

বুধবার ● ২৩ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » প্রকৃতি » প্রকৃতি সংরক্ষণে মানুষকে সচেতন হতে হবে
প্রকৃতি সংরক্ষণে মানুষকে সচেতন হতে হবে
প্রকৃতি বলতে জাগতিক বিশ্বের মানব সৃষ্ট-নয় এমন দৃশ্য-অদৃশ্য বিষয় এবং জীবন ও প্রাণকে বুঝায়। অন্য অর্থে প্রকৃতি বলতে বৈশিষ্ট্যকেও বুঝায়। প্রকৃতি বলতে স্বয়ং স্রষ্টা সৃষ্ট বিশ্বজগত যার মধ্যেগাছ-পালা, নদী-নালা,পশু-পাখি, পাহাড়-পর্বত ইত্যাদি সকল বস্তুর মত মানুষ একটি উপাদান মাত্র।
২৮ জুলাই বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস। জাতিসংঘ ১৯৭২ সালে এই দিনটিকে বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এই দিবসটি উদযাপনের মূল লক্ষ্য হলো প্রকৃতির রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের জন্য সর্বোত্তম উপায় বেছে নেওয়া। এ দিবসটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সবুজ প্রকৃতির জয়গান আমাদের প্রাণ সঞ্চার করে। প্রকৃতির দান নানা বৃক্ষ ও উদ্ভিদে ভরা পৃথিবী। দিগন্ত-বিস্তৃত পাহাড়, সমুদ্রের অফুরন্ত জলরাশি প্রকৃতির অপরূপ দান। প্রকৃতি আমাদের বাতাস, পানি, খাদ্য এবং ওষুধের উৎস। কখনও কখনও প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃস্ষ্ট বিপর্যয়ে প্রাকৃতিক তার সৌন্দর্য ভারসাম্য হারায়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, বন উজাড়, অতিরিক্ত চাষাবাদ এবং দূষণের কারণে প্রকৃতি ক্ষয় হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আমাদের সকলের উচিত বৃক্ষরোপণ এবং টেকসই কৃষি পদ্ধতি গ্রহণ করে প্রকৃতি সংরক্ষণে অবদান রাখা।
জীববৈচিত্র্য উদ্ভিদ, প্রাণী ও অণুজীবসহ পৃথিবীর পুরো জীবসম্ভার সমন্বয়ে গঠিত প্রকৃতি। এই প্রকৃতি আমাদের, আমরাও প্রকৃতির। সুন্দর এই প্রকৃতি ও পরিবেশের অবিচ্ছেদ্য অংশ জীববৈচিত্র্য। প্রকৃতির এই অমূল্য সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব আমাদেরই। সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য চাই সুস্থ ও মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ। অনুকূল ও সুন্দর পরিবেশ ছাড়া কোনো জীবের অস্তিত্ব দীর্ঘায়িত হতে পারে না। মানবজাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে আমাদের প্রকৃতি সংরক্ষণের দিকে সোচ্চার হতে হবে।
মানুষের লাগামহীন দূষণমূলক কর্মকাণ্ডের ফলে প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি। প্রকৃতি মানুষকে নানাভাবে লালন পালন করছে, আর অন্যদিকে এই মানুষ নির্মম নির্বিচারে ধ্বংস করছে প্রকৃতি। প্রকৃতি মানুষের জন্য খাদ্য, নির্মল বাতাস ও পানির মতো মৌলিক প্রয়োজন ছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে চলেছে। প্রকৃতি ধ্বংস করে দেশের উন্নয়ন করা পরিবেশবান্ধব নয়। প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো কিছু করলে তার ফল হয় ভয়ানক। এর ফলে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে লাগামহীন বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, আকস্মিক বন্যা, জীববৈচিত্র্য বিপন্ন,খরা অতিবৃস্টি ফসলহানি মতো ঘটনা ঘটছে।
প্রকৃতি ছাড়া মানুষ বাঁচে না। প্রকৃতি ভালো না থাকলে মনুষ্য জীবনে সংকট বাড়বে। প্রকৃতি ও মানুষ একে অপরের পরিপূরক। প্রকৃতি ও পরিবেশ আজ সংকটের মুখোমুখি। এ সংকট সমগ্র মানবজাতির। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে বিপন্ন পরিবেশ। প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ নিয়ে গভীর উদ্বেগ রয়েছে বিশ্বব্যাপী।
প্রকৃতি বিশ্বের দৃশ্যমান বিষয়। পরিবেশের সংরক্ষণের ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করার জন্য বছরব্যাপী বিভিন্ন দিনে ও নামে দিবস পালন করা হয়ে থাকে। তবে শুধু দিবস পালনের মাধ্যমে দায়িত্ববোধ শেষ করলে হবে না। প্রকৃতি সংরক্ষণের দায়িত্ব কেবল সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠান বা কোনো সংস্থানের নয়। এ দায়িত্ব প্রতিটি ব্যক্তির বা প্রতিটি নাগরিকের। কেননা প্রকৃতি থেকে আমরা অক্সিজেনসহ সব কিছু পাই। তাই সবাই নিজে সচেতন হই, অপরকে সচেতন করি, প্রকৃতিকে রক্ষা করি।
প্রকৃতিকে বাঁচানো খুবই জরুরি। প্রকৃতির উপরই আমাদের জীবন ও জীবিকা নির্ভরশীল। প্রকৃতি আমাদের খাদ্য, জল, বাতাস, বাসস্থান এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করে। প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হলে, তার ফলস্বরূপ পরিবেশ দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং মানব স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। মানুষের বসবাস উপযোগী বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে দূষণমুক্ত পরিবেশ চাই। তাই, প্রকৃতিকে বাঁচানো আমাদের সকলের দায়িত্ব।