

সোমবার ● ২১ জুলাই ২০২৫
প্রথম পাতা » মুক্তমত » সুন্দরবনই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শেষ আশ্রয়স্থল
সুন্দরবনই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শেষ আশ্রয়স্থল
পৃথিবী খ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাস ভূমি সুন্দরবনে। সুন্দরবনই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শেষ আশ্রয়স্থল। রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশের জাতীয় পশু। বাঘ বিড়াল জাতের অন্তর্ভুক্ত একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। দেহবর্ণ গাঢ়-হলুদ থেকে লালচে হলুদ, তাতে লম্বা কালো ডোরা, পেছন ও উরুতেই বেশি, পেটের দিক সাদাটে। হলুদ রঙের লেজে অনেকগুলি কালো বেড়, আগা কালো। কানের পেছন কালো রঙের, তাতে সাদা দাগ। ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় ভয়ঙ্কর এ সুদর্শন বাঘ দেখা যায়।
বাঘ সংরক্ষণের প্রচেষ্টাকে উৎসাহিত করতে রাশিয়ায় সেন্ট পিটার্সবার্গ টাইগার সামিটের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সম্মেলন হতে ২০১০ সাল থেকে এই দিনটি উদযাপিত হচ্ছে। সম্মেলনে ১৩টি বাঘের টেরিটোরি দেশের সংগঠন ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার জন্য ঘোষণাপত্র জারি করেন। টাইগার রেঞ্জ এর গর্বিত সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ বন অধিদপ্তর বাঘ সংরক্ষণের জন্য প্রতিবছর দিনটি উদযাপন করছে।
২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস। বাঘের প্রাকৃতিক আবাস রক্ষা করা এবং বাঘ সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রতি বছরের ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করা হয়। ২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ অভিবর্তনে এ দিবসটির সূচনা হয়। বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালন করা হলেও বাঘ টিকে আছে বিশ্বে এমন ১৩টি দেশে বাঘের ঘনত্ব বেশি থাকায় এসব দেশে গুরুত্ব সহকারে দিবসটি পালন করা হয়।
২০১০ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রথম বাঘ সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ১৩টি দেশ নিজ নিজ দেশে বাঘের সংখ্যা ১২ বছরের মধ্যেদ্বিগুণ করার লক্ষ্য নিয়েছিল। এরমধ্যে নেপাল বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করেছে। ভারত এবং ভুটানও দ্বিগুণের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলাদেশে বাঘের সংখ্যা সামান্য বাড়েছে।
বাঘ সাধারণত ৬টি উপ-প্রজাতিতে বিভক্ত: সাইবেরীয় বাঘ, বেঙ্গল টাইগার, সুমাত্রান বাঘ, ইন্দো-চীন বাঘ, দক্ষিণ চীন বাঘ এবং মালয়ান বাঘ। এছাড়াও, পূর্বে ক্যাস্পিয়ান বাঘ, জাভান বাঘ এবং বালিনিজ বাঘ নামের আরও তিনটি উপ-প্রজাতি ছিল, কিন্তু বর্তমানে এগুলো বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশ ও ভারতে দেখা যায়। এছাড়াও নেপাল, ভুটান, মিয়ানমার ও দক্ষিণ তিব্বতের কিছু অঞ্চলে এদের দেখতে পাওয়া যায়।
ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। সুন্দরবনে বনদস্যুদের আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ও চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য কম হওয়ায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের সংখ্যা সর্বশেষ জরিপে বেড়েছে। গত ছয় বছরে দেশে বাঘের সংখ্যা ১১টি বেড়ে সুন্দরবনে বাঘ এখন ১২৫টি। বন বিভাগ সূত্রে, ১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০টি থেকে ৪০০টি। ২০০৪ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৪৪০টি। ওই দুটি জরিপে বাঘের পায়ের ছাপ গুনে বাঘের সংখ্যা গণনা করা হয়েছিল। কিন্তু ওই পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে। ২০১৫ সালের জরিপ ছিল সর্বাধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত। ওই জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা পাওয়া যায় ১০৬টি। ২০১৮ সালে বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১০৬ থেকে বেড়ে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৪টি। ২০২৪ সালে বাঘের সংখ্যা ১১টি বেড়ে সুন্দরবনে বাঘ এখন ১২৫টি।
সুন্দরবনে চোরাশিকারি অবাধ বিচরণ ও বাঘের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে হুমকির মুখে রয়েছে রয়েলে বেঙ্গল টাইগার।চোরাশিকারিদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে বাঘ। তারা বাঘ শিকার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। এতে সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবস্থাল ধ্বংস হচ্ছে।
বাংলাদেশে সুন্দরবনই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শেষ আশ্রয়স্থল। কিন্তু এই প্রাণী খুব সুন্দর এবং এর চামড়া খুব মূল্যবান। তাই চোরা শিকারিদের কারণে এই প্রাণী প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়া, খাবারের অভাব এবং পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে এই প্রাণী প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাঘ বাচাঁতে না পারলে সুন্দরবন ও বনের সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব নয়।
বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ অবাধ চলাচলের জন্য গোটা সুন্দরবনের অর্ধেকেরও বেশি এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে টহল ফাঁড়ি। পাশাপাশি চোরা শিকারীদের তত্পরতা বন্ধে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট পেট্রোলিং চালু করা হয়েছে। বাঘের প্রজনন মৌসুম জুন থেকে আগস্ট সুন্দরবনের সব পাস পারমিট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ বাঘ অবাধ চলাচল করতে পারবে। সরকার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প দিয়ে বাঘসহ বন্যপ্রাণী রক্ষায় প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে ,আর অন্যদিকে চোরা শিকারিদের আগ্রাসন ও কিছু অসাধু ব্যক্তিরা বনজ সম্পদ ধ্বংসের উৎসব চালিয়ে যাচ্ছে। এখন প্রয়োজন অবৈধ শিকার বন্ধ করা ও প্রাণীদের সুরক্ষা ও সংখ্যা বৃদ্ধি এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ করা।