাপাশি অর্থেরও যোগান দেবে। ঔষধি গাছ রোপণ করে আমাদের গ্রাম-বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য ফিরে আসবে।

বর্ষাকালে গাছের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। বর্ষায় উপকার-অপকার দুটিই আছে, অতিবৃষ্টি এবং পানি জমে থাকার ফলে গাছের বিপদও আসতে পারে। অতিরিক্ত বৃষ্টির জন্য পানি জমে গিয়ে গাছের শিকড় নষ্ট হতে পারে। বর্ষায় আর্দ্র পরিবেশের জন্য পোকামাকড়ের উপদ্রব প্রচুর পরিমাণ বেড়ে যায়। এরা নতুন পাতার রসাল অংশ খেয়ে ফেলে এবং গাছের প্রচুর ক্ষতি করে। গাছের উপর নির্ভর করে প্রয়োজনে কীটনাশক ব্যবহার  করতে হবে। তাই গাছের চারা লাগানোর পর যত্ন ও পরিচর্যা করতে হবে।

গাছকে বলা হয় অক্সিজেনের কারখানা। মানুষ, প্রাণিকুল, গাছ, সব মিলে একটি বায়বীয় গ্যাসীয় সম্পর্কে একে অপরের উপকারার্থে নিবেদিত। কাজেই পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণের কোনো বিকল্প নেই। আর সে বৃক্ষরোপণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হল এ বর্ষাকাল। যেকোনো ফাকা জায়গাতে গাছ লাগানো যায়।

প্রতিবছর যে পরিমাণ গাছ কাটা হয় সে পরিমাণে গাছ লাগানো হয় না। ফলে আমাদের চারপাশে গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। আমাদের দেশে বনভূমি থাকা প্রয়োজন ২৫ ভাগ। কিন্তু বনভূমি আছে অনেক কম। আমার প্রত্যকে যদি এই বর্ষায় একটি করে গাছ লাগাই তাহলেও আমাদের দেশে সবুজে ভরে উঠবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আশানুরূপ গাছের চারা লাগাতে পারলে হয়তো ভবিষ্যতে তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি পাবো। পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বৃক্ষের ভূমিকা অপরিসীম। তাই আমাদের প্রচুর গাছ লাগাতে হবে। গাছ লাগাই আর পরিবেশ বাঁচাই। ভবিষ্যতের জন্য সবুজ পৃথিবী গড়ি।

লেখক ; সাংবাদিক ও কলামিস্ট





আর্কাইভ

পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)